সবাই যা ভুলে যায় তা আমার মনে থাকে

জসিম মল্লিক

সবাই যা ভুলে যায় তা আমার মনে থাকে

Other

টুকরো স্মৃতি

আলু দিয়ে গরুর মাংসের তরকারি আর ঘন ডাল..

১.

একবার ঢাকা থেকে বরিশাল যাচ্ছি। গাজী স্টীমারে। তখন দিনে সার্ভিস ছিল স্টীমারের। সকাল এগারোটায় বাদামতলী ঘাট থেকে ছাড়ত সন্ধ্যা ছটায় বরিশাল পৌঁছে যেতো।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন। স্টীমারের তৃতীয় শ্রেণি নিচ তলায়। সেখানে ঘুর ঘুর করছি। তখন দুপুর।

খাবারের সময় হয়ে গেছে। স্টীমারে কিচেনও নিচ তলাতে। ইঞ্জিন রুমে পাশেই ছোট্ট একটা রুমে রান্না হয়। গরুর মাংস আর ডাল রান্নার ঘ্রাণ স্টীমারের চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল আর আমার পেটে মোচড় দিয়ে উঠছিল তীব্র ক্ষুধা।  

কিন্তু আমার পকেটে পয়সা নাই! হঠাৎ দেখি ইভা। বরিশালের মেয়ে ইভা। সুন্দর গোলগাল দেখতে। চেহারায় একটু অহংকারী ভাব। ইডেন কলেজে পড়ে। সাদা ফতুয়া আর জীন্স পড়া। একটু উদ্ধত শরীর কিন্তু ভাল লাগছিল। বয়সটাই ভাললাগার। স্টীমার তখন চাঁদপুরের কাছে চলে এসেছে। জেলেরা মাঝ নদীতে রুপালী ইলিশ ধরছে। আমি রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে মেঘনা নদীর বড় বড় ঢেউ দেখছি।  

দুঃসাহসী জেলেরা মাঝ নদী দিয়ে অবলীলায় পার হচ্ছে। একসময় ইভা আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আমাদের মধ্যে তেমন কোনো কথা হয়নি সেদিন। কিন্তু সেই পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে অনেক কথা ছিল। ইভা কি কিছু বলতে চেয়েছিল! সেদিন ইভা আমাকে দুপুরের খাবার খাইয়েছিল। আহা কি যে স্বাদ লেগেছিল সেই ভাত আর গরুর মাংসের তরকারি! 

২.

সবাই যা ভুলে যায় তা আমার মনে থাকে। আর একবার আমি সামাদ লঞ্চে বরিশাল যাচ্ছিলাম। ঈদ করতে। আমার যাওয়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু দুটো কারণে যেতে হচ্ছিল। এক নম্বর মা কষ্ট পাবেন, দুই নম্বর এই সময় হল খালি হয়ে যায়। ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গেলে আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই আমি বরিশাল যাচ্ছি। রাতের দিকে আমার খুউব জ্বর উঠল। সেটা ছিল ডিসেম্বর মাস। কনে কনে ঠান্ডা।  

ত্রিপল দিয়ে লঞ্চের চারিদিকে বন্ধ থাকলেও সামাদ লঞ্চের স্টিলের বডি বরফের মতো হয়ে আছে। আমার সঙ্গে কাঁথা কম্বল কিছু নাই। এখন যখন বরিশাল যাই কত আয়োজন- ভিআিইপি কেবিন, এয়ারকন্ডিশন, এটাচ বাথ, টেলিভিশন, ডাইনিং, লিফট পর্যন্ত আছে। সামাদ লঞ্চেও হয়ত কেবিন ছিল কিন্তু আমি যাচ্ছিলাম ডেকে। একেতো জ্বর তার উপর অভুক্ত আমি গুটিসুটি মেরে একটা হিন্দু পরিবারের পাশেই নির্জিব হয়ে পড়েছিলাম। আমি জ্বরের ঘোরে কোকাচ্ছিলাম দেখে সেই নারী তাদের ভাগের রুটি আর কলা খেতে দিল আমাকে এবং আমার গায়ে একটা কাঁথা পেচিয়ে দিলেন।

৩.

আমি তখন মহসিন হলের ৬৩২ নম্বর রুমে থাকি। আমি কামালের রুমমেট। কামাল তখনই ব্যাস্ত সংবাদিক। দৈনিক জনতায় কাজ করে। সকালে বের হয় রাতে ফেরে। আমি দশদিন ধরে রুমে পড়ে আছি। আমার জ্বর ঠান্ডা কাশি। হিস্টাসিন খেয়ে আমার মাথা ব্লক হয়ে আছে। নিশ্বাস নিতে পারি না। হিস্টাসিনের মতো কুৎসিত ওষুধ যে কে আবিষ্কার করেছে! 

জ্বর মুখে ক্যান্টিনের খাবার ভয়াবহ লাগে! তিন ধরে কামাল নাই। পাবনা গেছে ওদের বাড়িতে। ও থাকলেও কিছু একটা গতি হতো। এদিকে আমার পকেট গড়ের মাঠ। কাল থেকেই আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে এই ভেবে আতঙ্কে আমি অস্থির। মাঝে মাঝে নিচের দোকান থেকে রুটি কলা এনে খাই।


ছাদে মিলল মাদ্রসাছাত্রীর গলাকাটা মরদেহ

রাশিয়ায় এক ডোজের স্পুটনিক টিকার অনুমোদন

জুমাতুল বিদাকে ‘আল-কুদস দিবস’ বলা হয় কেন?

মধ্যরাতে হেফাজতের নেতা শাহীনুর পাশা গ্রেপ্তার


জেসমিনের সাথে সদ্য পরিচয় হয়েছে আমার। মাঝে মাঝে দেখা হতো। আমার বেশি কথা থাকে না তার সাথে। কি কথা বলব আমি! সে আমার মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি তখনও। সম্পর্কটা দানাও বাঁধেনি। বাঁধার সম্ভাবনাও নাই। তার কথা প্রায়ই ভুলে যাই। শুধু তার হাসি মনে পড়ে। অনেক জোরে জোরে হাসতে পারে। প্রাণখোলা হাসি।  

জ্বরের মধ্যে তার কথা মনে পড়ছিল সেদিন। ইশ্‌ এই সময় কোনো আপনজন কাছে থাকলে কত ভাল হতো! আচ্ছা সে কি আমাকে ক্যাম্পাসে না দেখে চিন্তিত হচ্ছে! এইসব এলেবেলে ভাবছি এমন সময় ক্যান্টিনের বয় আমার রুমে আসল। হাতে একটা ব্যাগ। বলল একজন আপা আপনারে দিতে বলছে। খুলে দেখি তার মধ্যে গরম খিচুড়ি, ডিম ভুনা আর গরুর মাংস…!

জসিম মল্লিক, সাংবাদিক, কানাডা