এসব ঘটনা থেকে বুঝলাম মানুষ আসলে বোকা প্রাণী

এসব ঘটনা থেকে বুঝলাম মানুষ আসলে বোকা প্রাণী

Other

মানুষের বুদ্ধির ব্যাপারে আমার প্রথম সন্দেহ জেগেছিলো ঢাকা যাওয়ার পর। ঢাকা গিয়ে শুনি এক টুকরো জমির দাম একশো কোটি টাকা, কিন্তু সুনামগঞ্জে ওই দামে একটি হাওড় কেনা যাবে।   ঢাকায় জমির দাম এতো কেন? এ জমিতে কী কী ফলে? কিছুই ফলে না, শুধু ইট ফলে। ঢাকার মানুষ বিশ্বাস করে, ইটই তাদের ঈশ্বর।

যার ইট নেই, তার দাম এক আনা।  

বাবাকে জিগ্যেস করেছিলাম, আমাদের যে-বিছরাটি আছে, সেটির দাম কতো হবে? বাবা জানালেন, পাঁচ হাজারের মতো হবে। যে-জমিতে মরিচ ফলে, পেঁয়াজ ফলে, ধনেপাতা ফলে, রসুন ফলে, ফুলকপি ফলে, পুঁইশাক ফলে, এবং মানুষ যা যা খায় তার সবই ফলে, সে-জমির দাম মাত্র পাঁচ হাজার? আর যে-জমিতে শুধু ইট ফলে, ময়লা ফলে, কাঁচের ঘর ফলে, সে-জমির দাম একশো কোটি? পরে দেখেছি, সারা পৃথিবীতেই, যারা ভোগ করে, তাদের জমির দাম, যারা উৎপাদন করে, তাদের জমির দামের চেয়ে বেশি।  

যিনি শাক ফলান, আর যিনি শাক খান, তারা দুজন যাপন করেন দুটি ভিন্ন জীবন।

একজন থাকেন দূরে, গ্রামে, সম্ভবত কুঁড়েঘরে, আর আরেকজন থাকেন প্রাসাদে, চড়েন শীতাতপ গাড়িতে। দুজনের কখনো দেখা হয় না। তবে খাবার টেবিলে তাদের একজনের শাকের সাথে, মাছের সাথে, চালের সাথে, ধনেপাতার সাথে, আরেকজনের নিয়মিত সাক্ষাৎ ঘটে।  

সতেরো শতকে, ইউরোপে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও ঘরবাড়ি ছিলো না। সবকিছুর মালিক ছিলেন রাজা। জন লক বললেন, ঈশ্বর যেহেতু আমাদের দেহের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে দিয়েছেন, তাই আমরা যা কিছু বানাবো, তার নিয়ন্ত্রণও আমাদের হাতেই থাকা উচিত। রাজা আমাদের দেহের মালিক নন, সম্পদের মালিকও নন। আমাদের সম্পদের মালিক আমরা। আমাদের গরুর গাড়ি আমাদের, আমাদের কুঁড়েঘরও আমাদের। আমাদের ফসল ভোগ করবো আমরা।  

ইমানুয়েল কান্টও একই কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, ব্যক্তি সম্পত্তির মাধ্যমে মানুষ সমাজে নিজেকে সহজে প্রকাশ করতে পারে। সমাজে কারও অস্তিত্ব আছে কি না, সেটি আমরা বুঝতে পারি তার মালিকানাধীন সম্পত্তি দ্বারা। যার কোনো সম্পত্তি নেই, তার অস্তিত্ব মোটামুটি শূন্যের সমান।  
আমাদের পাশের ঘরে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, যার কোনো জমি ছিলো না। এক আত্মীয়ের উঠোনে, একটি শনের ঘর নির্মাণ করে তিনি বাস করতেন তাঁর পরিবার নিয়ে। কারও সাথে ঝগড়া হলে, তাকে গালি দেয়া হতো ‘বাদাইম্যা’।  

বাদাইম্যা শব্দটির অর্থ— যার নিজস্ব কোনো জমিজমা নেই, যিনি বাস করেন অন্যের আশ্রয়ে। তিনি যখন মারা যান, তখন থানার ইউএনও একটি পতাকা ও কিছু পুলিশ নিয়ে এসেছিলেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে। দরিদ্র কনস্টেবলদের দিয়ে তিনি কিছু স্যালুট দেয়ালেন, কিন্তু নিজে কোনো স্যালুট দিলেন না। তার মুখভঙ্গী দেখে মনে হয়েছিলো, ওইদিনে ওই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে তিনি খুব বিরক্ত হয়েছেন। ইউএনও যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন আমি জিগ্যেস করলাম- জানাজা পড়বেন না? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আপনি কী করেন? আমি কী করলে তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় অংশ নিতেন, তা তিনি স্পষ্ট করেন নি। পরে দেখলাম যে, ইউএনও জানাজায় অংশ নেন নি, এর প্রধান কারণ জমিজমা, দ্বিতীয় কারণ ক্ষমতা; কারণ ওই মুক্তিযোদ্ধার জমিজমা ও ক্ষমতা কোনোটিই ছিলো না। যদি ওই মুক্তিযোদ্ধা কোনো সম্পদশালী মন্ত্রী ও সাংসদ হতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তার জানাজায় ইউএনও, ডিসি, এডিসি, সচিব, যুগ্ম সচিবদের ঢল নেমে যেতো।

 মহিউদ্দিন মোহাম্মদ  ফেসবুক হতে নেওয়া।

news24bd.tv/আলী