আমাদের দেশ হলো পদের নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়ার দেশ

আমাদের দেশ হলো পদের নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়ার দেশ

Other

আমাদের দেশটা হলো নেতা, পিতা ও পদ পরিচয়ের দেশ। বাপের নাম, নেতার নাম, পদের নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়ার দেশ।  
আমরা বাপের সাহসিকতার সনদ নিয়ে বড়াই করি। সেই সনদ নিয়ে চাকরি নেই।

বাপের পরিচয় দিয়ে রাস্তায় আকাম-কুকাম করি। বাপের দাপট দেখিয়ে জীবন কাটাই। দেশের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত অসংখ‍্য মানুষ এই “বাপের নাম”, “বাপের স্বপ্ন”, “বাপের ধন” নিয়েই আছে।  

একদল আছে নেতার কাঁধের গামছা হয়ে, জীবন কাটাবে।

তুই চিনিস আমি কে? —ওমুক আমার বড়ো ভাই! —আমি ওমুক নেতার চামচা! অর্থাৎ নিজ বাহুতে ছটাক বল না থাকলেও, নেতার বাহুবলে সেরের ওজন দেখিয়ে চলো! 
আরেক দল হলো পদ-পদবী দিয়ে চলো। আমি ওমুক অফিসার! আমি তুমুক সরকারী “উলোট-পালট কর্মকর্তা”। মানুষের কল‍্যাণে কিছু করতে না জানলেও মানুষের কাছে পদ ভাঙ্গিয়ে খেতে পারি ঢেড়! 

আত্মপরিচয়ে, নিজ কর্মে, নিজগুণে বড়ো হওয়ার যে শিক্ষা—সেটা বহুলাংশেই নেই।  

বিদেশে বহু টেলেন্টেড ছেলে-মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। সহপাঠী, সহকর্মী, বন্ধু—এমন বহু তরুণ-তরুণী ছিলো, যাদের বাপের অনেক টাকা। কারো বাপ রাজনীতিবিদ। কারো বাপ বড়ো ব‍্যবসায়ী। অথচ, তাদের মুখে কখনো বাপের পরিচয় শুনিনি। বাপের পরিচয় বেচে খেতে দেখিনি। অনেক উদাহরণ আছে। এই মুহূর্তে একটা বলছি। আমেরিকার এমরি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হু ডেভিস, আমাদের ফিল্ডে জাঁদরেল গবেষক। তার ছেলে ও আমি, ইউনিভার্সিটি অব প‍্যানসেলভেনিয়াতে একসাথে কাজ করেছি। কখনো জানতেই পারিনি যে সে প্রফেসর ডেভিসের ছেলে। বহুদিন পর অন‍্যদের কাছ থেকে শুনেছি।  

বহু কর্মকর্তা দেখেছি। নোবেল বিজয়ী দেখেছি। বহু প্রফেসরদের কাছ থেকে দেখেছি। একসাথে কাজ করেছি। কিন্তু কখনো পদ-পদবী নিয়ে হাইলাইট করতে দেখিনি। আপনি হয়তো কফিশপে কফি নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার পেছনে একজন বিলেনিওয়ার দাঁড়িয়ে আছে। টেরও পাবেন না। আপনার আগে গিয়ে দাঁড়াবে না কোনদিন।  

আমাদের সমাজে এগুলো হলো সামাজিক অপশিক্ষার ফলাফল। কারণ, আমরা পরিবার থেকে, শৈশব থেকে আত্মপরিচয়ে বড়ো হতে শেখাই না। সামাজিকভাবে এই চর্চার অনেক অভাব। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই চর্চা নেই। যারা অগ্রপ্রজন্ম, তারা এই চর্চা করে না। ফলে অনুপ্রজন্মের মধ‍্যেও দেখা যায় না।

মানুষের দুনিয়ায়, আত্মপরিচয়ে বড়ো হতে না পারলে—সে জীবন তুচ্ছ! নিজ কর্মে আলোকিত না হতে পারলে সে জীবনে কোন মহিমা থাকে না। পরিচয় ভাঙ্গিয়ে খাওয়া যে একটা নিকৃষ্টতা—এই শিক্ষাটুকু আমরা পাই না। কী দুর্ভাগ‍্য! 

রউফুল আলম, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।

(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv/আলী