নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ৭ বছর: দ্রুত রায় কার্যকর চায় পরিবারগুলো

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ৭ বছর: দ্রুত রায় কার্যকর চায় পরিবারগুলো

Other

‌‘দেখতে দেখতে ৭ বছর হয়ে গেল। কিন্তু ওকে কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ওর সাথে কত স্মৃতি। সেটা কি ভোলা যায়।

অনেক সুখের সংসার ছিল আমার। স্বামী সন্তান নিয়ে আল্লাহর রহমতে অনেক সুখে ছিলাম আমি। কিন্তু সেই সুখ সইল না। আমার নজরুলকে ওরা মেরে ফেলল।
শুধু আমার নজরুলকেই নয় নরপশুরা জলজ্যান্ত আরও ছয়জনকে নৃশংসভাবে খুন করল। ’

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এভাবেই স্বামীর স্মৃতি রোমন্থন করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। বিউটি বলেন, করোনার এই সংকটকালে আমরা ভালো নেই। তবে ভালো থাকব যদি দ্রুত রায় কার্যকর হয়।

একই আক্ষেপ নিহত যুবলীগ নেতা স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুরের কণ্ঠেও।

তিনি বলেন, ৭ বছর পেরিয়ে গেল অথচ স্বামী হত্যার রায় কার্যকর দেখতে পারলাম না। আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি সেটারও কেউ খোঁজ নেয় না।

সাতখুন নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস তো বটেই দেশের ইতিহাসেও ন্যাক্কারজনক ঘটনার একটি। খুনের অভিযোগে প্রমাণসহ মারাত্মক প্রশ্নবিদ্ধ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এলিট ফোর্স র‌্যাব। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপহরণের পর সাতজনকে খুন ও শীতলক্ষ্যায় বস্তায় ভরে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া, ৩০ এপ্রিল একে একে লাশ ভেসে উঠার সেই লোমহর্ষক ঘটনা আজও ভুলতে পারেনি নিহতের স্বজনেরা। ঘটনার পর র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার, প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা, আদালতের রায়প্রদানসহ টান টান উত্তেজনায় পার হয়ে গেছে ৭ বছর। তবুও সাত বছর পেরিয়ে গেলেও রায় কার্যকর হয়নি খুনীদের। তাই প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আজও ভারাক্রান্ত স্বজনদের হৃদয়। তারা দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও তাদের এই দাবি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, আলোচিত সাতখুন মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রেখে বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখা হয়। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রয়েছে। যেহেতু ৩৫ জন আসামির সবাই আলাদা আলাদাভাবে আপীল করেছেন। তাই আপীল শুনানী শেষ করতে সময় লাগছে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করব আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকবে।

সাত খুনে নিহত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই রিপন হোসেন বলেন, এখনও রায় কার্যকর না হওয়ায় আমাদের ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে শঙ্কা কাজ করে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হোক। এ রায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক যে আর যেন কোন নূর হোসেনের সৃষ্টি না হয়।

নজরুলের সহযোগী নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা নরপশুর চেয়ে খারাপ। দেশের কাছে, প্রশাসনের কাছে ও বিচার বিভাগের কাছে দাবি থাকবে খুব দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক। মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিষয়টি আমি কখনো ভুলতে পারব না। আমার সন্তান হারানোর বেদনা আমিই বুঝি।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনা ঘটেছিল। সাত বছর আগে সেই দিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের বাড়িতে ফিরছিল প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম। ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিম, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, স্বপনের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম ও বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটনকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে খুন করে ইটবেধে শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দেওয়া হয়। অপহরণের তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুলসহ ৬ জন ও ১ মে লিটনের লাশ একে একে শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।

news24bd.tv তৌহিদ