ঠাকুরগাঁওয়ে ‘রহস্যজনক’ আগুন, আতঙ্কে খোলা আকাশেঁর নিচে গ্রামবাসী

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘রহস্যজনক’ আগুন, আতঙ্কে খোলা আকাশেঁর নিচে গ্রামবাসী

Other

ঠাকুরগাঁওয়ে একটি গ্রামে ১ মাসের ও বেশি সময় ধরে ঘটছে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড। আগুনে একে একে নিঃস্ব হয়েছে ২০টি পরিবার। আগুন আতঙ্কে অনেকেই সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশেঁর নিচে দিনযাপন করছেন। প্রতিদিনই ঘটা এ অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও সূত্রপাতও অজানা গ্রামবাসীর কাছে।

এ ঘটনা ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন বলছে, অসতর্কতার কারণেই ঘটতে পারে এমন দুর্ঘটনা। নাশকতার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্তও করছেন তারা। ওই গ্রামে বর্তমানে প্রতিটি বাসায় পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের সাবাজপুর গ্রামে।

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ভয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচেঁ থাকতেছেন আমেনা বেগম। দিন-রাত এক করে বাড়ির জিনিসপত্র পাহারা দিচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে আশঙ্কায় রয়েছেন যে কোনো সময় ঘরবাড়িতে আগুন লেগে সব পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।

আমেনা বেগমের মতই আগুন আতঙ্কে দিন পার করছেন নূর আলম, মোতালেব, মকসেদ আলীসহ সাবাজপুর গ্রামের প্রায় ২০ টি পরিবারের শতাধিক লোকজন।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, অলৌকিকভাবে প্রতিদিন ৩-৪ বার আগুন ধরছে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে। কখনো রান্নাঘরে, কখনো বা কাপড়ের ট্রাঙ্কের ভেতর, কখনও ঘরের চালাতে। গত ২০ দিনে প্রায় শতাধিকবার আগুন লেগেছে ২০ পরিবারের বাড়িগুলোতে। আগুন নেভানোর জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক পানির পাম্প স্থাপন করেছেন গ্রামের লোকজন।

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল মাসের ২৯ তারিখে শবে বরাতের রাতে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। ওইদিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পরদিন ৩০ মার্চ আগুনে ৩টি পরিবারের ঘরবাড়িসহ আসবাবপত্র পুড়ে যায়।

ভুক্তভোগী মোতালেব হোসেন জানান, গত ১ মাস থেকে প্রতিদিন কোন না কোন বাসায় আগুন লাগতেছেই। আমরা এই আগুনের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে রয়েছি। আগুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ৫টি পাম্প বসিয়েছি।

আমেনা বেগম বলেন, মাঠের কাজে যেতে পারছি না। অনেকেই মাঠে ও বাইরে কাজ করতে গেলেও আগুন লাগার খবরে ছুটে আসতে হচ্ছে বাড়িতে। চরম আতঙ্কে দিন কাটছে পরিবারগুলোর।

আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়া শাহেরা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন তার দিন মজুরের কাজ করে তৈরি করা ঘরটি আগুনে পুড়ে গিয়েছে। এই ঘর আবার ঠিক করার মত সার্মথ্য তার আর নেই। এই কথাগুলো বলা শেষ হওয়ার আগেই আবার বিলাপ করতে শুরু করেন।

গ্রামবাসীর দাবি, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আগুনের সূত্রপাত খুঁজে বের করে গ্রামের পূর্বের অবস্থা ফেরানোর। দ্রুতই এই সমস্যা সমাধানের জন্য জোর দাবি জানান তারা।

উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি থেকে মুক্তি তদন্ত করা হচ্ছে। কাল এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। আমি নিজে প্রতিদিন খোজখবর নিচ্ছি গ্রামবাসির।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, আপাতত প্রতিটি বাড়িতে একজন করে গ্রাম পুলিশ রেখে সার্বক্ষনিক পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও এর মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে সুরাহা না হলে ঢাকা হতে সংশ্লিষ্ট টিম আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পরে জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্থ ১০টি পরিবারের মাঝে প্রত্যেক পরিবারকে ৩ বান টিন এবং ৯ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।

সম্পর্কিত খবর