দেশে করোনায় একদিনে মৃত্যুর এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড

দেশে করোনায় একদিনে মৃত্যুর এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড

Other

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘন্টায় আরও ১০১ জন মানুষ মারা গেলেন। একদিনে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। ১০১ জন মানুষের মৃত্যু মানে ১০১ টা পরিবার শোকের সাগরে। শুধু তো এই ১০১ জন নয়, গত ১৫ দিনে হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।

মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বহু পরিবারে মানুষটাই হয়তো ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম। এই যে সর্বগ্রাসী করোনায় এর শেষ কোথায়? আর করোনার বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে লড়ছি তাতে আমাদের ভবিষ্যত কী?  

আমার নিজের মনে হয়, প্রথম দফায় করোনা নিয়ে আমাদের কোন প্রস্তুতি না থাকলেও আল্লাহর রহমতে অল্পের উপর দিয়ে গিয়েছিল। আমরা তখন ধরে নিয়েছিলাম, আমাদের আর কিছুই হবে না।

নাগরিকরা যেমন আমরা অসচেতন ছিলাম সরকারেরও যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না। দ্বিতীয় দফার বিপদের মাত্রা আঁচ করতে পারিনি বলেই আমাদের সমন্বয়হীনতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফেব্রুয়ারির পর মার্চমাসজুড়ে যখন করোনা বাড়ছিল আমরা যা ইচ্ছে করেছি।  

আমাদের প্রস্তুতি ও সমন্বয়হীনতার অনেক উদাহরণ আছে। আমরা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট আইসিইউ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। প্রতিটা জেলায় আইসিইউ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও হয়নি। আজ চারিদেকে আইসিইউর জন্য হাহাকার। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে রোগী ছুটছে। একেকটা পরিবারের উপর দিয়ে যেন ঝড় যাচ্ছে। আচ্ছা আমরা কেন পারছি না যথাযথ ব্যবস্থা নিতে?
আমাদের কী টাকার অভাব আছে? মোটেও না। এই দেশে এখন হাজার কোটি টাকার নিচে প্রকল্পই হয় না। লাখ কোটি টাকার বাজেট। অথচ স্বাস্থ্যখাতের কী ভয়াবহ দশা! বিশ্বব্যাংকের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আছে অথচ আমরা যন্ত্রপাতি কিনতে পারছি না। আবার যাও বা কিনছি  শত শত ভেন্টিলেটর,  অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ নানা যন্ত্রপাতি পড়ে ছিল বিমানবন্দরে। অন্যদিতে স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগের নামে অনিয়ম আর কোটি কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের কথা  আসছে।  

একবার ভাবেন! আমাদের এই দেশে এই সমাজে বহু বিত্তশালী আছে যাদের কোটি কোটি টাকা। একদল আছে যারা শুধু সম্পদ করছেনই। অথচ দেখেন আজ হাহাকার করেও আমরা একটা আইসিইউ পাচ্ছি না। কী হবে এতো ফ্ল্যাট বাড়ি গাড়ি সম্পদ দিয়ে। আমাদের মৌলিক স্বাস্থ্যখাতের তো বেহাল দশা। কাজেই বহু উন্নয়ন বা সম্পদ গড়ার আগে আমাদের উচিত স্বাস্থ্যখাতের দিকে নজর দেয়া। কাজটা শুধু সরকারের একার না, সবাই মিলেই করতে হবে।  

আসলে করোনার এক বছর হয়ে গেলেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেখা যায়নি। বরং অনেকেই এটিকে দুর্নীতি আর লুটপাটের সুযোগ হিসেবে দেখেছেন। নানা কর্তৃপক্ষই যে শুধু দায়িত্বহীন ছিল তাই নয়, আমাদের নাগিরকরাও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন চেষ্টাই আমাদের ছিল না। এতো মৃত্যুর পরও যথেষ্ট সচেতনতা বা সতকর্তা নেই। এভাবে চললে ভবিষ্যত কী?

আমি জানি না ভবিষ্যত কী? লকডাউন দিয়ে করোনা সমস্যার সমাধান হবে না। কীসে যে সমাধান হবে সেটাও আমরা জানি না। কিন্তু এটা অত্যন্ত প্রমানিত যে মানুষজন মাস্ক পরলে, দূরত্ব বজায় রাখলে, হাত ধুলে অন্তত ঝুঁকি কমে। কিন্তু সেগুলোও আমরা মানছি না। কাল পুরান ঢাকার ইফতারের একটা ছবি দেখছিলাম। কে বলবে করোনা আছে। আবার ধানমন্ডিতে শিক্ষিত মানুষের জিলাপি কেনার ভীড়ও আছে। এভাবে চললে ভবিষ্যত কী?

আমার আসলে জানা নেই। গত এক বছরে কতো হাজারবার মাস্ক পরার কথা লিখেছি, স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা লিখেছি গুনে শেষ করতে পারবো না। কিন্তু নূন্যতম সচেতনতা দেখিনি। একইভাবে দায়িত্বশীল যারা, যাদের এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবার কথা ছিল তারাও যথাযথভাবে দায়িত্ববান ছিলেন না। আমার আজকাল ভয় হয়, না জানি আরও কী ভয়ঙ্কর দিন আসছে! 

এই রোযার মাসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি আমাদের রহম করুন। ভয়াবহ রুগ্ন স্বাস্থ্যখাতের এই দেশে বড় কোন বিপদ এলে আমরা যে শেষ হয়ে যাবো। কাজেই আল্লাহ আমাদের রহম করুক। সরকারের কাছে অনুরোধ, সংকট মোকাবেলায় এমন কিছু করুন যাতে আমরা করোনার আগে ছুটতে পারি। আর জনগনের কাছে অনুরোধ, প্লিজ চলুন আমরা সতর্ক হই। সচেতন হই। মাস্ক পরি। দূরত্ব বজায় রাখি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রহম করুন।

শরিফুল হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী

news24bd.tv/আলী