মিষ্টি ভাণ্ডারে প্রশাসনের হানা, রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

মিষ্টি ভাণ্ডারে প্রশাসনের হানা, রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

নাসিম উদ্দীন • নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের মৌচাক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকিসহ ভোক্তাদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এই মিষ্টির দোকান চড়া দামে মিষ্টি বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর এবার হানা দিয়েছে ভ্যাট প্রশাসন।  

বছরের পর বছর ভ্যাট ছাড়া আকাশচুম্বী দামে মিষ্টি বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া দোকানটিতে ভ্যাট প্রশাসনের দুইজন সিপাহী এবং একজন ইন্সপেক্টর নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন কত টাকার মিষ্টি বিক্রি করছে তা তদারকি করছেন।

একই সাথে ক্রেতা মিষ্টি কেনার সাথে সাথে ওই কর্মকর্তা মিষ্টির দাম নেবার সাথে সাথেই ভ্যাটের পরিমাণ হিসেব করে আলাদা করছেন। এখন মিষ্টি কিনলেই নগদ টাকা ভ্যাট কেটে নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, নাটোরে দাপটের সাথে মিষ্টি বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান মৌচাকের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। কিন্ত আকাশচুম্বী দামের কারণে এ দোকানটির মিষ্টি কিনে খাবার সামর্থ্য নেই সকলের।

শহরের অন্যান্য দোকানগুলোতে বহুকষ্টে ৮-১০ পদের মিষ্টি পাওয়া গেলেও মৌচাকে মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে মেলে ৪১ পদের বাহারি মিষ্টি।

news24bd.tv

সম্প্রতি নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম মৌচাক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ ও টাকার রশিদ না দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া মৌচাক মিষ্টির দোকানের নামে নানা রকম অভিযোগ ওঠে। উত্তর চৌকির পাড় কালুর মোড় থেকে পূর্ব দিকে পায়ে হাঁটা পথ প্রায় ৫০ ধাপ গেলেই রাস্তার উত্তর পাশে মৌচাক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কারখানা। সুবিশাল লোহার গেট দক্ষিণে রাজবাড়ির বেড়চৌকি। তিন পাশ জুড়ে রয়েছে মানুষের বসতি। কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে গেলে লড়াই করতে হবে উড়ন্ত মাছির সাথে। ছানা থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। ঢাকনা ছাড়াই রাখা আছে মিষ্টি ভর্তি কড়াই। মাথায় ক্যাপ ছাড়াই শ্রমিক কাজ করছে। অপরিচ্ছন্ন স্থানে রাখা আছে মিষ্টির কাজে ব্যবহৃত সসপেন, প্লেট, কড়াইসহ প্রয়োজনীয় বাসন। আর এক লাইনে জ্বলছে ১৫টা উনুন।

কারখানাতে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিন-রাত ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এই কারখানা। দিনে ১৬ জন এবং রাতে ১৭ জন শ্রমিক কাজ করে। তবে মৌচাক কর্তৃপক্ষের দেওয়া শ্রমিক সংখ্যা ও বাস্তবিক চিত্রে অনেক তারতম্য রয়েছে।

মিষ্টি তৈরির কারিগর রিয়াজ জানান, মাথায় ক্যাপ পড়লে গরম লাগে তাই খুলে রেখেছি। তবে মালিক সকল কারিগরকে ক্যাপ দিয়েছে এবং কাজের সময় ক্যাপ ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে।

উত্তর চৌকিরপাড় কালুর মোড় এলাকার আবুল বাসার জানান, মৌচাক কারখানায় ১২টি চুলা আছে। কিন্তু এগুলোর সঠিকভাবে ধোঁয়া নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে টিনের চাল সহ গাছ পালার ক্ষতি হচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া উচ্চস্বরে গান, শ্রমিকদের চিৎকার-চেঁচামেচি আর বাসনপত্রের শব্দে রাতে তাদের ঘুমাতে সমস্যা হয়।  

কারখানাটি দ্রুত স্থানান্তরের জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।  

নাসিম/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর
 

সম্পর্কিত খবর