লাইলাতুল কদরে যে বিশেষ দোয়াগুলো পড়লে মুক্তি মিলবে

লাইলাতুল কদরে যে বিশেষ দোয়াগুলো পড়লে মুক্তি মিলবে

অনলাইন ডেস্ক

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম লাইলাতুল কদর। মর্যাদাপূর্ণ এই রাতে মহান আল্লাহ বান্দার মুক্তির জন্য নাজিল করেছেন কুরআনুল কারিম। আর কুরআনুল কারিমে রয়েছে ক্ষমা প্রার্থনা অনেক দোয়া। আবার এ রাতে বিশেষ দোয়া পড়েছেন বিশ্বনবী হয়রত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

ক্ষমা প্রার্থনা সে দোয়াগুলো কী?

বিশেষ দোয়া

রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর যে কোনো একটি রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ সংঘটিত হয়। রোজাদার মুমিন মুসলমান এ রাত পাওয়ার জন্য শেষ দশক ইতেকাফে অতিবাহিত করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমৃত্যু ইতেকাফ করেছেন। এ রাতে বিশেষ একটি দোয়া পড়ার কথা বলেছেন।

তাহলো-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম - হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চার: 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি। ’

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।

কুরআনে ক্ষমার দোয়া

ক্ষমা প্রার্থনার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। যা নামাজের সেজদা, তাশাহহুদসহ সব সময় পড়া যায়। দোয়াগুলো হলো-

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ: 'রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন। '

অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী। ' (সূরা মুমিনুন: আয়াত ১১৮)

رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

উচ্চারণ: 'রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন। '

অর্থ: 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। ' (সূরা মুমিনুন: আয়াত ১০৯)

رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ: 'রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি। '

অর্থ: '(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। ' (সূরা কাসাস: আয়াত ১৬)

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: 'রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার। '

অর্থ: হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। ' (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ১৬)

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

উচ্চারণ: 'রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন। '

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো। ' (সূরা আরাফ: আয়াত ২৩)

رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

উচ্চারণ: 'রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব। '

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর। ' (সূরা ইবরাহিম: আয়াত ৪১)

سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

উচ্চারণ: 'সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির। '

অর্থ: ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে। ’ (সূরা আল-বাকারাহ: আয়াত ২৮৫)

رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ  وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا

উচ্চারণ: 'ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন। '

অর্থ: 'হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু। ' (সূরা বাকারাহ: আয়াত ২৮৬)

আরও পড়ুন


যেসব অঞ্চলে ৮০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে

খালেদার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ

খালেদাকে বিদেশ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন


رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ

উচ্চারণ: 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি। '

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন। ' (সূরা হাশর: আয়াত ১০)

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ: 'রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন। '

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। ' (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ১৪৭)

رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

উচ্চারণ: 'রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার। '

অর্থ: 'হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন। ' (সূরা আল-ইমরান: আয়াত ১৯৩)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, লাইলাতুল কদরে প্রিয় নবী ঘোষিত বিশেষ দোয়াসহ কুরআনে উল্লেখিত ক্ষমা প্রার্থনা দোয়াগুলো সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার  পর নিজেদের গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি পড়া। আর তাতেই মহান আল্লাহ রোজাদার মুমিন বান্দাকে গোনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে নাজাত দান করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহ থেকে ক্ষমা পেতে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো শবে কদরের এ ছোট্ট বিশেষ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। নামাজের সেজদা ও তাশাহহুদে ক্ষমা পাওয়ার কুরআনি দোয়াগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। প্রত্যেক রোজাদার মুমিন মুসলমানকে লাইলাতুল কদর পাওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।

news24bd.tv আহমেদ