কাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে?

কাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে?

অনলাইন ডেস্ক

জাকাত ইসলামের পাঁচটি ফরযের একটি। কালিমায়ে শাহাদাত ও সালাতের পর জাকাতের স্থান। জাকাতের ব্যাপারে যে কৃপণতা করল অথবা কম আদায় করল সে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত ও আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর।

বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত’।
সূরা আলে-ইমরান: (১৮০)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অতঃপর সে তার জাকাত প্রদান করল না, কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপ সৃষ্টি করা হবে, যার দুটি চোঁয়াল থাকবে, যা দ্বারা সে তাকে কিয়ামতের দিন পেঁচিয়ে ধরবে, অতঃপর তার দু’চোয়াল পাকড়ে বলবে: আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত ধন’। (সহীহ বুখারি)

কাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে:

পবিত্র কুরআনেই বলা হয়েছে কারা কারা জাকাত পাবার অধিকার রাখে। সেখানে আট শ্রেণীর লোকের কথা বলা হয়েছে। তবে এর সুস্পষ্ট সংজ্ঞা, বরাদ্ধের পরিমাণ, কোন পদ্ধতিতে দিতে হবে তার ব্যাখ্যা এসেছে পবিত্র হাদিস শরীফে। এ ব্যাপারে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেখানে জাকাত পাবার অধিকারীদের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, শ্রমবিন্যাস, পণ্যের বাজার ও উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং নানান বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে জাকাতের বিধান কেমন হবে সেসব বিষয়েও রাসুল (সা.) হাদীস শরীফে আলোকপাত করেছেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় খাত : ফকির ও মিসকিন

আরবিতে ফুকারা এবং মাসাকিন দুটি শব্দ দিয়েই দারিদ্রকে নির্দেশ করলেও এ দুটির অর্থ ভিন্ন। ফেকাহ শাস্ত্রের গ্রন্থগুলোতে এর সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এভাবে, ফুকারা বা ফকির হলেন এমন শ্রেণীর দরিদ্র ব্যাক্তি যে তার আয় থেকে মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। অনেক জায়গায় এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ফকির হলো এমন মানুষ যার জীবিকা নির্বাহ করার মতো সম্পদ নেই এবং আয়েরও ব্যবস্থা নেই।

আর মিসকিনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে কিন্তু তার জীবিকা নির্বাহের মতো পর্যাপ্ত আয় হয় না। অনেক পরিশ্রম করেও যে তার অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খায় সেই হচ্ছে মিসকিন।

কেউ কেউ আবার বলেছেন, ফকির মিসকিনের পার্থক্য হলো সাহায্য চাওয়ার দিক থেকে। ফকির হচ্ছে সে যে মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে বেড়ায়। আর মিসকিন হলো যে ফকিরের মতই অর্থাভাবে থেকেও কারো কাছে সাহায্য চায় না আত্মসম্মানের জন্য।

তবে সাহায্য চাওয়া বা না চাওয়ার চেয়ে বড় হলো এই দুই শ্রেণির মানুষই জাকাত পাবার অধিকার রাখে। তবে এখানে একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে যারা আয় করে মৌলিক প্রয়োজন মিটাতে পারছে কিন্তু তাদের সম্পদের পরিমাণ নিসাব পরিমাণ নয় তারা জাকাত দেবেও না এমনকি নেবেও না।

তৃতীয় খাত : আমিলীন

আমিলীন শব্দটি আরবি। এর সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায় এমন কর্মচারী যারা জাকাত ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত। পবিত্র কুরআনের ভাষ্যমতে এই শ্রেণিও জাকাত পাবার অধিকার রাখে। যারা সরকারি বা বেসরকারিভাবে জাকাত আদায় এবং বণ্টনের কাজে লিপ্ত তারাও জাকাতের অর্থ গ্রহণ করতে পারে। তবে বেশিরভাগ শরিয়ত বিশেষজ্ঞের মতে , এই ক্ষেত্রে আদায়কৃত জাকাতের সাড়ে ১২ ভাগের বেশি খরচ করা যাবে না এই খাতে।

চতুর্থ খাত : হৃদয় জয় করা উদ্দেশ্য

পবিত্র কুরআনে এ খাতের উল্লেখ এসেছে মুয়াল্লাফাতু কুলুবুহুম বা তাদের ঝুঁকে থাকা অন্তরকে জাকাত দাও। অর্থাৎ কোন অমুসলিমের অন্তরকে ইসলামের সুশীতল পরশের শান্তি দানের উদ্দেশে তাকে জাকাত দেয়া যায়। এর ফলে তার অন্তর ইসলামের প্রতি আরও আকৃষ্ট হবে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে এমন কাউকেই জাকাত দিতে হবে যে জাকাত দিলে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে এবং ইসলামের জন্য কোন ক্ষতির কারণ হবে না।

পঞ্চম খাত : দাসত্ব থেকে মুক্তি

সোজাসুজি অর্থে এই খাতটি দাস প্রথার দিকে ইঙ্গিত দিলেও এই খাতটির আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে মানুষের শরীর, মানস, পরিশ্রম, উৎপাদনশীলতা ইত্যাদিতে কোনরূপ বাধা থাকলে তা জাকাতের মাধ্যমে দূর করার চেষ্টা করা। ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, যখন পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল সে সময় সমগ্র বিশ্বেই দাসপ্রথা বিরাজমান ছিল। তখন নানাভাবে মানুষ আরেকজনের কাছে পরাধীন হয়ে পড়তো। ধীরে ধীরে সারা বিশ্বেই এই ব্যবস্থার বিলোপ ঘটেছে মনে করলেও আসলে দাস প্রথার কেবল বিবর্তনই ঘটেছে। এখনো ভূমিদাস, শ্রমদাস। যৌনদাস, পণবন্দী, মানব পাচারের শিকার হচ্ছে মানুষ। এসব জায়গা থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য জাকাত দেয়ার বিধান রয়েছে। মিথ্যা মামলায় যে সব মু’মিন জেল খাটছেন তাদের মুক্তির জন্যও জাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ।

ষষ্ঠ খাত : ঋণগ্রস্তকে ঋণ মুক্ত করা

গরিব বা অভাবী মুসলিম ব্যক্তিকে ঋণ থেকে মুক্ত করার উদ্দেশে জাকাত দেয়া যাবে। তবে একজন উপার্জনশীল ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে তখনই অভাবী বা গরিব বলা যাবে যখন তার মূল সম্পদের ও ঋণের পার্থক্য নেসাবের চেয়ে কম হয়। এক্ষেত্রে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির বেশকিছু দিক বিবেচনা করতে হবে। যেমন পাপ কাজের জন্য ঋণগ্রস্ত থাকলে তাকে জাকাত দেওয়া বৈধ নয়। ঠিক তেমনই কেউ যদি বৈধ কাজেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচের কারণে ঋণগ্রস্ত হয় তবে তাকেও জাকাত দেয়া ঠিক হবে না। ঋণগ্রস্তের জাকাতের টাকা ঋণগ্রস্ত কিংবা পাওনাদার যাকেই দেয়া হোক জাকাত আদায় হবে।

সপ্তম খাত : আল্লাহর পথে ব্যয় করা

ফী সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে বলতে সত্যিকার অর্থে কী বোঝানো হয়েছে এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়। কারো মতে এ খাতটি দিয়ে জিহাদের ব্যয় নির্বাহের কথা বলা হয়েছে। আবার হানাফি আলেমদের মতে, কল্যাণকর প্রত্যেক কাজেই এই খাতের মাধ্যমে জাকাত প্রদান করা যাবে। তবে বর্তমান সময়ের অনেক ইসলামী পণ্ডিত মনে করেন মসজিদ তৈরি, রাস্তাঘাট বানানো এসবের কাজে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। কেননা এগুলোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা যেমন ওয়াকফ, হেবা এবং সাদাকাহ এর মতো আমল রয়েছে।


চট্টগ্রামে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন

ইসরায়েলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নিহত ৩৮

কে এই মুফতি হারুন ইজহার?

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ


অষ্টম খাত : ইবনুল সাবিল

ইবলুন সাবিল বা পথের সন্তান দ্বারা এই খাতে মুসাফিরকেই বোঝানো হয়েছে। সফরে থাকাকালীন একজন মুসাফিরের নানা রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সর্বস্ব হারিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এছাড়া নাগরিকত্ব হারিয়ে অভিবাসী হয়ে ভিনদেশে বাস করা লাগে অনেককেই। এরকম বিপদে মুসাফিরকে জাকাত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে ইসলাম। দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে অনেক মানুষ তাদের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে তাদেরকেও জাকাত দেয়া বৈধ। রাজনৈতিক সংকটের কারণে যারা গৃহহীন হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের জাকাত দেয়া বৈধ।

পবিত্র কুরআনে জাকাতের এই আটটি খাতের বাইরে জাকাত পাবার অধিকার দেয়া হয়নি কাউকে। বিশেষ করে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, অমুসলিম, আত্মীয়-স্বজন, শিশু, সেবার প্রতিদানে, কর্মচারীকে, মসজিদে, মৃত ব্যক্তির দাফনের কাজে, ঋণ হিসেবে, উপহার হিসেবে এবং পাপী ব্যক্তিকে জাকাত দেবার বিষয়ে শরিয়তে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

news24bd.tv নাজিম

এই রকম আরও টপিক