এক
বাংলাদেশ সরকার হঠাৎ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারিতে আমাদের দেশের অবস্থা খুব খারাপ। ভারতের অবস্থা আমাদের চেয়ে খারাপ। আমি বন্ধু-বান্ধবদের খোঁজ নিতে ফোন করেছিলাম।
অনেকে আক্রান্ত।কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি । হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছে না। দিল্লিতে আমার এক বন্ধু জানালো, এখন কেউ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে ভর্তি হতে পারবে না ।
ঘরের মধ্যে বসে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই। আমার মনটা খুব খারাপ হলো । পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচারের কারণে সংক্রমণ বেড়েছে। ভয়ঙ্কর বেঙ্গল স্ট্রেইন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশ । বিধান সভায় ভোটের প্রচারে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না । বেশিরভাগ মানুষের অনুমান ছিল তৃণমূল জয়ী হবে । কিন্তু এক্সিটপোলের ফল ধাঁধাঁ লাগিয়ে দিয়েছে। এক্সিট পোলে বিজেপি এগিয়ে।
আবার অনেক সময় এক্সিটপোলের ফল ভুল হওয়র ঘটনাও আছে। ফলে ২ মে ফাইনাল ফল না দেখা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ভারতের ওপর খুব নির্ভর করেছিল । তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য এডভান্স টাকা দিয়েছিল। প্রতিমাসে ৫০ লাখ টিকা পাবে বলে কথা ছিল। এ পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। কিন্তু ভারতের পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হওয়ায় তারা টিকা দিতে পারছে না। সেরাম ইন্সষ্টিটিউটের টিকার চাহিদা হুট করে বেড়ে গেছে । ভারতে দিনে তিন লাখ ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে।
সেরামের দিনে উৎপাদনের ক্ষমতা তার চেয়ে কম। সামনের দিনগুলিতে চাহিদা আরও বাড়বে । এখন ৪৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের শুধু টিকা দেয়া হচ্ছে। পহেলা মে থেকে ভারতে ১৮ বছরের বেশি বয়েসীদের টিকা দেয়া হবে। তার বাইরে বাংলাদেশের মতো আরও অনেক দেশের কাছ থেকে এডভান্স টাকা নিয়েছে সেরাম।
এখন চাপে পড়েছে। ফলে বাংলাদেশ টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
দুই
বেইজিংয়ে আমার এক চীনা সাংবাদিক বান্ধবীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হলো। জানতে চাইলাম, তোমাদের অবস্থা কি ? সে বললো, খুব ভাল। ফুরফুরে মেজাজে আছি । মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছি। অবাধে রেস্তোরাঁয় খাচ্ছি।
একদম স্বাভাবিক অবস্থা। এক সময় কেউ আমার চেয়ে ভাল আছে শুনলে হিংসে হতো। মহামারি আসার পর চির শত্রুও ভাল আছে শুনলে ভাল লাগে। চীনা বন্ধুরা ভাল আছে শুনে ভাল লাগলো।
বাংলাদেশ এখন চীন থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে। টিকা নিয়ে কূটনীতি হচ্ছে। কোনও কোনও দেশ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু করেছে। পাসপোর্টে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে টিকার তথ্য সংযোজন করছে। এটা একটা ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।
লন্ডনে কনসার্টে গেলে টিকা সনদ বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে যারা ডবল ডোজ টিকা দিয়েছে তারা টিকার সনদ পেয়েছেন। চীনারা তাদের দেশে ভ্রমণে চীনের টিকা নিতে উৎসাহ দিচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চীন সফর করতে চীনা টিকা নিতে চাইছেন । বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রী যারা চীনে পড়ালেখা করছেন তারাও চীনের টিকা নিতে চাইছে । ভারতের যেসব ব্যবসায়ী চীনের সঙ্গে ব্যবসা করেন তারা নাকি সেরামের টিকা না নিয়ে নেপাল গিয়ে চীনের টিকা নিচ্ছে ।
কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হেফাজতের আহবায়ক কমিটি
সব কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ
‘শিশুবক্তা’ ৫ দিনের রিমান্ডে, নেওয়া হলো তেজগাঁও থানায়
তিন
সংকটকালে কূটনীতি এমন হবে সেটা আমরা কেউ ভাবিনি। আমরা চিরায়ত বন্ধু ভারতের টিকার ওপর নির্ভর করেছিলাম। কিন্তু ভারত নিজে এতটা খারাপ অবস্থায় পরে যাবে সেটা ভাবিনি। এটা এখন দেরিতে ভাবতে হচ্ছে। কূটনীতিতে একটা কথা আছে, সব ডিম নাকি এক ঝুড়িতে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ।
আবার কূটনীতি বিদ্যার আরেকটা কথা সবাই বলেন, বৈদেশিক সম্পর্কে স্থায়ী শত্রু কিংবা বন্ধু বলে কিছু নেই। স্থায়ী হলো জাতীয় স্বার্থ। সামনের দিনে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আমাদের কূটনীতি কোন পথে এগোয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মাসুদ করিম, সিনিয়র সাংবাদিক
news24bd.tv নাজিম