কেন মানুষকে বুদ্ধিমান মনে করা হয় ?

কেন মানুষকে বুদ্ধিমান মনে করা হয় ?

Other

কেন মানুষকে বুদ্ধিমান বলা হয়? এর উত্তরে আমি অনেককেই এরোপ্লেন ও সেলফোনের কথা বলতে শুনেছি। কেউ কেউ অবশ্য পিরামিড ও কম্পিউটারের কথা বলেছেন, তবে আমার ধারণা, মানুষ বুদ্ধিমান— এটি রটেছে তার খুনের দক্ষতার জন্যে। মানুষের যে-প্রজাতিটি এখনও টিকে আছে, তা টিকে আছে মূলত খুন করে। গরু-ছাগল ছাড়াও সে খুন করেছে তার নিজের আরও পাঁচটি (কারও কারও মতে দশটি) প্রজাতিকে।

আগামীকাল যদি বাঘ ব্যাপকহারে মানুষ খুনের দক্ষতা অর্জন করে, তাহলে পরশু থেকে, আমার ধারণা, বাঘকেই বলা হবে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান প্রাণী। এক বাঘ আরেক বাঘকে বলবে:
সৃষ্টির সেরা জীব বাঘ।  

জাপানে যদি ওই বোমাগুলো না পড়তো, তাহলে আমেরিকানদের বুদ্ধি নিয়ে আমাদের সন্দেহ থাকতো। দু দুটি বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা না থাকলে, ইউরোপীয়দেরও আমরা নির্বোধ ভাবতাম।

কলম্বাস আমেরিকায় পৌঁছে যদি ওই খুনগুলি না করতেন, তাহলে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকতেন না।

কালিগুলার আসল নাম ছিলো জুলিও সিজার। তবে সিজার নামে যেহেতু আরেকজন সম্রাট ছিলো, তাই সে নাম ধারণ করেছিলো 'কালিগুলা'। তার নামের অর্থ 'ছোট জুতো' হলেও তার মাথা ছিলো বড় জুতোর সমান। কালিগুলা কি বুদ্ধিমান ছিলেন? আমি বুদ্ধিমান কি না, তা আমার লেখা পড়ে নিশ্চিত হওয়া গেলেও, কোনো রাজার বুদ্ধি নিরূপণ করার জন্য আপনাকে হিশেব করতে হবে তার দ্বারা সংঠিত মোট খুনের সংখ্যা। দেখতে হবে, খুনী হিশেবে ওই রাজার সুনাম কেমন ছিলো। যদি শোনা যায়, রাজা খুব দয়ালু ছিলেন, তাহলে বুঝতে হবে মানুষ হিশেবে তিনি নির্বোধ ছিলেন। সে-হিশেবে সম্রাট কালিগুলাকে আমার বুদ্ধিমানই মনে হয়।  
ট্রাম্পকে নির্বোধ বলা হয় কেন? কারণ তিনি চার বছরেও একটি যুদ্ধ বাঁধাতে পারেন নি। উল্টো ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে বন্দুক প্রত্যাহার করেছেন। এজন্য আমরা ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি, ও ওবামাকেই বেশি বুদ্ধিমান মনে করি। ট্রাম্প যদি হোয়াইট হাউসে ঢুকেই পূর্ব দিকে কয়েকটি মিসাইল ছুঁড়তেন, এবং হত্যা করতেন কয়েক লাখ মানুষকে, তাহলে তাঁকে নিয়ে সব হাসিঠাট্টা থেমে যেতো।  

খুব দূর থেকে দেখলে, পৃথিবীকে একটি ইলেকট্রনের চেয়েও ছোট মনে হবে। ইলেকট্রন বেশি বড় নয়, আকারে করোনা ভাইরাসের চেয়েও অনেক ছোট, যদিও একবার এক লোক আমাকে বলেছিলেন যে ইলেক্ট্রন হলো টেলিভিশন! পৃথিবী খুবই ক্ষুদ্র গ্রহ, যা, কিছু মানুষ ও তাদের মোটরসাইকেলগুলো নিয়ে মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র গলিতে পড়ে আছে, এবং গলিটি, আমাদের চুলের চেয়ে মোটেও মোটা নয়। মহাবিশ্ব হয়তো জানেই না যে তার দেহে একটি পৃথিবী আছে। শরীর থেকে কোনো লোম খসে পড়লে আমরা যেমন টের পাই না, মহাবিশ্বও তেমনি হঠাৎ কোনো দুর্যোগে পৃথিবী নাই হয়ে গেলে টের পাবে না।  

সম্ভবত অনেক গ্রহই মহাবিশ্বে আছে, যেগুলোর শ্রেষ্ঠ প্রাণীর সাথে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণীটির দেখা হলে, একটি হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। মাপলে দেখা যাবে যে, ওই প্রাণীদের সাথে আমাদের বুদ্ধির পার্থক্য, মানুষের সাথে ছাগলের বুদ্ধির পার্থক্যের কম নয়, এবং চাইলেই তারা একটি মন্দির খুলে শুরু করে দিতে পারে পাঁঠা বলির মতো মানুষ বলি।

তবে মানুষ বলি করা নতুন ও চমকপ্রদ কিছু নয়। অনেক দেশেই এখন গণতান্ত্রিক রাজারা মানুষ বলির উপর টিকে আছে। কার্তেজীয়রা যখন পিউনিক যুদ্ধে রোমানদের কাছে হারে, তখন তারা কারণ হিশেবে দেবতা মওলকের অসন্তুষ্টিকে দায়ী করেছিলো। বলি হিশেবে মওলকের পছন্দ ছিলো অভিজাত পরিবারের শিশুরা। তবে বলি দেয়ার সময়, অভিজাত কার্তেজীয়রা প্রায়ই নিজেদের শিশুর স্থলে শুইয়ে দিতো কোনো দরিদ্র পরিবারের শিশুকে। এতে, কার্তেজীয়দের দাবি, দেবতা মওলক ক্ষিপ্ত হয়ে যুদ্ধে পক্ষ নিয়েছিলো রোমানদের।

দেবতা হিশেবে মওলকের জন্ম হয়েছিলো, আমার ধারণা, দরিদ্রদের মগজে। মওলককে যে সৃষ্টি করেছিলো, তার নিশ্চয়ই কোনো রাজপুত্রকে বলি দেওয়ার মতলব ছিলো। কিন্তু ঘটেছিলো উল্টোটা। মওলক খেতে শুরু করেছিলো দরিদ্রদেরকেই। তবে পরাজয়ের পর কার্তেজীয়রা সতর্ক হয়েছিলো, এবং আগের চেয়ে সাবধানে, শুধুমাত্র অভিজাত পরিবারের শিশুদেরকেই ধরে এনে বলি দিতে লাগলো।   

মুশকিল হলো— পরবর্তী যুদ্ধে, এতো বলির পরও দেবতা মওলক রোমানদেরই, যারা তাকে কিছুই দেয় নি, পক্ষ নিয়েছিলো।  
কার্তেজীয়রা যদি বুদ্ধিমান হতো, তাহলে এতগুলো শিশুকে খুন করার প্রয়োজন পড়তো না। একটি শিশু খুন করেই তারা বুঝতে পারতো যে, কোনো কাল্পনিক দেবতা নয়, যুদ্ধ জয়ের জন্য প্রয়োজন ভালো যোদ্ধা ও সমরাস্ত্র।  

দেবতারা যে কোনো কাজের নয়, তা কার্তেজীয়রা না বুঝলেও বুঝতে পেরেছিলো আর্কেডিয়রা। আর্কেডিয়ায় যখন খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিলো, তখন কৃষকেরা দেবতা প্যানের মূর্তিকে পিটিয়েছিলো।  
news24bd.tv/আলী