নওগাঁয় বিদেশি ফল রক মেলন চাষের উজ্জল সম্ভাবনা

নওগাঁয় বিদেশি ফল রক মেলন চাষের উজ্জল সম্ভাবনা

Other

নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে খ্যাত সাপাহার উপজেলার গোয়ালা আটানিপাড়া মাঠে হোসনে মাহফুজ শিবলী নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা সৌদি ও থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন চাষ করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জেলায় প্রথমবারের মতো ফলটি পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করে আশাব্যাঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন তিনি। আগামী বছর তিনি বাণিজ্যিক ভাবে এই ফল চাষাবাদ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

তরুণ উদ্যোক্তা হোসনে মাহফুজ শিবলী জানান, ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স সমাপ্ত করেন।

পড়াশোনা শেষে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী শহরেই ব্যবসা বাণিজ্য করছিলেন। ইতোমধ্যে সাপাহার উপজেলায় আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে কৃষিতে নীরব বিপ্লব শুরু হয়।

অল্প সময়ে দেশের মানুষের নিকট আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সাপাহার উপজেলা পরিচিতি লাভ করে। প্রতিযোগিতামুলক ভাবে এখানে ফল বাগান তৈরীর হিড়িক পড়ে যায়।

এসব দেখে তিনি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মা মাটির টানে শহর ছেড়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন।

উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কয়েক একর জমিতে ধান চাষ না করে তিনি উন্নত জাতের আম বাগান তৈরী করেন। সেই আম বাগানের মধ্যে এক একর জমিতে পরীক্ষামুলক ভাবে তিনি সাথী ফসল হিসেবে বিদেশি ফল ও বিদেশি সবজির চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সখের বসে তিনি চীন থেকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে হলুদ তরমুজ বীজ ও দেশের চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া ও ঢাকা থেকে রক মেলন ফলের চারা সংগ্রহ করেন এবং তার জমিতে রোপন করেন।

বর্তমানে তার ওই এক একর জমিতে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন চাইনিজ হলুদ তরমুজ, সাদা ও কালো স্কোয়াস, লাল, সবুজ, হলুদসহ বিভিন্ন রংয়ের ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। তবে বাগানে সবজির তুলনায় বিদেশি ফল রক মেলন আশাব্যঞ্জক ভাবে উৎপাদিত হয়েছে।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফল ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখে। স্বাদ ও গন্ধে ফলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে ফলটিতে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম বিদ্যমান। এ ফল মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নতুন এই ফল চাষে খরচ অন্য ফলের মতই হয়।

আরও পড়ুন


সেহেরিতে ভাত খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব, ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন

আপনাদের কপাল ভালো মন্ত্রী হয়েছেন, তাই বলে বিচার পাবো না: কাদের মির্জা

দেশের বিচার বিভাগ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে কাজ করছে: কাদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা: আরও ২৪ হেফাজতকর্মী গ্রেপ্তার


বর্তমান বাজারে তরমুজ বঙ্গির চাইতে কয়েক গুন চাহিদা ও মুল্য বেশী থাকায় আগামী দিনে এই বিদেশি ফল চাষে আশপাশের কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিবলীর বাগানে রোপনকৃত আম গাছের চারার মাঝের সারিতে হালকা মাচার উপর লতানো গাছে ধরে আছে সাদা সাদা রক মেলন ফল। প্রতিটি ফল এক কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বাগানে রক মেলন ফল পাকতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি বাজারজাত করতে পারবেন।  

তরুণ উদ্যোক্তা শিবলী তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, বিদেশী এই ফল ও সবজি চাষে যদি সরকারীভাবে তাকে সহযোগীতা দেয়া হয় তাহলে তিনি আগামীতে বানিজ্যিক ভাবে রক মেলন চাষবাদ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করতে পারবেন। তার মতে বরেন্দ্র ভূমির এই মাটিতে বিদেশী ফলটি খুব ভালোভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। এটি বছরে তিনবার চাষ করা যায়। দেশের সকল বাজারে ফলটির ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। তিনি আগামী মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত বীজ ও চারা উৎপাদন করবেন। কোন কৃষক বিদেশী এই ফল ও সব্জী চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন।

উপ-সহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, বাঙ্গিজাতীয় এ বিদেশী ফলকে রক মেলন বলা হয়। সৌদি আরব ও আশপাশের দেশগুলোতে এ ফলের চাষ হলেও আমাদের দেশের বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটির চাষাবাদ অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। তাই সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র মাটিতে এই ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

news24bd.tv আহমেদ