সিটিস্ক্যন রিপোর্ট  নিয়ে আসেন, এখনই বলছি আপনি কোভিড আক্রান্ত কিনা?

ফাইল ছবি।

সিটিস্ক্যন রিপোর্ট নিয়ে আসেন, এখনই বলছি আপনি কোভিড আক্রান্ত কিনা?

Other

কিছুদিন আগে একটা স্ট্যাটাসে বলেছিলাম আমার এক আত্মীয়ের জন্য অনলাইনে কোভিড টেস্টের সিরিয়াল দিতে গিয়ে পরপর চার দিন কোন সিরিয়াল পাইনি।   তো দু তিন সপ্তাহ আগে  এক পেশেন্ট এসেছিল জ্বর কাশি চার পাঁচ দিন হয়ে গেছে এমন করোনার লক্ষণ নিয়ে।  
বাস্তবতা বিবেচনায় তাকে সরাসরি কোভিড টেস্ট করতে না দিয়ে আমি তাকে বলি আপনি যদি Urgent CT স্ক্যান করে এখনই ফিল্ম নিয়ে আসেন তাহলে এখনই  আপনাকে বলে দেয়া যাবে আপনার করোনা সংক্রমণ হয়েছে কি হয়নি। করোণা সংক্রমণ থাকার পরেও টেস্ট নেগেটিভ আসতে পারে তখন কিন্তু আর সিটি স্ক্যান avoid করা যাবেনা, করতে হবে।

তার ডায়াবেটিস ছিল, প্রেসার ছিল, সেচুরেশন ৯৩ শতাংশের কম না হলেও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। এক্সরেটা স্বাভাবিক থাকলেও সিটি স্ক্যানে তার করোনা ধরা পড়বে আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম। (অনেকে বলে এক্সরে নরমাল আবার সিটি কেন- এটা ভয়াবহ ভুল ধারণা)। করোণা পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতার বাস্তবতা চিন্তা করে আমি তাকে সিটি স্ক্যান করার জন্যই উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি এই বলে যে আধাঘন্টার মধ্যেই আপনাকে বলে দেয়া সম্ভব হবে আপনার কোভিড আছে কি নাই, আধাঘন্টা পরে আপনাকে কোভিডের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ (Anticoagulant) শুরু করে দেয়া যাবে।

রোগী আমার বাবা হলে আমি সেটাই করতাম।

তিনি তাতে রাজি হন না, বলেন আমি কোভিড পরীক্ষা করাবো।   আমি তাকে একটা পালস অক্সিমিটার কিনে অক্সিজেন সেচুরেশন মাপার মধ্যে থাকতে বলি এবং যদি কমে যায় রিপোর্ট আসার আগেই যাতে ফোনে জানায় সেটাও বলি। আমি তাকে ব্যক্তিগত নাম্বারও দিয়ে দিই। কিন্তু রোগী যেহেতু নিশ্চিত না তার কোভিড হয়েছে কিনা তাই সে দু তিন হাজার টাকা খরচ করে মেশিন আর কিনেনি। (সেদিন অন্য যে রোগীকে সিটি স্ক্যান করে করোণা কনফার্ম বলে দিয়েছি তারা কিন্তু pulse oxymeter মেশিন কিনতে ভুল করেনি। কেননা রোগী জেনে গেছে তার কোভিড হয়েছে সুতরাং এর পিছনে যা খরচ করার তা তাকে করতে হবে। )

আট দিনের মাথায় ক্লান্ত শ্রান্ত কাহিল সে রোগী হাঁপাতে হাঁপাতে আমার কাছে কোভিড রিপোর্ট নিয়ে আসে। রিপোর্ট নেগেটিভ।   সেচুরেশন মেপে দেখি সেটা ৮৬%.

এত দেরি কেন জিজ্ঞেস করায় রোগী জানায়, টেস্ট করতে এতদিন লেগেছে, রিপোর্ট পেতে এতদিন লেগেছে.. এই সেই। আমি তাকে দ্রুত সিটি স্ক্যান করাই সেটাতে জ্বলজ্বল করছিল করোনার spot গুলি। এই CT টা ৮ দিন আগে করলে তখনই কিন্তু ডায়াগনোসিস হয়ে যেত। কেউ হয়তো সংবিধান ফলো করে বলতে পারেন test না করে কেন CT? আমি বলবো কেন নয়? বাস্তবতা হল রিপোর্ট পেতে অনেক সময় লাগছে, এতটা সময় নষ্ট করার পরও সেটা false নেগেটিভ আসতে পারে, ultimately প্রায় অর্ধেক রোগীর টেস্ট করার পরও পুনরায় সিটি স্ক্যান করা লাগছে- মাঝখানে হারিয়ে যাচ্ছে সপ্তাহখানেক সময়। এক্সরে, সিটি স্ক্যান এর সাইডইফেক্ট এর কথাও কেউ মনে করিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু জীবনরক্ষাকারী সিদ্ধান্ত যেখানে দ্রুত নেয়া প্রয়োজন সেখানে কি এই সাইড ইফেক্ট বিবেচনার দাবি রাখে? মাথাব্যথা এটা-সেটা হলে আমরা সিটি স্ক্যান করে সিরিয়াস কোনকিছু আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হই, আর এখন এই করোনাকালে এর দ্রুত রোগ নির্ণয়ের উপকারিতা থেকে রোগীদেরকে বঞ্চিত করার জন্য সেই ইস্যুটা বেছে নিব?

প্রাইভেট হাসপাতালে যদি কোভিড টেস্ট করে সেখানে 4,000 টাকার মত লাগে, রিপোর্ট দ্রুত পাবে তারও গ্যারান্টি নাই, একেক জনের একেক সময় লাগে। একজন এক কর্পোরেট হাসপাতালে করিয়ে রিপোর্ট পেয়েছিল 5 দিন পরে। এখন চার হাজার টাকা দিয়ে একটা টেস্ট করিয়ে সেটা যখন নেগেটিভ আসবে তারপর আবার 4000 টাকা দিয়ে সিটি স্ক্যান করতে বললে রোগী  যুক্তিসঙ্গত ভাবেই নিজেই বলবে, CT তো আপনি আগেই দিতে পারতেন, কেন সে টাকা আর সময়টা নষ্ট করলেন?

গত বছর এক স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ৩১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক সিস্টার তার  হাজবেন্ডের কোভিড নেগেটিভ  সার্টিফিকেট দেখিয়ে দেখিয়ে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের এখানে সেখানে চিকিৎসা নিতে ঘুরে বেরিয়েছে। সমস্যা জ্বর কাশি মাথা ব্যাথা। আমার রুমেও রোগী নিয়ে চলে এসেছিল সেই কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে। তার ব্লাড টেস্টে lymphocyte কম দেখে যখন urgent সিটি স্ক্যান করতে পাঠালাম, আধা ঘণ্টা পরই ফিল্ম নিয়ে আসে, সেখানে দেখা গেল কোভিড, দ্রুতই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়, পরে ICU তেও যেতে হয়েছিল ।

যা হোক প্রসঙ্গে ফিরে আসি, রোগীর যেহেতু অক্সিজেন লাগবে এবং বাসায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা নাই আমি তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে পাঠাই। তখন হাসপাতালে বেড সঙ্কটের অবস্থা ছিল ভয়াবহ, এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করে একটা বেসরকারি Clinic এ ভর্তি হয় তাও নিম্নমানের। খরচের ব্যাপারটা খেয়াল করুন।

সে রোগী ভালো হয়ে বাড়ি ফিরেছে না খারাপ হয়ে গেছে সে প্রসঙ্গ তুলে কারো মন ভালো বা খারাপ করবো না। শুধু বলবো, PCR test এর দেশীয় বাস্তবতাটাকে মাথায় রেখে রোগীদেরকে সিটি স্ক্যান এর দ্রুত রোগ নির্ণয়ের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত করার মতো কোন রকমের গাইডেন্স দেয়াটা বাস্তব সম্মত ও মানবিক হবে না।

আমিনুল ইসলাম। (ফেসবুক থেকে নেয়া)

news24bd.tv/আলী