লকডাউন, ক্ষুধা ও ভালোবাসা প্রসঙ্গ

লকডাউন, ক্ষুধা ও ভালোবাসা প্রসঙ্গ

Other

বৃহস্পতিবার আমি একটা পোস্ট লিখেছিলাম লকডাউন মানার তাগিদ দিয়ে । ফেইসবুকে তার নিচে কিছু কমেন্ট পেয়েছি। কমেন্টদাতারা মানুষের ক্ষুধার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ভালো, মানুষ মানুষের জন্য দরদ দেখাবে এটা স্বাভাবিক।

কমেন্টগুলো আমি ইতিবাচকভাবে নিতে চাই।  

লকডাউন দেওয়া হয় মানুষের জীবন বাঁচাতে। এটাও মানুষের জন্য একধরনের ভালোবাসার প্রকাশ। আবার না খেয়ে কেউ মারা যাবে তা মানতে না পারাও মানুষের প্রতি একধরনের ভালোবাসার প্রকাশ।

এখন মুশকিল হলো ভালোবাসার দুই ধরনকে পরষ্পরের বিপরীতে ব্যবহার করার প্রবণতা কাউকে কাউকে পেয়ে বসেছে। একদল বলছে লডডাউন কড়াকাড়ি বাস্তবায়িত না হলে মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাবে। অপর দল বলছে লকডাউনের নামে সব বন্ধ রেখে মানুষকে ক্ষুধার কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। কাজেই এই বিষয়ে বলার মতো আরো কিছু কথা আমার আছে। আমি সেগুলো আপনাদের কাছে বলতে চাই।  

প্রথম কথা হলো, মানুষ না খেয়ে থাকবে এমন কোনো পরিস্থিতির পক্ষে আমি নই। এই লকডাউনে দেশের সব মানুষ না খেয়ে থাকবে এটা ঠিক নয়। কতোজনের অর্থ বা খাবার সহায়তা লাগবে তার একটা হিসাব সরকারের কাছে থাকা উচিত। সরকারের নানা সামজিক কার্যক্রম আছে, তার আওতায় তাদের খাবার সরবরাহ ঠিক রাখা যায়। আচ্ছা, এবার সমালোচকরা বলবে, ত্রাণ হাপিস হয়ে যায়। গত লকডাউনে ত্রাণ মেরে দেওয়ার অভিযোগে বেশ কিছু জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আস্থা না থাকলে, এনজিওর মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের লকডাউনের দিনগুলোতে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়।  

আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি আছে। গ্রামে গ্রামে তাদের নেতা আছে, কর্মী আছে । তারা চাইলে এই জনবল কাজে লাগিয়ে, ত্রানও দিতে পারে, মাস্ক ব্যবহার করতে আগ্রহী করতে পারে , আরো অনেক কিছু পারে। চাইলে খাবারও দিতে পারে।   এবার একটু ইসলামি প্রসঙ্গ টানি। এখন রমজান মাস চলছে। আল হাদীস অনুযায়ী আশপাশের চল্লিশ বাড়ি আমার বা আপনার প্রতিবেশি। প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখার বিষয়ে ধর্মে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এখন সরকার বা জনপ্রতিনিধি বা এনজিও  কেউ যদি সহায়তা না করে তাহলে আপনি আপনার আশপাশের চল্লিশ বাড়ির খবর নিতে পারেন। এভাবে পুরো দেশেই্ সবাই সবার নজরে চলে আসতে পারে। সবাই মিলে এই মহামারী তখন সহজেই কাটিয়ে উঠা যাবে। তাই না?  কারোর তো আর না খেয়ে থাকার কথা নয়।  

এবার আসি করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে। কেন আপনাকে আমাকে ঘরের ভেতরে থাকতে বলা হচ্ছে । ভাইরাসটি বহন করে মানুষ। আক্রান্ত মানুষ কথা বলার সময় বা হাঁচি -কাঁশি দেওয়ার সময় মুখ থেকে যে পানি বের হয়, পানির যে অতি ছোট কণা বের হয় তাতে সেই ভাইরাস থাকে। ফলে, মাস্ক ছাড়া হাঁচি-কাশি দিয়ে একজন আক্রান্ত ব্যাক্তি কোটি কোটি ভাইরাস ছড়িয়ে দেয় এবং তার আশপাশে যারা থাকে তাদেরকে আক্রান্ত করে। এটাকে ড্রপলেট ছড়ানো বলে। আবার নাকদিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস ছাড়ার সময় অতি সূক্ষ্ম পানির কণা বের হয়। এটাকে বলে এরোসল। এতে অনেক ভাইরাস থাকতে পারে। ফলে, মাস্ক ব্যবহার করে ও  তিনি ফুট দূরত্ব বজায় রেখে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার উপায়কে বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানা। তাহলে প্রশ্ন হলো এটা করে ভাইরাস ঠেকানো গেলে লকডাউন কেন দরকার হলো। দরকার হলো কারণ অনেকেই মাস্ক পরেন না। পরলেও সঠিক নিয়মে পরেন না। আবার বেশ কিছু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষকে আমি দেখেছি মাস্ক পরে ঘুরছে, হাঁচি দেওয়ার সময় মাস্ক খুলে হাঁচি দিচ্ছে। তাহলে  স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে না জানা, জানলেও অবহেলা করা, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায়।   

যাহোক, যেখানে নাগরিকরা নিজেরা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন সেখানে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হয়। অনেক উন্নত দেশে এই ভাইরাসকে মোকাবিলার জন্য এমনকী কার্ফিও জারি করা হয়েছে।  

এখন প্রিয় নাগরিক ভাই ও বোনেরা, ভেবে দেখুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেকে ভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাঁচাবেন নাকি নিজেও আক্রান্ত হয়ে অন্যের মৃত্যুর কারণ হবেন? ভেবে দেখুন লকডাউন কড়াকড়ি বাস্তবায়িত করবেন নাকি রোগের বিস্তারে ভূমিকা রাখবেন? ভেবে দেখুন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু কমেন্ট করেবেন নাকি প্রতিবেশির জন্য আপদকালীন খাবারের ব্যবস্থা করবেন। আর সরকার কী করছে তা দেখার জন্য প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়ছি।  
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।  

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজ টোয়েন্টিফোর।

news24bd.tv/আলী