মৃত্যুর এপিটাফ লিখে প্রতিটা রোজ দিন শুরু হচ্ছে

মৃত্যুর এপিটাফ লিখে প্রতিটা রোজ দিন শুরু হচ্ছে

Other

রোজ দিন শুরু হয় কারও না কারও মৃত্যুর এপিটাফ লিখে। বুকটা ভেঙে যায়। ভীষণ কষ্ট লাগে। এই যে আজ দিন শুরু হলো আমাদের স্কুলের ১৯৯৬ ব্যাচের বড় বোন সদা হাস্যজ্জল শায়লা আপার চলে যাওয়ার খবরে।

 

শায়লা আপু ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। আপুর হাজবেন্ড মেসবাহউদ্দনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের একটা কন্যা সন্তান আছে। কী দারুণ একটা পরিবার ছিল!

সকালে খবরটা শুনতেই মন চলে গেল শৈশবে, আমার স্কুলে।

চট্টগ্রামের সরকারি ইউরিয়া সারকারখানার কলোনীতে ছিল ছবির মতো আমাদের স্কুল। সিইউএফএল স্কুল। সেই স্কুলে দুই ব্যাচের সিনিয়র শায়লা আপু। আমাদের স্কুলের বড় বোনেরা আমাদের ছোট ভাইয়ের মতোই আদর করতেন। কমিকস থেকে শুরু করে তিন গোয়েন্দা বা হুমায়ুন আহমেদ আমরা একজনের কাছ থেকে আরেকজন নিয়ে পড়তাম।  

স্কুল-কলেজ শেষ করে আপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্টে বিবিএ পড়তে এলেন। তার বছর দুয়েক পর আমিও এলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার জহরুল হক হলের গেটে একদিন দেখা আপুর সঙ্গে। আপুর বন্ধু মেজবাহ ভাই থাকতেন আমাদের হলে। মেজবাহ ভাইদের বন্ধু জহিরুল ইসলাম ভাই আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের বড় ভাই। সেই সূত্রে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ল।  

ক্যাম্পাস জীবন শেষ হলো। মেজবাহ ভাই ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে যোগ দিলেন। আপু এশিয়া প্যাসিফিকে। ফেসবুকের সূত্রে হঠাৎ কখনো কখনো যোগাযোগ হতো। আপু আমার লেখা নিয়মিত পড়তেন। আমি কয়েকদিন আগে এয়ারপোর্টে ফেলে যাওয়া বাচ্চাটাকে নিয়ে খুব আফসোস করছিলেন। আমার সেই লেখাটা আপুর ওয়ােলে এখনো শেয়ার করা। এখন যে আপু আপনি আপনার মেয়েটাকে একা রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন আপু? 

আজ সকালে আমাদের স্কুলের অ্যালামনাই গ্রুপে গিয়ে জানতে পারি কোভিডের সাথে এক সপ্তাহ লড়াই করে আপু মারা গেছেন। সবে ৪০ পেরিয়েছে। এখুনি কী চলে যাওয়ার তাড়া ছিলো আপু! কী মনে করে আপুর ফেসবুকে গেলাম। এই তো কয়েক মাস আগে নিজের বাবাকে স্মরণ করে আপু লিখেছে, 

যদি হুট করে একা হওয়া যেতো
আকাশের মতো,
আমি চুপ করে চোখে জল নিতাম
ইচ্ছে যতো,
আমি এখনও ভুলের ঘোরে খুঁজি
চেনা পথের বাঁক,
যদি ভুল করে ফের শোনা হতো
প্রিয় সে ডাক।
আমি দেখতে চাইনি তাকে শেষবার, অনড়
আমি মানতে চাইনি তাকে নিথর..
ঈশ্বর, তুমি সযতনে রেখো তাকে
সে বড় অভিমানী, চাপা বুকে
ফিরে গেছে রোদ নেভার আগেই..
ঈশ্বর, আজও অনুতাপে ধুকছে সব
বোবা হাহাকারে চোখ নীরব
বলা হয়ে ওঠেনি তাকেই -
বিদায়.. বিদায়।

শায়লা আপু বিদায়। আল্লাহ আপনাকে নিশ্চয়ই জান্নাতবাসী করবেন।

 (ফেসবুক থেকে)

লেখক: শরিফুল হাসান, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন কর্মী

আরও পড়ুন


আরও এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউন বাড়ছে

ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের চিন্তা ভাবনা আছে: কাদের

কোম্পানীগঞ্জ আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গুলিবিদ্ধ

দিল্লিতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, লকডাউনের ঘোষণা


news24bd.tv / কামরুল