ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদের আত্মহত্যা ও তার স্ত্রী কন্যার অসহায়ত্ব

ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদের আত্মহত্যা ও তার স্ত্রী কন্যার অসহায়ত্ব

Other

একটি স্বাভাবিক মৃত্যু যখন পরিবারকে শোকাহত করে তখন  অপমৃত্যু কতটা কষ্টকর হয় তা বলাবাহুল্য। আপনজন হারানোর বেদনার সাথে  সাথে সংসারে নেমে আসে এক কালোছায়া। আর তা যদি হয় অপমৃত্যু তবে সেটা  সন্তান স্ত্রী পরিবার পরিজনের  পক্ষে মেনে নেয়া আরেক মৃত্যুসম।

গত ৭ এপ্রিল চট্রগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী  আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহত্যা বেশ আলোচিত হচ্ছে নানা কারনে।

ঘটনার অন্তরালে ব্যবসায়িক লেনদেনে  কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তির  প্রভাব আছে  বলে পরিবারের দাবী। যদিও বা এ বিষয়গুলো এখন বিচারাধীন এবং তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। তবে  সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে বিচারের  রায় আসবে এটাই প্রত্যাশা সকলের।  

ব্যাংক কর্মকর্তা  আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী নিজে আত্মহত্যা করে পৃথিবী থেকে মুক্তি নিয়ে চলে গিয়েছেন।

কিন্তু তার স্ত্রী  ইশরাত জাহান চৌধুরী ও কন্যা মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুম  আজ তাকে ছাড়া কতটা অসহায় তা দেখার কেউ রইল না। এখন তাদের কাছে  জীবনটাই প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে গেছে। একদিকে তারা জানে না এ অপমৃত্যুর  ন্যায় বিচার পাবে কিনা। অন্যদিকে জীবনের পথে তাদের এখন নানা প্রতিবন্ধকতা। যেহেতু ব্যাংক কর্মকর্তা  আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে ব্যবসায়িক লেনদেনের নানা ঘটনা। আর্থিকভাবে দেনার চাপে মানসিক নির্যাতন সইতে  না পেরে তিনি বেছে নিয়েছেন আত্মহত্যার পথ। আর এ ঘটনায় উন্মোচিত হয়েছে  সমাজের কিছু মানুষের লোভাতুর মনের দৃষ্টিভংগী।   
জীবনের  মানবিক ভাবনা থেকে যদি এ সামগ্রিক বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয় তবে পিতৃহারা জুম আর স্বামীহারা ইশরাত জাহান চৌধুরীকে সাত্ত্বনা দেবার মত ভাষা নেই কারো। তাদের পৃথিবীতে আর ফিরে আসবে না আপন মানুষটি। জুম বাবার কাছে আর বায়না করতে পারবে। শুধু থাকবে  অপেক্ষা বাবার আত্নহত্যার প্ররোচনার দায়ে অভিযুক্তদের সঠিক বিচারের জন্য ।  

এ ঘটনায়  প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে চট্রগ্রামের ক'জন রাজনৈতিক  প্রভাবশালী ব্যক্তি। ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী এসব ব্যক্তিদের দায়ী করেছেন তার স্বামীর ব্যবসায়িক লেনদেনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে। নির্মমতা হলো রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে এরা দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীকে ঋনগ্রস্ত করেছে আর নিজেদের মুনাফা তুলে নিতে তার জীবনকে নরকময় করে তুলেছে।   তাই তাদের  কাছে একটাই প্রশ্ন,  মানুষকে কতটা মানসিক যন্ত্রণা দিলে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তা কি তাদের জানা?

এ মানবিক পৃথিবীতে মানুষ মানুষের প্রতি কতটা  অমানবিক আচরণ করছে তার এক উদাহরণ হলো এ ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যা। তারা একমুহুর্তের জন্য চিন্তা করে না তাদের মাত্রারিক্তি লোভ,অন্যায়, অবিচারে একজন মানুষের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। তাদের ক্ষমতার দাপটে  একজন সন্তান সারাজীবনের জন্য পিতৃহারা হয়ে যায়। আর স্বামীকে হারিয়ে জুমের মত সন্তান নিয়ে বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়  স্ত্রী ইশরাতকে।
 
মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুমের পিতার আত্মহত্যার পেছনে যারা জড়িত আছে তারা ও কারো পিতা, কারো স্বামী । তারা যদি নিজের সন্তান বা স্ত্রীর স্থানে জুম আর তার মাকে চিন্তা করে তবে নিশ্চয় বুঝবে শুধু লাভের  টাকার হিসেব করতে গিয়ে কত বড় অপরাধ করেছে । কোন বিবেকবান মানুষ পারে না কারো সন্তানকে এভাবে এতিম করে দিতে। কোন নারীকে স্বামীহারা করে টাকার পাহাড় গড়ে নিজের উদ্যত প্রকাশ করা যায় কেবল। প্রকৃত অর্থে কোন প্রশান্তি আসে।  

 আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত লোভ আর ক্ষমতার দাপটে বাড়ছে অন্যায় অবিচার। হানাহানি, হত্যা, নির্যাতন করে নিজের পার্থিব চাহিদা মেটাতে গিয়ে দেখতে পায় না মানুষের অসহায়ত্ব। ভুলে যায় ক্ষমতা অস্থায়ী। কিন্তু মানুষের প্রতি  ভালোবাসার থাকলে তা দিয়ে অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এ সহজ অংকটা বুঝে না ক্ষমতাবানরা।

 ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে যারা রাজনৈতিক  বা প্রশাসনিক দাপট খাটিয়ে ভয়াবহ  পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তার বুঝবে না সমাজের চোখে তারা কতটা ঘৃন্য। তাদের কারনে প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা কেবল বুঝবে ইশরাত আর জুম। মা মেয়েকে বিচারের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হয়তো শুনতে হবে নানা কটুকথা । হয়তোবা ক্ষমতাবানরা তাদের চলার পথকে করবে আরও। কন্টকময়। সে সাথে অসহায় ইশরাত জাহান চৌধুরী আর মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুমকে বাঁচার জন্য  লড়াই করতে হবে  মানুষ নামের কিছু লোভী  অমানুষের অমানবিক আচরনের দুঃসহ স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে। আর তাদের অসহায়ত্ব  দেখে এ সমাজ হবে লজ্জিত। কারণ একটাই ক্ষমতার কাছে জিম্মি  সাধারণ মানুষের সকল চাওয়া পাওয়া।

লেখক: কলামিস্ট।

news24bd.tv/আলী