পুকুর যতবার কাটবে আর ভরবে ততই ‘পুকুর সমান মধু’

পুকুর যতবার কাটবে আর ভরবে ততই ‘পুকুর সমান মধু’

Other

ছবিতে কলকাতার গড়ের মাঠ। অন্য নাম ময়দান। এত বড় যে ময়দানের মাঝখানে গেলে নগরের কোলাহল শোনা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের সময় এক সন্ধ্যায় আমি খিদিরপুর রোডে ট্রাম থেকে নেমে গড়ের মাঠ আড়াআড়ি হেঁটে পেরিয়ে পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছেছিলাম।

কম-বেশি ১০০০ একরের এই বিশাল মাঠের অংশে বিভিন্ন ক্লাবের খেলার মাঠ, ইডেন গার্ডেনের মতো বিখ্যাত ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রভৃতি গড়ে উঠলেও বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো ঐতিহাসিক ভবন থাকলেও খোলা মাঠের মূল চরিত্র দু শ বছরেও নষ্ট করা হয়নি।

কারণ এটা কলকাতা মহানগরের 'ফুসফুস'। তারপরও আর যাতে কোনো স্থাপনা না হয় সেজন্য কলকাতাবাসীর উদ্বেগ রয়েছে। ময়দানে বইমেলা, বাণিজ্যমেলার আয়োজন হতো, সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে।

গত বছরই ময়দানের অংশে মোটরসাইকেল পার্কিং ও আবর্জনা দেখে কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিচারক স্যুয়োমটো রুল করেন।

আমাদের জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ ঢাকায় ছোট একটি 'ফুসফুস' ছিল, কম-বেশি ৬৮ একর, স্বাধীনতার পর ঘোড়দৌড় তুলে দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু চারদিকে শুধু নারকেল গাছ লাগিয়ে উদ্যানরূপে রাখতে বললেন। তারপর আমরা উদ্যানটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। প্রথমেই  এলোপাতাড়ি গাছ লাগানো হলো। ছেলেপেলেদের ফুটবল-ক্রিকেট খেলে ও দৌড়াদৌড়ি করে শরীরচর্চার সুযোগ বিলুপ্ত হলো। পরপরই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলের সরকার অতীতের আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষার জন্য, সংস্কৃতি বলয় নির্মাণের জন্য উদগ্রীব হয়ে দফায় দফায় প্রকল্প আনতে লাগলেন। আমাদের দেশে নগর উন্নয়নের কাজ পরিকল্পনাবিদরা করেন না, করেন প্রভাবশালী ঠিকাদার ও আমলারা এবং রাজনীতিবিদরা সায় দেন। তাই দূরদৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পনা নয়, প্রাধান্য পায় খণ্ড খণ্ড প্রকল্প। তাতে অনেক মধু চুঁইয়ে চুঁইয়ে নয়, স্রোতধারার মতো পড়ে। তাই যা হবার তাই হচ্ছে। এখন মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মারকসমূহ পর্যটকদের দেখানোর জন্য উদ্যানের ভেতরে রাস্তা ও হোটেল-রেস্তোঁরা দরকার। ব্যস্, এক সময় এলোপাতাড়ি গাছ লাগিয়ে যে পাতলা  বন তৈরি হয়েছিল তা এখন কেটে সাফসুতরো করো। উভয়তে লাভ। পুকুর যতবার কাটবে আর ভরবে ততই পুকুর সমান মধু।

বিশ্বে কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের মতামত না নিয়ে, বিশেষজ্ঞদের অভিমত ও নিরীক্ষা ছাড়া এলাকার ভৌত অবস্থা ও পরিবেশ এভাবে প্রকল্পের নামে বদলে দেওয়া বা ধ্বংস করা যায় না।

দেশে এখন রাজনীতির যে ভারসাম্যহীনতা ও সুশীল বা নাগরিক সমাজের দুর্বলতা তাতে ঠিকাদারি উন্নয়নের কুঠারাঘাত থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবশেষটুকু রক্ষা করতে পারা দূরাশা। তবু তরুণদের দ্বারা যেটুকু নাগরিক প্রতিবাদ হচ্ছে সেটুকুর প্রতি অভিনন্দন।

গড়ের মাঠের তিনটি ছবি নেটে উইকিপিডিয়া ও অন্য সূত্র থেকে নেওয়া। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের  ছবি তিনটি অতিসম্প্রতি ঢাকার সংবাদপত্রে প্রকাশিত। ।

মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু: সিনিয়র সাংবাদিক

(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক