ভাল মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছে

ভাল মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছে

Other

একই দিনে দুইজন প্রিয় মানুষের মৃত্যুসংবাদ আমাকে হতবিহ্বল করে দিয়েছে। দুপুরে পেলাম তারেক শামসুর রহমানের মৃত্যুর খবর, সন্ধ্যায় জানলাম মূসা ভাইও চলে গেছেন পরপারে।

মূসা ভাই, মানে আহমেদ মূসার সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় নব্বই দশকের গোড়ার দিকে, যখন তিনি দৈনিক দিনকালের সহকারি সম্পাদক। তার আগেই তার গবেষণাগ্রন্থ ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ’ পাঠ করে তার ভক্ত হয়েছি।

১৯৯৩ সালের কথা। দিনকাল অফিসে যাবার পর শেখ নূরুল ইসলাম ভাই বললেন মূসা ভাই তোমাকে এই ঠিকানায় দেখা করতে বলেছে। গেলাম সেখানে। ৭৪, দিলকুশা থেকে বিএনপির এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ দৈনিক দেশ জনতা নামে একটি পত্রিকা বের করছেন।

মূসা ভাই বললেন, সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দিতে। তখন আমি অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত। সঙ্গত কারণেই অফার ফিরিয়ে দিলাম। সেখানে দেখলাম বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন আমার আরেক প্রিয় মানুষ আবু সাঈদ জুবেরি। শেষে সিদ্ধান্ত হলো প্রতি সপ্তাহে আমি একটি কলাম লিখব। আমাকে সম্মানী দেয়া হবে। ১৯৯৬ সালের পর পত্রিকাটি দুর্দশায় পড়ে এবং মূসা ভাই, জুবেরি ভাই ওখান থেকে চলে আসেন।

এরই মধ্যে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বিএনপির মহাসচিব হলে মূসা ভাই দলের সহ-প্রচার সম্পাদক নিযুক্ত হন। আমি তখন ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে বেকার। ৯৮ সালে সম্পাদকীয় সহকারি হিসেবে যোগ দিই দৈনিক দিনকালে। সে সময় দিনকালের নির্বাহী পরিচালক তারেক রহমান। আরেকজন সহকারি সম্পাদক নেয়ার কথা উঠতেই আমি মূসা ভাইর কথা বললাম। তিনি যোগ দিলেন দিনকালে। বেশকিছু বোমা ফাটানো লেখা লিখলেন তিনি।

আরও পড়ুন


রাজনীতিতে ভুল হলে খেসারত দিতে হয়

দিনমজুরের ছেলের হার্ট অপারেশনের ব্যবস্থা করলেন শামীম ওসমানের স্ত্রী

করোনায় ঢাবি অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মৃত্যু

হাসপাতালে বেড না পাওয়ায় হতাশ করোনা রোগীর আত্মহত্যা


২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমি ম্যাডামের সহকারি প্রেস সচিব হিসেবে যোগ দিই। আর মূসা ভাই টিভ চ্যানেল বাংলাভিশন অর্গানাইজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাত হতো। ১/১১র পরে ম্যাডামের বিবৃতি- বাণী লিখে আমি নিয়ে যেতাম মূসা ভাইয়ের শান্তিনগরের বাসায়। তিনি ছিলেন মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারী। তাই ভূঁইয়া সাহেব যখন সংস্কার প্রস্তাব দিলেন, মূসা ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

দীর্ঘদিন পরে জানলাম, তিনি আমেরিকা চলে গেছেন। বছর কয়েক আগে ফেসবুকে তার সন্ধান পেলাম। ইদানীং তাকে মৃত্যুচিন্তা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। প্রায়ই বলতেন, জীবন প্রদীপের সলতে ছোট হয়ে আসছে। তার আত্মজীবনী ‘দাবড়ে গেল পাগলা ঘোড়া’ বইমেলা থেকে সংগ্রহ করব ভেবেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে যাওয়া হয়নি।

গতকাল সন্ধ্যায় তার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ভাল মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। একটি নিঃসীম শূন্যতা ঘিরে ধরছে আমাদের চারপাশ। হে আল্লাহ, এই ভাল মানুষটিকে তুমি জান্নাতবাসী করো।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

news24bd.tv আহমেদ

সম্পর্কিত খবর