মানুষের ভালোবাসার ঋণ এই জন্মে শোধ করতে পারব না

মানুষের ভালোবাসার ঋণ এই জন্মে শোধ করতে পারব না

Other

চার সাইকেলে আজ ১৬টি কেমো দিয়ে চিকিৎসকের প্রটোকল শেষ করলাম। কেমোর পর্ব শেষ। ডিসেম্বরে মাল্টিপল মায়োলাম ধরা পরলে উড়ে যাই মুম্বাই। ভারত যাকে অংকোলজির ভগবান বলে সেই সুরেশ আদবানির কাছে।

তার চিকিৎসায় একমাস সেখানে চারটি কেমো নেই। বাকিটা দেশে।

এবার ২মে আবার মুম্বাই যাচ্ছি। টিকেট রেডি।

আদবানি আমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করবেন। এতে নাকি আমি বিষমুক্ত হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরব। বনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসকদের ভাষায় বড় সহজ বর্ণনা, আমার হাড়ের ভেতরের সকল রক্ত বের করে এটা করা হবে। আমার কাছে ভীতিকর না, তবে উদ্বেগের। এক মাস এ সময় আমাকে হসপিটালে আইসোলেশনে রাখা হবে যাতে ইনফেকশন না হয়। এটা হবে আমার জীবনে বড় কষ্টের।


কলকাতায় বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা

যন্ত্রাংশের প্যাকেটে রাখা বোমার বিস্ফোরণে শিশু নিহত

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে করোনা শনাক্ত ৪১৯২


যাক অসুখ নিরাময়ে বাঁচার আকুতিতেই চিকিৎসা নিচ্ছি। কেমো আমাকে কাহিল ক্লান্ত করেছে। করোনা আমাকে দমবন্ধ বন্দী জীবন দিয়েছে। মানুষ মুখী প্রাণবন্ত আমুদে আড্ডাবাজ মানুষ আমি,আমার প্রাণ ও আনন্দ মরে গেছে। কখন জীবিত হবে জানি না। সেদিনও ডাক্তার বললেন মাল্টিপল মায়োলমা আপনার জীবন কেড়ে নেবে না, করোনা কেড়ে নেবে, সাবধান। ইমিউনিটি আপনার শূণ্যের কোঠায়। কেমোর জন্য করোনার টিকাও নিতে পারিনি।

আমি করোনা থেকে বাঁচতে একটি রুমে বন্দী থাকি। বাঁচতে খুব ইচ্ছে করে আমার। একদিন কত স্বপ্ন ছিলো। গুটিয়ে আনতে আনতে বাকিটাও প্রতারিত। তবু জীবনে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেন্জ। দেশ করোনা আক্রান্ত। রোজ চেনা জানা মানুষের মৃত্যুর মিছিল। ভারতেও করোনার অবস্থা ভয়াবহ। জানি না কী হবে, কী অপেক্ষা করছে আমার জন্য। তবে আজন্ম মানুষমুখী আমাকে মানুষ হতাশ করেনি। আত্মমর্যদার প্রশ্নে আপসহীন আমি, মানুষকেই বড় ভালোবেসেছিলাম। মানুষও আমাকে দোয়ায় ভালোবাসায় দিয়েছে অনেক। স্বজনরাতো প্রানভরে দোয়া করেছেনই, আমার অসংখ্য পাঠক, অচেনা সহস্র মানুষের দোয়া ভালোবাসা অভিভূত করেছে।

আল্লাহর পর মানুষের চেয়ে শক্তিমান কিছু নেই। অজস্র মানুষের ভালোবাসার কাছে আমি যেনো জয়ী হয়ে ফিরে আসি। দুএকজন বিশ্বাসঘাতক প্রতারকে কি এসে যায়। মানুষতো কখনো ঠকায়নি!ফিরে এসে আমি আবার ইবাদতের মতোন কাজ করবো। মানুষের মাঝেই প্রাণবন্ত আমুদে জীবন খুঁজে নেব। আমি আমার প্রেমের শহর সুনামগন্জে যাবো। কতদিন যাইনি, কতদিন আমি প্রাণখুলে হাসিনি, মনভরে বলিনি কথা। আমার প্রিয় নিঃস্বার্থ মানুষেরা, আমার জন্য প্রাণভরে দোয়াটুকু রাখবেন। আমি আপনাদের ভালোবাসার কাছে ঋণী, যে ঋণ শোধ করার সামর্থ আমার এই জন্মে আর হবে না। আল্লাহ দয়াময় আমাকে করুনা করুন। সবাইকে হেফাজত করুন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান (ফেসবুক থেকে নেওয়া)

news24bd.tv তৌহিদ