তাদের আলাপের মূল জায়গাটি বিদেশে তারা কত ভালো আছেন

তাদের আলাপের মূল জায়গাটি বিদেশে তারা কত ভালো আছেন

Other

যারা উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী এবং বিদেশে থাকেন তাদের একটা বড় অংশ দেশ সম্পর্কে সাংঘাতিক নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করেন। যেমন এদেশের ভবিষ্যৎ নেই। এদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা যা তা, চিকিৎসা ব্যবস্থা জঘন্য, ভাল হবার কোন সম্ভাবনা নাই এবং আল্টিমেটলি আগামি একশ বছর পর এদেশ শেষ হয়ে যাবে।

প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অবশ্য এরকম চিন্তা খুব একটা দেখিনি।

সম্ভবত এক ধরণের অপ্রাপ্তি, হতাশা ও দুঃখবোধ থেকে তারা এ কাজটি করেন। লক্ষ্য করলে দেখবেন তাদের পারিবারিক আলাপের মূল জায়গাটিই হয় যে বিদেশে তারা কত ভাল আছেন সেই গল্প। তারা আপনাকে এটা বিশ্বাস করাতে মরিয়া যে বিদেশ না গেলে আপনার সব শেষ হয়ে যাবে।

আসলে হয় কি, তারা যেকোন কারণেই হোক দেশ ছেড়েছেন কিন্তু এই দেশ ছাড়াটা তাদের স্বস্তি দেয়না। কোথাও একটা বেদনা তারা অনুভব করেন। আত্মগ্লানি হয়ত অনুভব করেন। দেশ ছাড়ার পেছনে কারো থাকে অভিমানের গল্প, কারো থাকে 'যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে না পাওয়ার কষ্ট'। কারো থাকে স্রেফ পশ একটা লাইফ লিড করার ইচ্ছা। সেন্স অব সিকিউরিটিও হয়ত একটা ইস্যু।

উচ্চাভিলাসী মানুষ ক্রমাগত মুভ অন করতে পছন্দ করে৷ কুড়িগ্রামের অজ পাড়াগাঁয়ের মেধাবি ছেলেটা প্রথমে ঢাকায় আসে। তারপর ইউরোপ বা আমেরিকা যায়। আমেরিকার ডিগ্রী নিয়ে এই আত্মপ্রসাদে ভোগে যে আমি 'কোথা থেকে কোথায় এলাম'। এটা তার কাছে সাফল্যের মইয়ে ওঠার মত মনে হয়। সে আবার কুড়িগ্রামে ফিরে যাওয়াটাকে সাপলুডুর সাপে খাওয়া গুটির মত মনে করে৷ আবার অনেকে একারণেও দেশে আসেননা যে, দেশে এলে তারা কি করবেন এই ভেবে৷ তারা যে আসতে চাননা অনেক ক্ষেত্রে তাও না। কিন্তু একটা সময়ের পর দেশে এসে আসলেই কিছু করা যায়না।

একইসাথে এমন মানুষও এই পৃথিবীতে আছে যারা আমেরিকা বা ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে এসে এদেশের সংষ্কৃতিতে জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। জীবনবোধের ব্যাপারটা যে আপেক্ষিক এই সত্যটা ঐসব সফল মানুষেরা বুঝতে চাননা।

একটা মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশে থাকে। নিজের দেশের কোন ভবিষ্যত নেই বলে ভাবে। কিন্তু তার সমস্ত চেতনাজুড়ে থাকে তার দেশ। সারাক্ষণ নেতিবাচক কথা বললেও সেটা সে বলে তার দেশ নিয়েই। বিশ্ব নাগরিক বলে নিজেকে চালিয়ে দিলেও বিশ্ব নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা দেখা যায়না। সে বলে সে দেশপ্রেমিকের প্রচলিত সংজ্ঞায় বিশ্বাস করেনা, দেশপ্রেম নামের সস্তা আবেগে সে বিশ্বাস করেনা কিন্তু দেশটাকে একবার দেখার জন্য, দেশের চেনা গলিতে ফুচকা খাবার জন্য তার মন আনচান করে।

পৃথিবী যদ্দিন থেকে আছে, মানুষ যদ্দিন থেকে আছে তদ্দিন থেকেই মাইগ্রেশন আছে। মানুষ মাইগ্রেট করবে। এটাই নিয়ম। বিদেশে গিয়ে দেশের মানুষ যখন অনেক ভাল করে তাতে দেশেরই নাম হয়। আমরাও গর্বিত হই।


আরও পড়ুনঃ


২৮ হাজার লিটার দুধ নিয়ে নদীতে ট্যাঙ্কার!

গালি ভেবে গ্রামের নাম মুছে দিলো ফেসবুক

ভারতে যেতে আর বাধা নেই পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের

করোনায় কাজ না থাকলেও কর্মীদের পুরো বেতন দিচ্ছেন নেইমার


তবে মাইগ্রেশন যেমন সত্য মাইগ্রেট করা মানুষের মানসিক দ্বন্দ্বও হয়ত তেমনই সত্য। যাদের ভেতর এই দ্বন্দ্ব প্রকট হয় তাদের থেকে আমি দূরে থাকি।

হঠাৎ এই লেখাটা কেন লিখলাম? NRB এক এক্স ক্যাডেট এবং সাবেক বিতার্কিকের কিছু লেখা ও ভিডিও দেখে আমার মনে হলো এর থেকে দূরে থাকতে হবে। ভয়ানক এই নেতিবাচক মানুষটি আমাকে হতাশ বানিয়ে দিতে পারে।

বিঃদ্রঃ উপরের কথাগুলো সকল NRB এর জন্য প্রযোজ্য নয়। সবেচেয়ে খুশি হব কারো অনুভুতিতে যদি আঘাত না লাগে।

news24bd.tv / নকিব

এই রকম আরও টপিক