বেলুন-গলা ফ্রিগেটবার্ড: সমুদ্রের রূপবান ডাকু পাখি

বেলুন-গলা ফ্রিগেটবার্ড: সমুদ্রের রূপবান ডাকু পাখি

Other

ফ্র্রিগেটবার্ড একটি বৃহদাকার সামুদ্রিক পাখি। এর কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে ম্যাগনিফিসেন্ট ফ্র্রিগেটবার্ড প্রজাতিটি বৃহত্তম। মূলত গ্যালাপোগাস ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ফ্রিগেটবার্ড দেখা যায়।

তবে ফ্লোরিডা, গাল্ফ কোস্ট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইকুয়েডরের মধ্যবর্তী আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলেও এদের দেখা মেলে।

এদের দেহের পালক তামাটে-কালো এবং পা ধূসর-কালো। মাদি ফ্রিগেটবার্ডের চেয়ে মর্দা ফ্রিগেটবার্ডকে সহজে চেনা যায়। কারণ এদের ঠোঁটের নিচে একটি উজ্জ্বল লাল রঙের থলে থাকে।

তারা এটি বলুনের মতো ফুলিয়ে সঙ্গীকে আকর্ষণের চেষ্টা করে থাকে। মাদি ফ্রিগেটবার্ডের গায়ের রঙ কালো। পা গোলাপি। বুক সাদা। পাখায় তামাটে ফুট থাকে। গলার নিচে থলে থাকে না। তবে এরা আকারে মর্দা পাখির চেয়ে বড়ো হয়ে থাকে।

news24bd.tv

ফরাসি প্রকৃতিবিদ জাঁ-ব্যাপিÍস্ত দু তের্ত্রে ১৬৬৭ সালে এই পাখির নাম রাখেন। তিনি এ পাখিকে জাহাজে ডাকাতি করার জন্য জলদস্যুদের ব্যবহৃত দ্রুতগামী ফ্রিগেট জাহাজের সঙ্গে তুলনা করেন। চার্লস ডারউইন যখন এই পাখিটি প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন, তখন তিনি মুগ্ধ হয়ে এটিকে ‘সমুদ্রের কনডর’ নাম দিয়েছিলেন। এরও আগে ব্রিটিশ ও স্প্যানিশরা এদের ম্যান-অব-ওয়ার বা ডাকু পখি বলে ডাকতো। নামের সঙ্গে এদের আচরণের বেশ মিল রয়েছে।

এরা বেশ আগ্রাসী ও ডাকু স্বভাবের হয়। এদের জলদস্যুই বলা যায়। যে কারণে তাদের জলদস্যু জাহাজের নামে এদের নামকরণ করা হয়। এরা অন্যান্য পাখি, বিশেষ করে গাংচিলদের হয়রানি করে এবং তাদেও খাবার ডাকাতি করে। তারা প্রায়ই তাদের ঠোঁট দিয়ে অন্য পাখির লেজ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে তাদের শিকার ফেলে দিতে বাধ্য করে। অন্য পাখির বাসার ডিম চুরি করে খায়। এছাড়া এরা মাছ ধরার নৌকা থেকে ফেলে দেওয়া উড়–ক্কু মাছ, স্কুইড, জেলিফিশ, কচ্ছপ, কাঁকড়াও খেয়ে থাকে। যেভাবেই হোক, ম্যাগনিফিসেন্ট ফ্রিগেটবার্ড বিনাশ্রমে খাবার পেলেই খুশি।

এরা দৈর্ঘে ৩৫ থেকে ৪৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর ওজন হয় ২.৪ পাউন্ড থেকে ৩.৫ পাউন্ড বা ১.১ থেকে ১.৫৯ কেজি। এদের পাখার বিস্তার ৭.১ থেকে ৮.০ ফুট (২.১৭ এবং ২.৪৪ মিটার) হয়ে থাকে। ফলে এরা দীর্ঘ সময় ধরে অনায়াসে এবং অবিচ্ছিন্নভাবে বাতাসে ভেসে চলতে পারে। এর শরীর ও পাখার বিস্তারের অনুপাত পৃথিবীর যে কোনো পাখির চেয়ে বেশি। এরা ১৫ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এরা যখন এদের পাখা ও দ্বিধা-বিভক্ত লেজ ছড়িয়ে আকাশে ওড়ে, তখন এদের দেখতে ঠিক উড়ন্ত ঘুড়ির মতো মনে হয়।

news24bd.tv

তবে এরা যে নিজেরা একেবারেই শিকার করে না এমনটি নয়। এরা টুনা মাছ ও ডলফিনের ঝাঁকের খোঁজে থাকে। কারণ এরা ছোট মাছদের তাড়িয়ে পানির উপরিভাগে নিয়ে আসে। এ তখনই সুযোগ মতো ফ্রিগেট বার্ড এর লম্বা ও বঁড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে ছোঁ মেরে মাছ ধরে ওপরে উঠে যায়। একাজে তারা দারুণ পটু বটে। তবে পালক জল-নিরোধী না হওয়ায় এরা পানিতে ডুব দিতে পারে না বা জলে নামে না। পানিতে বেশি ভিজলে এদের শরীর অতিরিক্ত ভারী হয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এদের পাজোড়াও ছোট, ফলে পানি থেকে উঠতে সহায়তা করে না।

এরা সাধারণত দল বেঁধে চলে। এরা গাছের ডালে বা ঝোপঁ-ঝাড়ে বাসা বাঁধে। ফ্রিগেটবার্ড প্রজনন মৌসুমে একটি সঙ্গী নির্বাচন করে তার সঙ্গে জোড় বাঁধে। কোনো পুরুষ ও নারী ফ্রিগেটবার্ড যখন জোড় বাঁধতে চায়, তখন পুরুষ পাখিটি বাসা বাধাঁর জন্য ঘাস, লতা-পাতা, গাছের ডাল-পালা, খড়-পালক ইত্যাদি জোগাড় করে দেয়। কখনো-কখনো অন্য পাখির বাসা থেকেও উপকরণ চুরি করে আনে। নারী পাখিটি বাসা বুনে। এক ফুট প্রস্থের একটি বাসা বাধঁতে ১৩ দিন পর্যযন্ত সময় নেয় নারী পাখিটি।

news24bd.tv

মাদি ফ্রিগেটবার্ড সাধারণত সাত বছর বয়সে ডিম দেয়। এরা বছরে মাত্র একবারই ডিম দেয়। বাকি সময়টা বাচ্চাদের বড় করে তুলতে ব্যয় করে। আর কোনো পাখি এতো দীর্ঘসময় ধরে বাচ্চা লালন-পাল করে না। এরা এক ঋতুতে একটি বা দুটি ধবধবে সাদা ডিম পাড়ে। ডিমটির দৈর্ঘ ২.৭ ইঞ্চি ও বেড় ১.৯ ইঞ্চি হয়ে থাকে। সাধারণত এই প্রজাতির পুরুষ পাখি বাচ্চা দেওয়ার তিন মাস পর্যন্ত নারী পাখির সাথে যৌথভাবে বাচ্চা দেখাশোনা করে। এরপরে পুরুষ পাখিটি তার সাথীকে ছেড়ে চলে যায়। তবে মা-পাখিটি এক বছর অব্দি তার বাচ্চাদের দেখভাল করে। পুরুষ পাখিটি পরের মৌসুমে অন্য পাখির সঙ্গে জোড় বাঁধে।


আরও পড়ুনঃ


ফ্রান্সের ইকুইহেন বিচ: উল্টানো নৌকার নিচে বসবাস

বাড়ছে না ঈদের ছুটি, শুরু আগামীকাল থেকে

ঈদে অর্থ বহনে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের নির্দেশনা

ভারতে বাতিল হল গো-রক্ষা হেল্প ডেস্ক


ম্যাগনিফিসেন্ট ফ্রিগেটবার্ড সম্পর্কে একটি অবাক করা তথ্য হলো এই আশ্চর্যজনক সামুদ্রিক পাখিটি কোথাও না নেমে, না থেমে এবং নামমাত্র ডানা ঝাপটিয়ে দিনে প্রায় ২৫৫ মাইল (৪১০ কিলোমিটার) বেগে কয়েক মাস ধরে উড়তে পারে। এমনকি তারা উড়ালরত অবস্থায় ঘুমায় বলেও মনে করা হয়। এরা তাপীয় কলামে বা উষ্ণ বাতাসের ঊর্ধমুখী স্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে দেয়, যা তাদের উচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যায়, যেখানে তারা ডানা না নেড়েই প্রায় ৪০ মাইল পথ ভ্রমণ করতে পারে। যখন নামতে শুরু করে, তখন তারা ব্যাক-আপ তুলতে কেবল কয়েকবার ডানা ঝাপটায় এবং কিছুক্ষণের জন্য তারা আবারো ভেসে চলতে পারে।

ফ্রিগেটবার্ড সম্পর্কে অনেক গবষণা হয়েছে। তবে এখনো এই পাখিরা উড়ন্ত অবস্থায় কীভাবে ঘুমায় তা কেউ নিশ্চিত নয়। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন পরামর্শ ফ্রিগেটবার্ডদের মস্তিষ্কের কেবল একপাশ ঘুমায়, তখন অপর ভাগ জেগে থাকে এবং কোনো হুমকির জন্য সতর্ক থাকে। অন্য গবেষকরা দাবি করেন যে ফ্রিগেটবার্ডরা দিনে প্রায় ৪৫ মিনিট ঘুমায়। তবে এটি ১০ সেকেন্ডের পর্বে বিভক্ত।

news24bd.tv / নকিব