কষ্টটা ডায়রির পাতায় শব্দে শব্দে বুনে রেখেছিলাম

কষ্টটা ডায়রির পাতায় শব্দে শব্দে বুনে রেখেছিলাম

Other

হন্নে হয়ে টিউশনি খুঁজছি। কিছুতেই পাচ্ছি না। চট্টগ্রাম শহরে নতুন এসেছি। নেই আত্মীয়।

নেই বন্ধু-বান্ধব! শেষমেষ মিডিয়ার দ্বারস্থ হলাম। আগাম নয়শ টাকা দিলাম। কিছুদিন পর খবর এলো। একটা স্টুডেন্ট পড়াতে হবে।
উচ্চমাধ‍্যমিক রসায়ন। চট্টগ্রামে আমার প্রথম টিউশনি। ধুক-ধুক করছে বুক!

টিউশনির বাসায় ঢুকতেই একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠতো। আমি ভয় পেতাম। খুব বিরক্ত হতাম। প্রথম তিনদিন, স্টুডেন্টের মা দাঁড়িয়ে ছিলেন পাশে। গার্ডিয়ানের সামনে স্টুডেন্ট পড়ানোর মতো একটা বিভৎস ভয়ংকর অভিজ্ঞতা, পৃথিবীতে কিছু নেই! টিউশনি ধরে রাখার জন‍্য তিনদিনের পরিবর্তে চারদিন পড়াচ্ছি। গোল্ডলিফ ছেড়ে সেনরগোল্ড ধরেছিলাম অর্থাভাবে। টিউশনি চলে যাওয়া মানে চোখে-মুখে অন্ধকার নেমে আসা। অর্থকষ্টের অন্ধকারের সাথে মহাবিশ্বের কোন অন্ধকারই তুল‍্য নয়। ব্ল‍্যাকহোলও তুচ্ছ!

দেখতে দেখতে মাস চলে গেছে। টাকা দেয়ার নাম গন্ধ নাই! এদিকে সুলতানের দোকানে বকেয়া পড়ে গেছে অনেক। লজ্জায় টিউশনিতে টাকা চাইতে পারছি না। খুব খচখচানি নিয়ে প্রতিদিন পড়াতে যাই। কিছু মানুষকে খোদা অসম্ভব আত্মসম্মানবোধ দিয়ে সৃষ্টি করেন। তারা বিপদে নিজের রক্ত বিক্রি করবে, কিন্তু প্রাপ‍্যটুকু চাইতে পারবে না। আমি মুখ খুলে টাকার কথা বলতে পারছি না। কী যন্ত্রণাময় সময়! এভাবে দুই মাস কেটে গেলো। অসহনীয় হয়ে উঠছে সব। প্রতিদিন বাসা থেকে প্র্যাকটিস করে যাই। শেষপর্যন্ত বলতে পারি না। জীবনের ফাপড় ভয়ঙ্কর! যে খায় সে বুঝে। শেষপর্যন্ত বললাম। কত ঘুরিয়ে, ইনিয়ে-বিনিয়ে। মিথ্যে সাজিয়ে। স্টুডেন্টকে বললাম, তোমার আম্মুকে বলবে, আমি বাড়ি যাব।

আরও পড়ুন


বৈঠকতো দূরের কথা, বাবুনগরী কখনোই খালেদা জিয়াকে সামনাসামনি দেখেননি: হেফাজতে ইসলাম

গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র বাবু মারা গেছেন

প্রয়োজন ছাড়া বের না হলে লকডাউনের প্রশ্নই উঠবে না: মোদি

করোনা সচেতনতা: যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ স্টাইল


পরদিন গৃহকর্ত্রী এলেন। একটি খাম ধরিয়ে দিলেন। সারা পথ ভাবলাম, দুই মাসের বেতেন একসাথে - তিন হাজার টাকা! আহা, কী আনন্দ, আকাশে বাতাসে। পথ যেন ফুরায় না। বাসায় আসতে আসতে কত কিছু কেনার পরিকল্পনা! বাসায় ঢোকার ধৈর্য্য সইলো না। সিঁড়িতেই খাম খুললাম। পাতলা পাতলা মনে হলো। ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠলো। গুনে দেখি পনেরশ টাকা। এক মাসের বেতন মাত্র! দুই মাসকে ওরা ভাবলো মাত্র এক মাস? পনেরটি একশ টাকার নোট। কয়েকটি নোট ছিল ছেঁড়া-ফাঁটা, অচল! অভাগা যেদিকে যায়, সেদিকে সাগরও শুকায়। কষ্টটা ডায়রির পাতায় শব্দে শব্দে বুনে রেখেছিলাম। তাই করতাম সবসময়। আর দুমড়ে-মুচড়ে গেলে, বিড়বিড় করতাম - এখনি অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা।

অফিসে বসে যখন কফি খাই, মাঝে মাঝে তখন সেসব সময়গুলোর কথা মনে পড়ে। কষ্টগুলোর কথা ভেবে অদ্ভুত অনুভূতি হয়। অফিসে বসে কফি খাওয়ার সময়টুকুর জন‍্য এখন যে বেতন পাই, সেটা সে সময়ের সারা মাসের বেতনের কয়েকগুণ। সৃষ্টিকর্তাই বলেছেন - ধ‍ৈর্য‍্যশীল হও! আমি স্বপ্ন বুকে চেপে ধৈর্যশীল হয়েছিলাম!

রউফুল আলম, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।

news24bd.tv আহমেদ

সম্পর্কিত খবর