রমজান মাসের সেই স্মৃতি

রমজান মাসের সেই স্মৃতি

Other

আমার কাছে রোজার মাস মানে শেষ বিকেলে আব্বার ইফতার কিনে বাড়ি ফেরা।

এক হাতে চটের ব্যাগে রকমারী জিনিষ, অন্যহাতে তুষের ওপর থাকতো বরফ। এটাকে বলা হত পাহাড়ি বরফ। তখন তো ঘরে ঘরে ফ্রিজ ছিল না।

শরবতের সঙ্গে এই বরফ মিশিয়ে খেতাম আমরা।  

আমার কাছে রোজার মাস মানে কাসিদা পার্টির গান শুনে সেহরী খেতে ওঠা।
 রাতের অন্ধকার ফুড়ে হ্যাজাক বাতি হাতে গান গাইতে গাইতে আসতো কাসিদা পার্টির লোকজন। তারা গান গেয়ে রোজাদারদের ঘুম ভাঙ্গাতো।

আমাদের এলাকায় কাসিদা পার্টির নেতাগোছের লোকটি ছিল প্রচন্ড সাদা। আমাকে পাশের বাড়ি বান্ধবী কানে কানে বলেছিল, লোকটা আসলে মানুষ না, জ্বীন। আমি অনেকদিন পর্যন্ত এই কথা বিশ্বাস করতাম।  

তবে সব সময় কাসিদা পার্টির গান শুনে ঘুম ভাঙ্গত তা নয়। কখনও কখনও ঘুম ভাঙ্গতেই চাইত না। আম্মা সেহরি খাওয়ার জন্য ডাকতে এলে এত রাগ লাগতো। বেশী রাগ হত মসজিদের মোয়াজ্জিনের ওপর। একটু পর পর বলত, আর মাত্র দশ মিনিট আছে। কয়েক মিনিট যেতেই- ‘সেহরীর সময় শেষ। আর খাবেন না। ’ 

আমার কাছে রোজার মাস মানে সাদাকালো ফিলিপস টেলিভিশনে ছোট পাঞ্জাবি পরা খালিদ হোসেনের গান-‘তৌহিদেরই মুরশিদ আমার/ মোহাম্মদের নাম…’

নজরুলের হামদ-নাত শুনতে শুনতে ছোলা-পিয়াজু আর ফল দিয়ে আমরা সাদামাটা ইফতার খেতাম। ইফতারের সময় যে তেহারি বা চিকেন বিরিয়ানি যে খাওয়া যায়, তখন সেটা জানতাম না।  

যেদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডা কিংবা পাড়ার টিমের ফুটবল ম্যাচ থাকতো, আব্বা সকালে বাজারের সঙ্গে ইফতার কিনে আনতেন। কারণ বিকেলে তিনি স্টেডিয়ামে যেতেন খেলা দেখতে।   আমরা ভাইবোনরা ইফতার প্লেট সামনে নিয়ে আব্বার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। মাগরেবের আজান দেবার সঙ্গে সঙ্গে যখন শরবতের গ্লাস মুখে দেব, তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হত। ‘আব্বা এসেছে, ‘আব্বা এসেছে’ বলে আমরা চিৎকার করে ছুটে যেতাম…..

আমার আব্বা আর কোনদিন আসবে না। আম্মাও আর ডাকবে না সেহরী খেতে ওঠার জন্য। দুজনেই এখন দূর আকাশের তারা।  

মনিজা রহমান, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

news24bd.tv তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক