বাংলাদেশ যেদিকে আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে

বাংলাদেশ যেদিকে আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে

Other

আমার কলিগদের সাথে দুপুরের লাঞ্চের টেবিলে বহু বিষয় নিয়ে আড্ডা হয়। কখনো কখনো বিভিন্ন দেশের আচার-সংস্কৃতি। কখনো কখনো ভাষা ও রাজনীতি। একদিন লাঞ্চে গোটা তিনেক আমেরিকানের সাথে আমি বাংলাদেশি।

বাংলাদেশ কোন কোন দিক দিয়ে আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে, সে নিয়ে কথা শুরু হলো।

প্রথমেই বললাম, বাংলাদেশে গান কিলিং নেই। সন্ত্রাস আছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে।

কিন্তু যার তার হাতে বন্দুক নেই। স্কুল-কলেজে কিংবা সুপারমার্টে গিয়ে বিনা কারণে কেউ বন্দুক হাতে মানুষ মেরে ফেলে না। ২০১৭ সালে আমেরিকায় প্রায় চল্লিশ হাজার মৃত্যু হয়েছে বন্দুক-সংক্রান্ত। অর্ধেকের বেশি ছিলো আত্মহত্যা। আমেরিকা সারা দুনিয়ার সন্ত্রাস দমনে ন্যাংটা হয়ে যায় অথচ নিজ দেশের গান শুটিং বন্ধ করতে পারে না। What a pity!

আমেরিকা দুনিয়ার এক পরাক্রমশালী দেশ, যেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের মতো এক জনবহুল, উন্নয়নশীল দেশেও একজন মা, সরকারী বা আধাসরকারী চাকুরিজীবী হলে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পায়। অথচ আমেরিকায় সেটা ছয় সপ্তাহ থেকে তিন মাস। তাও নির্ভর করে কোম্পানির উপর। হাজার ধরণের মারপ্যাঁচ। ছয় মাস ছুটির কথা শুনে, আমার কলিগরা অবাক হয়ে গেলো। Six months! are you kidding me? 

আমেরিকা হলো ঋণ করে ঘি খাওয়ার দেশ। এই দেশের মানুষ শুধু ঋণ করে। ব্যাংক থেকে সমানে ক্রেডিট নেয়। সেই ক্রেডিট ফেরত দিতে হয়। ক্রেডিট স্কোর বলে একটা বিষয় আছে এই দেশে। যেটার অস্তিত্ব দুনিয়ার বহু দেশে নেই। যে বেশি ঋণ করবে এবং সময়মতো সেটা পরিশোধ করবে তার ক্রডিট স্কোর থাকবে বেশি। ক্রেডিট স্কাের যতো ভালো হবে, বাড়ি গাড়ি পণ্য কিনতে ততই আপনার জন্য সহজ হবে। বিষয়টা একটু ভাবলেই বুঝা যায়, ভালো ক্রেডিট স্কোর মানে হলো আপনি সচ্ছল। ব‍্যাংক শুধু সচ্ছলকেই ঋণ দেয়ার জন্য বসে থাকে। এই দেশের মানুষ ঋণ নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। ঋণ না দিতে পারলে কোর্টে যায়। মামলা মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর কাটায়। আমেরিকার মতো হাইকোর্ট দেখানো রাষ্ট্র দুনিয়াতে আর একটিও নেই। এই দেশে রাস্তায় থুঁতু ফেলেও আইনজীবীর সরনাপন্ন হয় মানুষ।  

বাংলাদেশের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশ বিনামূল্যে শিক্ষা দিতে পারছে, অথচ দুনিয়ার পরাশক্তি সেটা করতে পারছে না। কলিগদের বললাম, সারা দুনিয়ায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে তোমাদের সরকার যতো টাকা খরচ করে, সেটা দিয়ে পুরু উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মানুষদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতো। (আমেরিকায়ও শিক্ষা ফ্রি; তবে মেইনলি দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত)। উচ্চতর গবেষণা যেমন পিএইচডি, পোস্টডক সেসব ক্ষেত্রে আপনাকে টাকা দিতে হয় না। আপনি স্কলারশিপ পেলে উল্টো টাকা পাবেন।  

আমেরিকা বাংলাদেশের প্রায় ষাট-সত্তরগুণ বড়ো। অথচ জনসংখ্যা বাংলাদেশের মাত্র দ্বিগুণ। বাংলাদেশ এখনো এক ডলারে (আশি-বিরাশি টাকা) একটা খাবার (Meal) দিতে পারে। আমেরিকা সেটা পারে না।

আরও পড়ুন


ভারতে অক্সিজেন সংকট, পাশে দাঁড়াল সৌদি আরব

খোরশেদকে তুলে নিয়ে বিয়ের চেষ্টা নারীর, স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার হুমকি! (ভিডিও)

ইরাকে করোনা হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন, ২৭ জনের মৃত্যু

রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রীদের কাজটা কী


বিশ্ব শান্তি রক্ষায় আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশই ভূমিকা রাখে বেশি। সারা দুনিয়াতে অস্ত্র বিক্রি করে আমেরিকা। আবার সেসব দেশে যুদ্ধ বাধলে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি সৈন্য পাঠায়। আমেরিকা সে তুলনায় কোন সৈন্যই পাঠায় না। আমেরিকা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যুদ্ধ বাধায়, আর শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সৈন্যরাই মাঠে থাকে। কী আজব নীতি!

বাংলাদেশে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান এই চার ধর্মেরই বড়ো উৎসবগুলোতে সরকারী ছুটি থাকে। আমেরিকায় ধর্মীয় ছুটি বলতে গেলে শুধু খ্রীস্টান ধর্মের জন‍্যই। অন‍্যান‍্য ধর্মালম্বীদের জন‍্যও ছুটির কথা বিবেচনা করা উচিত। আমর কলিগরা অবশ‍্য সেদিন আমার কাছে এসব তথ‍্য পেয়ে বেশ অবাক হয়েছিলো!

উন্নত দেশগুলো যে সবকিছুতেই উন্নত, তা নয়। তাই আমাদের উচিত শুধু ভালো বিষয়গুলোই অনুসরণ করা। অথচ, বাস্তবে দেখা যায় আমরা ভালো বিষয়গুলোই ধার করি না। অনুসরণ করি না। আমরা শুধু ইউরোপ-আমেরিকার খাবার, পোশাক আর মুভি নিয়ে ব‍্যস্ত। কিন্তু তাদের শিক্ষানীতি, গবেষণানীতি, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক চর্চা এগুলোই আগে অনুসরণ করা দরকার ছিলো।

রউফুল আলম, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।

news24bd.tv আহমেদ

এই রকম আরও টপিক