একজন অধ্যাপকের মৃত্যু ও আমাদের জন্য শিক্ষা

একজন অধ্যাপকের মৃত্যু ও আমাদের জন্য শিক্ষা

Other

আপনার অনুমান সঠিক। আমি অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানের কথাই বলছি। অধ্যাপক রেহমানের সাথে আমার সরাসরি দেখা হয়েছিল কি না মনে পড়ছে না। মাস কয়েক আগে কভিড আক্রান্ত হয়ে মহান রবের অনুগ্রহে তা থেকে মুক্ত হয়েছি ঠিকই, কিন্তু মুক্তি মেলেনি।

কভিড পরবর্তী জটিলতায় স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ। কয়েক সপ্তাহ আগে অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান আমাকে মেইল লিখেন তিনি একটি বই সম্পাদনা করছেন যেখানে দেশি-বিদেশি অনেকের লেখা থাকবে। আমার একটা কলাম ওনার ভালো লেগেছে, তিনি আমার সম্মতি চান আমার কলামটি তিনি তার বইয়ে যোগ করবেন। আমি সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সাথে কথা বলে তাকে মেইলে ইতিবাচক জবাব দেই।
তিনি ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে আবারও মেইল করেন। সম্ভবত: বই সম্পাদনার কাজ শেষ করার আগেই তিনি স্রষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন।

আমার লেখার উদ্দেশ্য এই তথ্য জানানো নয়। অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানের মৃতদেহের সুরতহাল বিষয়ে পত্রিকা মারফত যতটুকু জেনেছি,  তিনি ওয়াশ রুম থেকে এক পা বের করতে পেরেছেন, আরেক পা ওয়াশ রুমেই ছিলো। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “সকল উম্মতের রয়েছে সুনির্দিষ্ট জীবন বা হায়াত। যখন তাদের সেই সুর্নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হবে তখন তারা সেই সময়কে মুহুর্তের জন্যও আগে-পিছে করতে পারবে না। ” (সূরা ইউনুস: আয়াত ৪৯) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মৃত্যুবরণ করতে পারবেনা। মৃত্যুর সময়টাতো নির্দিষ্টভাবে লিখিতই রয়েছে। ” (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ১৪৫)

এ ঘটনায় আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, মৃত্যু আমাদের কাছেই ওৎপেতে রয়েছে, নির্ধারিত সময় এসে গেলে কাউকে ফোন করে কিছু জানানো কিংবা বদ্ধ ঘরের দরজা খোলা তো দূরের কথা আরেক পা নড়ানোর সাধ্যও নেই। আমি এর আগে এক ঘটনায় লিখেছি স্বামী-স্ত্রী একই মোটরবাইকে করে অফিস যাচ্ছেন। হঠাৎ করে ওপর থেকে একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে বাইকের পেছনে বসা স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে, অথচ স্বামী অক্ষত। কারণ স্ত্রীর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলো।

২ ডিসেম্বরের ঘটনা। বউভাতের অনুষ্ঠানে বরের জানাজা, কনে হাসপাতালে। নববধূ ময়না আক্তার স্বামীর মৃত্যু খবরে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বউভাত অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শেষ। গেট সাজানো থেকে শুরু করে অতিথিদের জন্য মোরগ পোলাও, পায়েস- সবই রান্না হয়ে গেছে। কনেপক্ষের অতিথিরাও গাড়িবহর নিয়ে বরের বাড়িতে। তাঁদের আপ্যায়নের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় খবর এল, বর মারা গেছেন। এই খবরে বউভাতের অনুষ্ঠানে আনন্দোচ্ছ্বাস পরিণত হলো বিষাদে। পরে বউভাতের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল প্রস্তুত হতে থাকে বরের লাশ গ্রহণ করে জানাজা-দাফন-কাফনের জন্য।

আরও পড়ুন


হেফাজতের তাণ্ডবকারীদের ছাড় দেয়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ২৮ নেতাকর্মীর জিডি

ইরফান সেলিমের জামিন আপিলেও বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই

শিগগিরই গণপরিবহন চালুর আভাস দিলেন ওবায়দুল কাদের


সোমবার রফিকুলের বিয়ে হয়। পরদিন মঙ্গলবার রাতে রফিকুলের পেটে ব্যথা হয় এবং শরীরে সামান্য জ্বর ছিল। চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আগেই তিনি মারা যান। দাওয়াত ছিল বউভাতের। কিন্তু সেখানে পড়তে হলো জানাজা। রফিকুলের বউভাতের অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য রান্না করা খাবার পরে স্থানীয় মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

মৃত্যু যখন অত্যাসন্ন হবে। মৃত্যুপথযাত্রী যখন মৃত্যুকে সামনে দেখতে পাবেন তখন মৃত্যুপথযাত্রী কী বলবেন সে বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে - “মৃত্যু আসলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দিলে, আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অর্ন্তভূক্ত হতাম। কিন্তু নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহপাক কাউকে অবকাশ দিবেন না। ” (সূরা মুনাফিকুন: ৯-১১) এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় মৃত্যুকে সামনে দেখে মৃত্যুপথযাত্রী নামাজ, রোজা কিংবা হজ্জের কথা বলবেন না, বলবেন সাদকা তথা দানের কথা। আসুন করোনার এ সংকটময় সময়ে অভাবী মানুষদের সাধ্যমত দান-সদাকা করি তথা আখিরাতের ব্যাংকে জমা করি।

দুনিয়ার জীবনই মানুষের জন্য শেষ নয়, বরং দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের পরেই শুরু হবে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের পথ চলা। পরকালের স্থায়ী জীবন সুখ-শান্তি এবং দুঃখ-যাতনায় ভরপুর থাকবে। সুখ-শান্তি, কল্যাণ এবং দুঃখ-যাতনা ও অকল্যাণ নির্ভর করবে মানুষের দুনিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপর। যারা দুনিয়াতে আল্লাহ তা’আলার বিধি-বিধান মেনে চলবে তারাই পাবে সুখের সন্ধান। আর যারা তাঁর অবাধ্য হবে তাদের দুঃখ-যাতনার সীমা থাকবে না। আল্লাহ তা’আলা বিশ্বাসীদের পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের শান্তি ও কল্যাণের জন্য কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন।

অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

news24bd.tv আহমেদ

সম্পর্কিত খবর