‘ওয়া আন তাসু-মু খায়রুল লাকুম—
আর যদি তোমরা রোজা রাখো,
তা হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর। ’
—সুরা বাকারা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজাকে ফরজ করার পাশাপাশি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন- রোজা আমাদের জন্য কল্যাণকর তথা উপকারী। বাস্তবিকই রোজা রাখার মাঝে রয়েছে নানান উপকারিতা।
সে উপকারিতা যেমন রয়েছে আত্মিক, আধ্যাত্মিক, তেমনি রয়েছে শারীরিক ও মানসিক।নানাবিধ ইবাদতের ভেতর আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত।
কিন্তু রোজাকে তিনি রেখেছেন বিশেষ কোটায়।
স্বতন্ত্র মর্যাদায়।
নবীজি (স.) বলেন, ‘রোজা ঢাল স্বরূপ; অতএব তোমাদের কেউ যেন রোজার দিনে অশ্লীল কথা না-বলে এবং হৈচৈ না-করে। আর যদি কেউ কাউকে গালিগালাজ করে অথবা ঝগড়া করতে আসে, তবে যেন সে বলে দেয়, ‘আমি রোজা রেখেছি। ’ সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মেশক অপেক্ষা উত্তম।
আর রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি আনন্দময় মুহূর্ত। ১. যখন সে ইফতার করে।
২. যখন সে তাঁর প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ” —সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০৪।
হাদিস থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট।
এক. রোজাদারের জন্য আল্লাহ এক বিশেষ পুরস্কার রেখেছেন, যা অপ্রকাশিত। আধুনিক যুগে আমরা এটার নাম দিয়েছি সারপ্রাইজ!
দুই. রোজা ঢাল স্বরূপ। যুদ্ধক্ষেত্রে ঢাল যেরূপ অন্যের আক্রমণ প্রতিহত করে, তেমনি রোজাও নানান প্রকার শয়তানি প্রতারণা থেকে আমাদের রক্ষা করে।
তিন. স্পষ্টত উল্লেখ হয়েছে, রোজার দিনে অশ্লীল কথাবার্তা ও অযথা হৈ-হুল্লোড় করা যাবে না। যা মানুষকে গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
চার. কেউ যদি সেধেও ঝগড়া করতে আসে; তবে রোজাদার ঝগড়ায় লিপ্ত হয় না। বরং সে এই বলে তা থেকে বিরত থাকবে যে, ‘আমি রোজা রেখেছি’।
পাঁচ. সারাদিন না-খেয়ে থাকার ফলে রোজাদারের মুখে একধরনের ঘ্রাণ আসে। বলা হয়েছে, আল্লাহর কাছে সে ঘ্রাণটি অত্যধিক প্রিয়।
ছয়. রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি আনন্দময় মুহূর্ত। যার একটি রোজার সাথে সাথে ইফতারে, অপরটি কেয়ামতের ময়দান আল্লাহর সাক্ষাতে।
আরও পড়ুনঃ
২৮ হাজার লিটার দুধ নিয়ে নদীতে ট্যাঙ্কার!
গালি ভেবে গ্রামের নাম মুছে দিলো ফেসবুক
‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ ধারা রেখে ফ্রান্সে ধর্ষণের নতুন আইন
প্রকৃত কোন মুসলমান আওয়ামী লীগ করতে পারে না: ভিপি নুর
কেবল এইটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। কিয়ামতের মাঠে পালনকারীর জন্য রোজা নিজে সুপারিশ করবে। রোজা বলতে থাকবে, “হে আমার প্রতিপালক, আমি এই বান্দাকে পানাহার ও স্ত্রী-সহবাস থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। ’ নবিজি বলেন, ‘রোজাদারের জন্য রোজার এ সুপারিশ আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন। ” —মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৬২৬।
সহিহ বুখারির ১৮৯৬ নাম্বার হাদিসে এসেছে, নবীজি ঘোষণা দিয়েছেন, বেহেশতে একটি বিশেষ দরজা আছে। যার নাম ‘রাইয়ান’। বলা হয়েছে, কেবল রোজাদাররাই এটি দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে, অন্য কেউ নয়। বুখারির অন্য হাদিসে এসেছে, ‘জাহান্নাম ও রোজাদের দূরত্ব থাকবে ৭০ বছরের পথ। ’ একই কিতাবের ৩৮ নং হাদিসে এসেছে রোজাদারের অতীত জীবনের গোনাহ মাফের সুসংবাদও।
এই গেল কুরআন-হাদিসের ঘোষিত প্রতিদান, উপকারের বর্ণনা।
রোজা রাখার ফলে একদিক থেকে রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নানান সুসংবাদ, নবিজির সঠিক নির্দেশনা, অপর দিক থেকে বৈজ্ঞানিকভাবেও রয়েছে বিশাল উপকারিতা।
অতএব, আমরা যেন প্রবৃত্তির তাড়নাকে দমন করে সঠিকভাবে রোজা রেখে তার উপকারিতা লাভের প্রতি মনোযোগী হই। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দিন। আমিন
news24bd.tv / নকিব