কেন লকডাউন মেনে চলবেন

কেন লকডাউন মেনে চলবেন

Other

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাস্তায় বা বাইরে মানুষের উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। সড়কে গাড়ীর সংখ্যাও বেশি। কোথাও কোথাও যানজট আছে। পুলিশের কঠোর অবস্থান থাকার পরও রাস্তায় গাড়ীর সংখ্যা বেড়েছে।

লকডাউনের প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে মানুষের ঘরের বাইরে আসার প্রবণতাকে লকডাউন শিথিল হয়ে যাওয়ার লক্ষন হিসাবে না ভাবাই ভালো। কেননা, লকডাউনের প্রথম দিন ছিলো পহেলা বৈশাখ, সরকারি ছুটির দিন। স্বাভাবিক সময়ে এই দিনে রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক যে ভিড় হয়, তা এবছর দেখা যায়নি। মানুষ ঘরেই ছিলো।
তবে দ্বিতীয় দিনে চাকরিজীবীরা ঘরের বাইরে এসেছেন। সুতরাং মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বাড়ারই কথা।  

মুভমেন্ট পাস পেতে গত ৪৬ ঘণ্টায় ১৬ কোটি হিট পড়েছে অ্যাপে। এই ছোট্ট অথচ ভয়ংকর তথ্যটি মানুষের বাইরে আসার প্রবণতাকে প্রকাশ করে দিয়েছে। মুভমেন্ট পাস ছাড়া এই লকডাউনে কারা কারা বাইরে যেতে পারবেন তার একটা তালিকা পুলিশের তরফ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। তারা 

হলেন: ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল স্টাফ, কোভিড টিকা/চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/স্টাফ, ব্যাংকার, ব্যাংকের অন্যান্য স্টাফ, সাংবাদিক, গণমাধ্যমের ক্যামেরাম্যান, টেলিফোন/ইন্টারনেট সেবাকর্মী, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী,জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারী,অফিসগামী সরকারি কর্মকর্তা, শিল্পকারখানা/গার্মেন্টস উৎপাদনে জড়িত কর্মী/কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস, ডাকসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/কর্মকর্তা, বন্দর–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/কর্মকর্তা।  

তাদেরকে বাদ দিলে কারা বাইরে যেতে পারেন ভেবে দেখা দরকার। টাকা তুলতে বা জমা দিতে ব্যাংকে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি ও বাজার করতে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বাইরে দেখা যেতে পারে। আর একদল মানুষ যারা নানা অজুহাতে বাইরে যেতে চান।  

আরও পড়ুন


বিশ্বে একদিনে করোনায় ১৩৫৩২ জনের মৃত্যু

হেফাজতের আরেক সহকারী মহাসচিবকে আটকের অভিযোগ

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম, সময় ও রাকাআত

খালেদা জিয়াকে জাপানের রাষ্ট্রদূত ও পাকিস্তান হাইকমিশনারের চিঠি


এখন বলি লকডাউন কেন এলো। লক ডাউন এসেছে সংক্রমনের হার কিছুটা কমাতে। সংক্রমনের হারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের হাসপাতালগুলো কুলাতে পারছে না। আইসিও -তে শয্যা নেই। কেউ মারা গেলে কিংবা সুস্থ হয়ে আইসিও ছেড়ে গেলে আরেকজন সুযোগ পায় ভর্তি হওয়ার। এটা অতি অস্বাভাবিক দৃশ্য। প্রাণী জগতের মধ্যে শকুন এমন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে। মানুষের এই শকুন পরিস্থিতি বেমানান। তাই্ দরকার সংক্রমন কমানো। বৃহস্পতিবার একদিনে ৯৪ জন মারা গেছে । আল্লাহ না করুক যদি একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়ে তাহলে এটা আপনার আমার মনে কীধরনের আতঙ্ক তৈরি করবে তা কী ভেবে দেখেছেন? যদি পরিস্থিতি এমন হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে বা রাষ্ট্র চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য হারায় তাহলে কী হবে, ভাবতে পারেন? তাহলে এখন আমাদের কর্তব্য বিনা প্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া। সংক্রমন কমানো।  

এখন অনেকে বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু খোলা রাখা উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মানার কাজটি আমাদের দেশে যথাযথভাবে মানা হয়নি। এটা স্বীকার করতে হবে। বাইরে থেকে ভাইরাস আসা ঠেকানো যায়নি। দেশে ভাইরাস আসার পরও আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠিকঠাক আলাদা রাখা যায়নি। মাস্ক পরানো যায়নি। সামজিক দূরত্ব ঠিকমতো মানানো যায়নি। কেন যায় নি তা আলোচনা করার দাবি রাখে অবশ্যই।  

যাহোক, যে কোনো কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতি শক্তিশালী মানুষরা কাটিয়ে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতিও শক্তিশালী মানুষরা কাটিয়ে উঠবে। তারজন্য অভ্যাসে এখন অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথমে জানতে হবে এই ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়। মাস্ক পরে , অন্যের সঙ্গে দূরত্ব রেখে , আক্রান্তদেরকে চিকিৎসা দিয়ে এই সময়টা পার করা যাবে। কিন্তু এখন যদি জনসাধারণ সচেতন না হয়, তবে এই ভাইরাস থেকে যেতে পারে অনেক দিন। তা যদি হয় তাহলে, জীবন, জীবিকা, অর্থনীতি, গড় আয়ু অনেক কিছুতেই প্রভাব ফেলবে এই ব্যাধি। তাহলে আসুন আমরা ব্যক্তিগতভাবে অঙ্গীকার করি, নিজেকে সংক্রমন থেকে রক্ষা করবো। নিজে ভাইরাসটি ছড়াবো না। লকডাউনে অযথা বাইরে যাবো না। সবাই্ ভালো থাকুন।  

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজটোয়েন্টিফোর।

news24bd.tv / কামরুল