সাত মাসের অসুস্থ সন্তানকে হাসপাতালে নিতে প্রয়োজন ছিল অ্যাম্বুলেন্সের। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের খরচ যোগানোর টাকা নেই দরিদ্র রিকশাচালক বাবার। আর তাই মেয়েকে নিজের রিকশায় করে নিয়ে ১১০ কিলোমিটার চালিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন তিনি। এই না হলে বাবা!
কে কার চেয়ে বড়, কার ক্ষমতা কতো বেশি, এসব দেখতে ভালো লাগে না।
এর চেয়ে বরং চলুন কম শিক্ষিত মানুষের ভালোবাসার গল্প খুঁজি। বিকেলেই বলেছি, করোনায় আক্রান্ত মাকে বাঁচাতে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেঁধে মোটরসাইকেলে হাসপাতালে রওয়ানা হয়েছেন এক ছেলে। এবার শুনুন আরেক বাবার লড়াইয়ের গল্প।পেশায় রিকশাচালক তারেক ইসলাম।
পুলিশের হাতে চিকিৎসক হয়রানি, প্রতিবাদ এফডিএসআরের
সুরা আরাফ ও সুরা আনফালের বাংলা অনুবাদ
নিখোঁজের ১১২ দিন পর সেপটিক ট্যাঙ্কে মিলল নারীর লাশ
‘মামুনুলকে গ্রেপ্তারে সরকারের লকডাউন’ যারা বলছেন, তাদের বলছি
তারেক বলেন, ‘পরের কয়েকদিন রংপুর মেডিকেলে নিতে একটা অ্যাম্বুলেন্স যোগারে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা কেবল রংপুরে যেতেই ৩৫০০-৪০০০ টাকা ভাড়া চায়। আমার মতো একজন রিকশা চালকের জন্য এটা অনেক বেশি। লকডাউনে বাস সার্ভিস বন্ধ। বাধ্য হয়ে শনিবার রিকশায় করেই স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে রংপুর মেডিকেলের দিকে রওয়ানা হই। কিন্তু রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় পৌঁছানোর পর রিকশার ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। পরে স্থানীয় একজন ইজিবাইক চালক ১০ কিলোমিটার পথ এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
তারেক বলেন, ‘আমাদের কেবলই মনে হচ্ছিল এই পথ বুঝি শেষ হবে না। ’ তারপর আরও ৭ কিলোমিটার পথ রিকশার প্যাডেল চালিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে পৌঁছাই। সারা রাস্তায় মেয়েটার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে শনিবার বিকেল ৪টার পর সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারি। এখন আমার বাচ্চাটা ভালো আছে'
১২ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন তারেক। তাদের আরও দুটো বাচ্চা আছে। সন্তানের অসুস্থতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তার স্ত্রী ও তিনি। আক্ষেপ করে বলেন,‘যদি অ্যাম্বুলেন্স নিতাম চিকিৎসার সব টাকা পথেই শেষ হয়ে যেতো। তাহলে মেয়ের চিকিৎসা কীভাবে করতাম?’
এই হলো বাংলাদেশ! স্বাধীনতার ৫০ বছরেও চিকিৎসা আর স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই দশা! এখানে মানুষের কতো দুঃখ-কতো কষ্ট। অথচ আমরা নিজেরা ক্ষমতার বড়াই করি। কে কার চেয়ে বড় এসব নিয়ে প্রকাশ্যে ঝগড়া করি। অথচ সবার আমাদের মিলেমিশে কাজ করা দরকার ছিল।
আমি সবসময় নিজেকে একটা কথা বলি। পরিচিতজনদেরও বলি যে আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে আকাশ ছোঁয়ার। আর বিনয়ে চোখ থাকতে হবে মাটিতে। অথচ আমাদের উল্টো। আমরা কাজ করি ধুলোর মতো, আর ভাব নেই আকাশের মতো। ওপরওয়ালা আমাদের ক্ষমা করুন। আমরা যেন বিনয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে চলতে পারি। যেন সত্যিকারের মানুষ হতে পারি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। আসুন সবাই মিলে পরস্পর ভালো থাকি। ভালো রাখি। তাহলেই ভালো থাকবে বাংলাদেশ। (ফেসবুক থেকে)
লেখক: শরিফুল হাসান, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন কর্মী
news24bd.tv তৌহিদ