বিলুপ্তির পথে বিরল প্রাণী বনরুই

বিলুপ্তির পথে বিরল প্রাণী বনরুই

Other

বনরুই আঁশযুক্ত পিপীলিকাভুক দন্তহীন স্তন্যপায়ী প্রাণী। অনেকে এদের পাতালপুরী রুইও বলে। আঁশযুক্ত শরীর ও মৎসাকৃতি গঠনে বনজঙ্গলে চলাফেরা করা এই প্রাণীটিকে দেখতে রুই মাছের মতো লাগার কারণে বনরুই বলা হয়ে থাকে। এরা বিপদের আভাস পেলে নিজের শরীর গুটিয়ে নেয় বলে মালয় ভাষায় এদের বলে ‘পেঙ্গুলিং’- যেখান থেকে এসেছে এদের ইংরেজি নাম প্যাঙ্গোলিন।

এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি বাংলাদেশে মহাবিপন্ন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় অল্পসংখ্যক বনরুই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও বনরুই আছে।

পৃথিবীর ৮ প্রজাতির বনরুইয়ের মধ্যে বাংলাদেশে তিনটির অস্তিত্ব ছিল।

বর্তমানে কেবল ভারতীয় বনরুই (Indian Pangolin) ও চায়না বনরুই (Chinese Pangolin) পাওয়া যায়। এশীয় বৃহৎ বনরুই (Asian Giant Pangolin) নামে অপর একটি বনরুই চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এদের শরীর ও লেজ গাঢ় বাদামি রঙের। বুক ও পেটে সামান্য লোম; আঁশের ফাঁকে ফাঁকেও লোম দেখা যায়। নাক সরু ও চোখা। জিভ লম্বা ও আঠালো। চোখ ও কান সরু। সামনের নখরগুলি পেছনের নখরের তুলনায় দ্বিগুণ লম্বা।

মাথাসহ শরীরের দৈর্ঘ্য ৬০-৭৫ সেমি, লেজ ৪৫ সেমি। শরীর নিচু ও প্রায় মাটি-ছোঁয়া। পিঠ, পাশ, হাত-পায়ের উপরদিক ও গোটা লেজ বড় বড় ত্রিকোণ শক্ত আঁশে ঢাকা। নিচের চামড়া থেকে আঁশ গজায় এবং বুকের দিক ছাড়া গোটা শরীর রক্ষা করে। আঁশ একেকটি করে ঝরে পড়ে ও নতুন করে গজায়।

এরা ভয় পেয়ে বলের মতো শরীর গুটিয়ে ফেলে, আঁশগুলো খাড়া করলে বনরুইকে সজারুর মতো দেখায়। এরা দুর্গন্ধযুক্ত এক ধরনের তরল নিঃসরণ ঘটাতে পারে।

 

বনরুই বড় ও মজবুত নখর দিয়ে কাঠের শক্ত গুঁড়ি ফেড়ে ফেলে এবং লম্বা ও আঠালো জিভ দিয়ে পোকামাকড় চেটে খায়। বুকে অবস্থিত গ্রন্থি পর্যাপ্ত লালা যুগিয়ে জিভ ভিজিয়ে রাখে। পিঁপড়া ও উইয়ের ঢিবি ভাঙার জন্য ওরা অগ্রপদের বাঁকা নখরগুলো কাজে লাগায়।

এদর নাকে ঢাকনি রয়েছে এবং পিঁপড়া খাওয়ার সময় পুরু চোখের পাতা পিঁপড়ার কামড় থেকে চোখগুলো বাঁচায়। এরা নখর গুটিয়ে অগ্রপদের ওপর ভর দিয়ে শরীর টেনে টেনে হাঁটে, কিন্তু শুধু পিছনের পায়ে ভর দিয়ে লেজের সাহায্যে ভারসাম্য রেখে দৌড়াতে পারে।

এরা নিশাচর, দিনের বেলায় নিজের খোঁড়া ২০০-৫০০ সেমি গভীর গর্তে কিংবা পাথরের মাঝখানে শরীর গুটিয়ে লুকিয়ে থাকে। বছরে একটি বা দৈবাৎ দুটি বাচ্চা প্রসব করে।

১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইনে বনরুইকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাণীটি এতোটাই হুমকির সম্মুখীন যে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বনরুইকে লাল তালিকায় স্থান দিয়েছে।

বন্যপ্রাণী পাচারের ওপর নজরদারি করা বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ট্রাফিক’-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে যত প্রকার স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী রয়েছে তারমধ্যে মধ্যে বনরুই সবচেয়ে বেশি পাচারের শিকার হয়।


আরও পড়ুনঃ


গালি ভেবে গ্রামের নাম মুছে দিলো ফেসবুক

পাঁচ দেশের সঙ্গে বিশেষ ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা

এ বছর ৩৬ লাখেরও বেশি দরিদ্র পরিবার পাবে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার

প্রকৃত কোন মুসলমান আওয়ামী লীগ করতে পারে না: ভিপি নুর


প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ টন বনরুইয়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গত ১৬ বছরে অন্তত ১৬ লাখ বনরুই পাচারের ঘটনা ঘটেছে। যা বন্যপ্রাণী পাচারের সংখ্যার দিক দিয়ে সবার শীর্ষে।

২০১৬ সালে সাইটিসের কপ (CITES Conference of Parties) সম্মেলনে আইইউসিএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত, শুধু এই তিন বছরেই বিশ্বব্যাপী পাঁচ লাখ বনরুই পাচারের শিকার হয়েছে।

গবেষকদের মতে, আশু পদক্ষেপ না নিলে এই বন্যপ্রাণীটি অচিরেই বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

news24bd.tv / নকিব

এই রকম আরও টপিক