হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ-বন্ধু গুইসাপ

হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ-বন্ধু গুইসাপ

Other

একসময় বাংলাদেশের বনজঙ্গল, ঝোপঝাড় ও কৃষি জমিতে প্রায়ই গুইসাপের দেখা মিলতো। কিন্তু এখন তেমন একটা দেখা যায় না৷ আজকাল এই নিরীহ উপকারী প্রাণীটি বিভিন্ন কারণে আমাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে।

প্রাণীবিদেরা মনে করেন, নিরীহ এই প্রাণীটি বিলুপ্তির জন্য দায়ী মূলত মানুষই। গুইসাপ আমাদের তেমন একটা ক্ষতি করে না।

বেশিরভাগই উপকার করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এই প্রাণীটির অবদান সবচেয়ে বেশি। এটা আমাদের চারপাশের বিষধর সাপ খেয়ে আমাদের এদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

গুইসাপ নামে সাপ হলেও এরা আসলে সাপ নয়।

তবে তাদের লালায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকায় তা বিষাক্ত। বর্তমানে গুইসাপের তিনটি প্রজাতি কোনোরকমে টিকে আছে৷ এগুলো হল কালো গুইসাপ, সোনা গুইসাপ ও রামগদি গুইসাপ৷ কালো গুইসাপ লোকালয়ে বসতবাড়ির  আশেপাশে বেশি দেখা যায়।

বড় গুইসাপ বা রামগদি। এটা এক প্রকার বড় জাতের গিরগিটি। সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে এরা। তবে গড় দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির মতো। ওজন ২৫ কেজির মতো হতে পারে। তবে বেশির ভাগেরই  ওজন এর অর্ধেক।

বড় গুই বা রামগাদি দেখতে গাঢ় বাদামি বা কালচে, তাতে হলুদ রঙের রিং বিদ্যমান। পা ও নখ লম্বাটে। লেজ চ্যাপ্টা ও শিরযুক্ত। এরা দ্রুত গাছে উঠতে পারে। সাঁতরে খাল-বিল-পুকুর সহজেই পাড়ি দিতে পারে। বড় গুইসাপ দেখতে পাওয়া যায় ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, চীনেও।

সোনা গুইসাপ চোখে পড়ে হাওড় ও বিলের আশেপাশে৷ গুইসাপ মূলত গর্তবাসী প্রাণী৷ মাটির গর্ত, উইঢিবি, গাছের কোটর ও ফাটলে এরা বাস করে৷ পানিতেও দেখা যায়৷ এরা সাঁতার কাটতে ও গাছে উঠতে পারে৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে রয়েছে- এদের প্রধান খাদ্য কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর,পচা-গলা প্রাণীদেহ ও উচ্ছিষ্ট।

বড় গুইসাপ মাছ, সাপ, ব্যাঙ ও পাখি খায়। তারা ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপও খায়। ছোটসাপ, ব্যাঙ, ইদুর, মাছ, কেঁচো, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি৷ সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানা ও ডিমে হানা দেয়৷ গুইসাপ খুবই নিরীহ প্রাণী৷ মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়৷

news24bd.tv

গুইসাপ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে৷ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুইসাপের ভূমিকা অতূলনীয়৷ এরা খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ এদের সংখ্যা হ্রাস পেলে প্রধান খাদ্য পোকামাকড়রে সংখ্যা বেড়ে যাবে, ইদুরের উৎপাত বেড়ে যাবে, অনুকূল পরিবেশ হবে বিষাক্ত সাপের৷ যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য মোটেও সুখকর নয়৷

ফসলের জমিতে এখন পোকামাকড় দমনের জন্য উচ্চমাত্রার কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, ফলে অনেক উপকারী অণুজীব ধ্বংস হয়ে যায় ও মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়৷ ফসলে সৃষ্টি হয় নিম্নমাত্রার বিষক্রিয়া যা মানুষকে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে৷ অন্যদিকে গুইসাপ এসব কীটনাশকের চেয়ে অনে বেশি কাজ করে কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়া৷ এরা মৃত জীবজন্তু খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে৷

এই উপকারী প্রাণীটি আজ বিলুপ্তির পথে৷ এদের অনেক প্রজাতি হারিয়ে গেছে৷ বর্তমানে যে তিনটি টিকে আছে হয়তো কিছুদিন পর আর থাকবেনা৷ এদের বিলুপ্তির কারণ- চোরাচালান, অতিমাত্রার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, বনজঙ্গল ধ্বংস ও হাওড়া বিলের পরিবেশ বিনষ্টকরা৷ প্রজনন ক্ষেত্র এবং আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া গুইসাপ কমে যাওয়ার আরো একটি কারণ।


আরও পড়ুনঃ


ভারতের পাশেই থাকবেন ইমরান খান

ইসরায়েলে করোনায় দৈনিক মৃত্যু নেমে এসেছে শূন্যে

বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তার পরও পাত্তা দেয় নি ভারত

মজার ছলে করোনা ছড়িয়ে বেড়ানোর দায়ে একজন গ্রেপ্তার!


গুইসাপের চামড়ার অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে। মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ তৈরিতে গুইসাপের চামড়া কাজে লাগানো হয়। চোরা শিকারিরা তাই গুই সাপ শিকার করে চামড়া তুলে বিক্রি করে দেয়। বিদেশেও গুইসাপের চাহিদা রয়েছে।

এদের অধিকাংশ মারা যায় মানুষের আক্রমনে৷ খাবারের সন্ধানে যখন  হাঁস মুরগির ডিম ও ছানার দিকে হানা দেয়, তখন লাঠি দিয়ে পিঠিয়ে মেরে ফেলা হয়৷ অনেক সময় লোহার তৈরি বিশেষ ফাদে শুটকি মাছ বা মৃত ছানা টোপ দিয়ে মারা হয়৷ কিছু লোক কবিরাজি ঔষধ তৈরির কাজে গুই সাপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে। কোন কোন উপজাতি জনগোষ্ঠী খাদ্যের জন্য শিকার করে৷ এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে উপকারী প্রাণীটি৷

গুইসাপ সংরক্ষণ করা অতি জরুরি৷ এদের শিকার ও পাচাররোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ জনসচেতনতা সৃষ্টি করে অবাধ শিকার বন্ধ করতে হবে৷ প্রয়োজনে টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় উপকারী প্রাণীদের রক্ষায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে৷ সরকার, জনগণ ও প্রাণী অধিকার সংরক্ষণে জড়তিদের যৌথ উদ্যোগেই এই উপকারী প্রণীটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।

news24bd.tv / নকিব