একজন মিডিওকার যুবকের ১৮+ জীবনের গল্প এবং অন্যান্য

একজন মিডিওকার যুবকের ১৮+ জীবনের গল্প এবং অন্যান্য

Other

আমি ডাক্তার। এবং আমি একজন মধ্য মেধার লোক। আমি যে মধ্য মেধার সেটা আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি। কারণ এর সপক্ষে অনেক প্রমান আছে।

ডাক্তারিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবার আগে আমি এয়ারফোর্সে জিডি পাইলট হবার আশায় পরীক্ষা দিয়েছিলাম। দ্রুত পরিবারের হাল ধরতে পারব এটা ছিল মূল আশা। সাথে পাইলটের গ্ল্যামার। আরাধনা ছবির রাজেশ খান্না।

প্রথম পরীক্ষাতেই আউট। প্রথম পরীক্ষাটি ছিল আই-কিউ টেস্ট। আধঘন্টা পরই রেজাল্ট দিলো। আমি আইকিউ টেস্টে ফেল মারলাম।

যে কোন ব্যর্থতাই কষ্টের। কষ্ট নিয়ে আমি বাল্যবন্ধু তৌহিদুল-সুমনদের মেসে গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার তখন বয়স ১৮+।

বন্ধুর দুঃখে বন্ধু সান্ত্বনা দেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তৌহিদ উলটা হাসাহাসি করলো। বলল, তুই ডিফেন্সে পরীক্ষা দিতে গেছিস এটা ভেবেই তো হাসি আসতিছে। সুমন বলল এটা প্রমান হলো যে তোর আইকিউ খারাপ।

সুমনের কথা ফেলা যায়না। আমি সেই থেকে ধরে নিয়েছি আমার আইকিউ খারাপ।

আমার যে আইকিউ খারাপ এটা পরেও অনেকবার প্রমান হয়েছে। হেমাটোলজিতে রেসিডেন্সির সময়ে একজন রোগীর কেমোথেরাপির প্রটোকল বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন আমার সুপারভাইজার আমিন লুতফুল কবির স্যার। কিন্তু কোনটার পর কোনটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছিলনা। আমি স্যার কে বললাম স্যার লিখিত আকারে থাকলে দেন। স্যার বলল আমি শুরুতেই বুঝছিলাম তোমার আইকিউ সমস্যা। তোমার লিমিটেশন আছে৷ আমি হেসে বলেছিলাম জ্বি স্যার। এটা আগেও অনেকবার প্রমানিত হয়েছে।

আমার আইকিউ খারাপ এটা ধরে নিয়েই আমি আমার প্ল্যানগুলো করি। আমার সহকর্মী ও সহকারীদের এটা আগেই বুঝিয়ে দেই। তারা আমাকে সাহায্য করে।

আমি ভুলে যাই সব কিছু। মনে রাখতে পারিনা। এজন্য আমাকে বাজারে পাঠানো হয়না। অনেকেই হয়ত ভাবছেন বাজারের তালিকা পকেটে করে নিয়ে গেলেই সমাধান। কিন্তু অনেকবার এরকম হয়েছে যে আমি বাজারে তালিকা পকেটে নিয়ে বের হয়েছি কিন্তু ভুলে হাসপাতালে চলে গেছি। বাজারেই যাওয়া হয়নাই। ফর্দ পকেটেই থেকে গেছে। তাই আর আমাকে বাজারে পাঠানো হয়না। বাবা অসুস্থ হবার পর আমার মা এবং এরপর আমার স্ত্রী এই দায়িত্ব পালন করছে।

আমাদের দেশে একটি প্রচলিত ধারণা আছে ডাক্তার মানেই মেধাবী। কথাটি পুরো সত্য না। আমি অনেক কিছুতেই ব্যর্থ হয়েছি। আমি ক্লোজ আপ ওয়ানে বেস্ট ফরটিতে আসতে পারিনি। নতুন কুঁড়ি পদক পাইনি। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা হতে পারিনি। এরকম অসংখ্য না পারা আমার জীবনে বিদ্যমান। আমার ইচ্ছা ছিল সাংবাদিকতা পড়ব। কিন্তু এই পেশা অনিশ্চিত বলে সাহসই পাইনি। মেধা তো পরের বিষয়। আমার সামান্য ঝুঁকি নেবার মতই সাহস নেই।


আরও পড়ুনঃ


বাইডেনের প্রস্তাবে রাজি পুতিন

২৮ হাজার লিটার দুধ নিয়ে নদীতে ট্যাঙ্কার!

গালি ভেবে গ্রামের নাম মুছে দিলো ফেসবুক

মৃত্যুতে যারা আলহামদুলিল্লাহ বলে তারা কী মানুষ?


আমার মধ্যমেধার কারণেই রাস্তায় পুলিশ আটকালে আমি ভয় পাই। কাগজপত্র সব ঠিক আছে তো? মাঝে মাঝে ফেঁসে যাই। তবে মাথা ঠান্ডা রাখি। একবার রঙ ইউটার্ন নিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি। ট্রাফিক পুলিস আটকালো। আমি বললাম আমি একজন সামান্য চিকিৎসক। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলটি ক্ষমা করে দিলে কৃতার্থ হই। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে আমার কষ্ট হবে। আমার আয় সীমিত। আমার কার্ডটি রাখুন চেম্বারে এসে একদিন গল্প করে যাবেন। আপনার কর্মস্থলেরই পাশে আমার চেম্বার। কোনদিন অসুখ বিসুখে পড়লে স্মরণ করবেন৷ ডাঃ গুলজার বেঁচে থাকতে চিকিৎসা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা। পুলিশ ভদ্রলোক হেসে বললেন - আপনারা সমাজে সবচেয়ে মেধাবী। আপনাদের আটকাতে আমাদেরও ভাল লাগেনা৷

আমি বললাম আপনিও ভুল করলেন। আমি একজন মধ্য মেধার মানুষ। এটা বহুবার প্রমানিত হয়েছে। পুলিশ হেসে দিলেন। মনে হয় বিশ্বাস করলেন না।

news24bd.tv / নকিব