সম্মানিত ও অসম্মানিত ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে যাচাই হবে ক্বিয়ামতের দিন

সম্মানিত ও অসম্মানিত ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে যাচাই হবে ক্বিয়ামতের দিন

Other

কোরআন টাইম সূরা ফাজর
এই সূরাটিতে মোটাদাগে তিনটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে:- 
এক- পাঁচটি বস্ত্তর শপথ করে আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি বান্দার সকল বিষয়ে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। এর প্রমাণ হিসাবে তিনি বিগত যুগের দুর্ধর্ষ ও শক্তিশালী তিনটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার কাহিনী পেশ করেছেন (১-১৪ আয়াত)।  


দুই- সম্পদের প্রাচুর্য বা অপ্রাচুর্যের মধ্যে কারো সম্মান বা অসম্মান নির্ভর করে না। বরং বান্দাকে সৎকাজের তাওফীক দান করাই হলো আল্লাহর পক্ষ হতে তাকে সম্মানিত করা।

এবং এর বিপরীতটার অর্থ হল তাকে অসম্মানিত করা । অতঃপর অকৃতজ্ঞ লোকদের চারটি মন্দ আচরণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে (১৫-২০ আয়াত)।  


তিন- সম্মানিত ও অসম্মানিত ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে যাচাই হবে ক্বিয়ামতের দিন। যেদিন আল্লাহ সকলের সম্মুখে উপস্থিত হবেন এবং বান্দাকে তার কর্মের যথাযোগ্য প্রতিদান ও প্রতিফল দান করবেন (২১-৩০ আয়াত)।

(১) وَالْفَجرِ
ওআ ল্ ফাজরি
শপথ ফজরের 
শপথের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে প্রথম বিষয় হচ্ছে ফজর অর্থাৎ সোবহে-সাদেকের সময়, যা ঊষা নামে খ্যাত।  

(২) وَلَيَالٍ عَشْرٍ
ওআ লাইয়া-লিন্ ‘আশ্রিঁও।  
শপথ দশ রাত্রির 
শপথের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে দশ রাত্রি। তাফসীরবিদদের মতে, এতে যিলহজের দশ দিন বোঝানো হয়েছে [ইবনে কাসীর]। যা সর্বোত্তম দিন বলে বিভিন্ন হাদীসে স্বীকৃত।  

(৩) وَالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ
ওআ শ্শাফ্‘ইঅল্ওয়াত্রি।  
শপথ জোড় ও বেজোড়ের 
কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, জোড় বলতে সমগ্র সৃষ্টজগৎ বোঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। যথা: কুফর ও ঈমান, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য, আলো ও অন্ধকার, রাত্রি ও দিন, শীত-গ্ৰীষ্ম, আকাশ ও পৃথিবী, জিন ও মানব এবং নর ও নারী। এগুলোর বিপরীতে বিজোড় একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার সত্তা। [ইবনে কাসীর; ফাতহুল কাদীর] 

(৪) وَاللَّيْلِ إِذَا يَسْرِ
ওআ ল্লাইলি ইযা-ইয়াস্র্।
শপথ রাত্রির, যখন তা অতিক্রান্ত হতে থাকে।
অর্থাৎ রাত্রির শপথ, যখন সে চলতে থাকে তথা খতম হতে থাকে। [ইবনে কাসীর]

(৫) هَلْ فِيْ ذَلِكَ قَسَمٌ لِّذِيْ حِجْرٍ
হাল্ ফী যা-লিকা ক্বাসামুল্লিযী হির্জ্ব।  
নিশ্চয়ই ঐসবের মধ্যে বড় ধরনের শপথ রয়েছে জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য।  
উপরোক্ত পাঁচটি শপথ উল্লেখ করার পর আল্লাহ তা'আলা গাফেল মানুষকে চিন্তাভাবনা করার জন্যে বলেছেন, “এতে কি জ্ঞানী ব্যক্তিরা শপথ নেয়ার মত গুরুত্ব খুঁজে পায়?”

(৬) أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ 
আলাম্তার কাইফা ফা‘আলা রব্বুকা বি‘আ-দিন্ ।
আপনি কি দেখেন নি আপনার প্রভু কি আচরণ করেছিলেন ‘আদ গোত্রের সাথে? 
 ‘আদ গোত্রের প্রতি হূদ (আঃ)-কে নবী বানিয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা তাঁকে মিথ্যা ভাবল। অবশেষে প্রচন্ড ঝড়ো-হাওয়ার কঠিন আযাব তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলল। নিরবচ্ছিন্নভাবে সাত রাত এবং আট দিন পর্যন্ত এই আযাব তাদের উপর অটল ছিল (সূরা হাক্কাহ ৬-৮ আয়াত)। যা তাদেরকে তছনছ করে ফেলেছিল।

(৭) إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ
ইরামা যা-তিল্ ‘ইমা-
ইরাম গোত্রের প্রতি। যারা ছিল উঁচু স্তম্ভসমূহের মালিক।
ইরাম ‘আদ জাতির পিতামহের (দাদার) নাম ছিল। তারা অত্যন্ত দীর্ঘকায় জাতি ছিল। যেহেতু তারা অট্টালিকায় বাস করত, সেহেতু অট্টালিকা নির্মাণ করতে স্তম্ভ নির্মানের প্রয়োজন হতো। কুরআন মজীদের অন্য জায়গায় তাদের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে: হূদ (আঃ) তাদেরকে বললেন, “তোমাদের এ কেমন অবস্থা, প্রত্যেক উচু জায়গায় অনৰ্থক একটি স্মৃতিগৃহ তৈরি করছে এবং বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছে, যেন তোমরা চিরকাল এখানে থাকবে” [শু'আরা: ১২৮–১২৯]। অন্য আয়াতে আছে, “আর তারা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করত নিরাপদ বাসের জন্য। ” [হিজর: ৮২]

(৮) الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ
আল্লাতী লাম্ ইয়ুখ্লাক মিছ্লুহা- ফিল্ বিলা-দি।  
যাদের ন্যায় অন্যকোন জনপদসমূহে সৃষ্টি করা হয়নি।
এমন সুদীর্ঘ দেহী, বলবান ও শক্তিশালী আর কোন জাতি সৃষ্টি হয়নি। এই জাতি গর্ব করে বলত যে, ‘আমাদের থেকে অধিক শক্তিশালী আর কারা আছে। ’ (হা -মীম সাজদাহ; ১৫ )

(৯) وَثَمُودَ الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ
ওআ ছামূদা ল্লাযীনা জ্বা-বুছ্ছোয়াখ্রা বিল্ওয়া-দি।  
এবং (কি আচরণ করেছিলেন) সামূদ গোত্রের সাথে? যারা পাথর কেটে উপত্যকায় গৃহ নির্মাণ করেছিল।  
সামূদ গোত্র স্বালেহ (আঃ)-এর জাতি ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পাথর খোদাই কাজের বিশেষ দক্ষতা ও ক্ষমতা দান করেছিলেন। এমনকি তারা পাহাড়কে কেটে নিজেদের বাসস্থান নির্মাণ করত। যেমন কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘‘তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ। ’’ ( শুআরা; ১৪৯ )

(১০) وَفِرْعَوْنَ ذِي الْأَوْتَادِ
ওআ র্ফি‘আউনা যিল্ আওতা-দি।
এবং (কি আচরণ করেছিলেন) ফেরাঊনের সাথে? যে ছিল বহু কীলকের অধিপতি।  
ফিরআউন যার উপর ক্রোধান্বিত হত, তার হাত-পা চারটি পেরেকে বেঁধে অথবা চার হাত পায়ে পেরেক মেরে রৌদ্ৰে শুইয়ে রাখত। বা কোন গাছের সাথে পেরেক মেরে রাখত। অথবা পেরেক মেরে দেহের উপর সাপ-বিচ্ছু ছেড়ে দিত। কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেন, এখানে তার সেনাবাহিনীকেই কীলকের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং সেই অর্থে কীলকধারী মানে সেনাবাহিনীর অধিকারী। কারণ কীলকের সাহায্যে তাবু মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাছাড়া এর অর্থ সেনা দলের সংখ্যাধিক্যও হতে পারে। এর দ্বারা তার অত্যাচার ও যুলুমবাজির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেহেতু সে কীলক বা পেরেক দ্বারা মানুষকে শাস্তি দিত।  

(১১) الَّذِينَ طَغَوْا فِي الْبِلَادِ 
আল্লাযীনা ত্বোয়াগাও ফিল্ বিলা-দি
যারা দেশে সীমালংঘন করেছিল।  

(১২) فَأَكْثَرُوا فِيهَا الْفَسَادَ
ফা আক্ছারূ ফী হাল্ ফাসা-দা।  
অতঃপর সেখানে তারা বহু অনাচার করেছিল।

(১৩) فَصَبَّ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سَوْطَ عَذَابٍ 
ফাছোয়াব্বা ‘আলাইহিম্ রব্বুকা সাওত্বোয়া- ‘আযা-বিন্।  
ফলে আপনার পালনকর্তা তাদের উপরে শাস্তির কশাঘাত হানেন।  
উক্ত তিনটি সম্প্রদায়ের উপরে ইতিহাসের কঠোরতম শাস্তি নাযিল হয়েছিল। ‘আদ ও সামূদ জাতি যেমন প্রবল ঝঞ্ঝাবায়ু এবং প্রচন্ড আওয়াজসহ ভূমিকম্পে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ফেরাঊন তেমনি তার সৈন্য-সামন্ত ও লোক-লস্করসহ চোখের নিমিষে সাগরে ডুবে ধ্বংস হয়েছিল। অন্যদিকে মজলুম বনি ইসরাঈলগণ মূসা (আঃ)-এর নেতৃত্বে মুক্তি পেয়েছিল (বাক্বারাহ ২/৪৯-৫০; ইউনুস ১০/৯০-৯২)।

(১৪) إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
ইন্না রব্বাকা লাবিল্ র্মিছোয়া-দ্।
নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
এর দ্বারা তিনি বান্দাকে সাবধান করেছেন। তিনি প্রতিটি মানুষের কাজের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন, যাতে তাকে যথার্থ প্রতিদান ও প্রতিফল দিতে পারেন।

(১৫) فَأَمَّا الْإِنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَّمَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَكْرَمَنِ 
ফাআম্মাল্ ইন্সা-নু ইযা-মাব্তালা-হু রব্বুহূ ফাআক্রমাহূ অনা‘আমাহূ ফাইয়াকু লু রব্বী য় আক্রমান্।  
কিন্তু মানুষ এরূপ যে, যখন তার প্রতিপালক তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তাকে সম্মানিত করেন ও সুখ-সম্পদ দান করেন, তখন সে বলে যে, আমার প্রভু আমাকে সম্মানিত করেছেন।  

(১৬) وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَهَانَنِ 
ওআম্মা য় ইযা-মাব্তালা-হু ফাক্বদার ‘আলাইহি রিয্ক্বহূ ফাইয়াকুলু রব্বী য় আহা-নান্।  
পক্ষান্তরে যখন তিনি তাকে পরীক্ষায় ফেলেন এবং তার রূযী সংকুচিত করেন, তখন সে বলে যে, আমার প্রভু আমাকে হেয় করেছেন।  
এখানে বর্ণিত দু’টি আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে যে। দুনিয়াতে মানুষকে দেয়া সম্মান ও অসম্মান; সচ্ছলতা বা অসচ্ছলতা; আল্লাহর নিকটে কারো প্রিয় বা অপ্রিয় হওয়ার নিদর্শন নয়। বরং সবকিছু হয়ে থাকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য; আল্লাহর ফায়সালা ও তাঁর পূর্ব নির্ধারণ অনুযায়ী। প্রকৃত মুমিন বান্দা সচ্ছল ও অসচ্ছল, কষ্ট ও আনন্দ, উভয় অবস্থায়ই সবর করে ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। উভয় অবস্থায় আল্লাহর নিকটে সম্মানিত হওয়ার মানদন্ড হলো আল্লাহভীরুতা ও আল্লাহর প্রতি পূর্ন আনুগত্য। কখনো সম্মানিত, কখনো অসম্মানিত করে; কখনো সচ্ছল, কখনো অসচ্ছল করে আল্লাহ তার বান্দাকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ দেখেন, সে সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যের উপরে টিকে থাকে কি-না। সে কি পরীক্ষায় ভীত হয়ে শয়তানের ফাঁদে পা দেয়; নাকি সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি সুদৃঢ় থাকে।

(১৭) كَلَّا بَلْ لَا تُكْرِمُونَ الْيَتِيمَ 
কাল্লা-বাল্ লা-তুক্রিমূনাল্ ইয়াতীমা।  
কখনোই এরূপ নয়। বরং তোমরা ইয়াতীমকে সম্মান কর না।  
(১৮) وَلَا تَحَاضُّونَ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ
ওআ লা-তাহা-দ্বদুনা ‘আলা-ত্বোয়া‘আ-মিল্ মিস্কীনি।
এবং অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না।  
(১৯) وَتَأْكُلُونَ التُّرَاثَ أَكْلًا لَمًّا 
ওআ তাকুলূ নাত্ তুরা-ছা আক্লাল্লাম্মাঁও।  
আর তোমরা মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ যথেচ্ছভাবে ভক্ষণ করে থাক, 

(২০) وَتُحِبُّونَ الْمَالَ حُبًّا جَمًّا 
ওআ তুহিব্বুনাল্ মা-লা হুব্বান্ জাম্মা-।  
এবং তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যধিক ভালবাসো।
(২১) كَلَّا إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا 
কাল্লা য় ইযা-দুক্কাতিল্ র্আদু দাক্কান্ দাক্বঁও।  
এটা কখনই ঠিক নয়। (স্মরণ কর) যেদিন পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে, 
উপরে বর্ণিত চারটি মন্দ অভ্যাসের নিন্দা করে বলা হয়েছে যে, এগুলি কখনই ঠিক নয়। কেননা ইয়াতীমকে সম্মান না করা, মিসকীনকে অন্নদান না করা, অন্যের হক না দিয়ে ওয়ারিশী সম্পত্তি যথেচ্ছভাবে ভক্ষণ করা ও অত্যধিক ধনলিপ্সার লজ্জাকর পরিণতি হবে সেদিন, যেদিন পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে। অর্থাৎ যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।

(২২) وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا 
ওআজ্বা-য়া রব্বুকা অল্ মালাকু ছোয়াফ্ফান্ ছোয়াফ্ফা-।
এবং তোমার পালনকর্তা আসবেন ও ফেরেশতামন্ডলী সারিবদ্ধভাবে থাকবে, 
মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) কর্তৃক মাক্বামে মাহমূদে প্রথম শাফা‘আত কবুল হবার পর সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে চূড়ান্ত বিচার ও ফায়ছালা দেওয়ার জন্য আল্লাহপাক যেভাবে ইচ্ছা আগমন করবেন। এসময় ফেরেশতাকুল সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান থাকবে’ (ইবনে কাসীর)।
‘আল্লাহ কিভাবে আগমন করবেন, তার প্রকৃতি কেমন হবে। এজন্য আরশ খালি হয়ে যাবে কি-না ইত্যাদি বিষয় একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না’। কেননা ‘তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই, তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন’ (শূরা ৪২/১১)।  
অতএব তিনি কিভাবে আসবেন, সেটা একান্তই তাঁরই ব্যাপার। এখানে কল্পনার কোন অবকাশ নেই। তিনি সেদিন কিভাবে আসবেন, এধরনের প্রশ্ন করাটা আল্লাহর প্রতি আদবের খেলাফ।

(২৩) وَجِيءَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى
ওআ জ্বী-য়া ইয়াওমায়িযিম্ বিজ্বাহান্নামা ইয়াওমায়িযিঁই ইয়াতাযাক্কারুল্ ইন্সা-নু অ আন্না-লাহুয্ যিক্র-।  
যেদিন জাহান্নামকে আনা হবে। যেদিন মানুষ (তার কৃতকর্ম) স্মরণ করবে। কিন্তু তখন এই স্মৃতিচারণ তার কি কাজে আসবে? 
ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের ভয়ংকর রূপ দেখে পাপীদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে এবং তারা তাদের বিগত জীবনের পাপসমূহের কথা স্মরণ করবে ও হায় হায় করতে থাকবে। কিন্তু তখন এই বিলাপে কোন কাজ হবে না। আগামীতে যেটা হবে, সেটা আগেই আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন, যাতে পাপীরা মৃত্যুর আগেই পাপ থেকে ফিরে আসে ও তওবা করে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চায়।

(২৪) يَقُولُ يَا لَيْتَنِي قَدَّمْتُ لِحَيَاتِي 
ইয়াকুলু ইয়া-লাইতানী ক্বদ্দাম্তু লিহাইয়া-তী-।  
সেদিন সে বলবে, হায়! যদি আমার এই (পরকালীন) জীবনের জন্য অগ্রিম কিছু (নেক আমল) পাঠিয়ে দিতাম!  
এই সময় কাফের ও পাপী মানুষ কেবলই অনুতাপ করবে, আর বলবে হায়! দুনিয়ায় থাকতে যদি দৃঢ় বিশ্বাস করতাম ও সে অনুযায়ী নেক আমল করতাম, তাহলে আজ তার সুফল পেতাম। উল্লেখ্য যে, অবিশ্বাসী কাফেরও দুনিয়াতে অনেক সময় সৎকর্ম করে থাকে। কিন্তু তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। কারণ সে তো আল্লাহকেই বিশ্বাস করত না। ফলে অবিশ্বাসী হওয়ার কারণে তার কোন সৎকর্ম ঐদিন কবুল করা হবে না’ (তওবা ৯/১৭; কাহফ ১৮/১০৩-১০৫)। যেমন পিতাকে অস্বীকারকারী পুত্রের কোন সৎকর্ম পিতার নিকটে গৃহীত হয় না।
(২৫) فَيَوْمَئِذٍ لَا يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌ 
ফা ইয়াওমায়িযিল্লা-ইয়ু‘আয্যিবু ‘আযা-বাহূ য় আহাদুঁও।  
অতঃপর সেদিন আল্লাহর শাস্তির ন্যায় শাস্তি কেউ দিবে না।  
অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন অবাধ্যদের শাস্তি আল্লাহ যেভাবে দিবেন, তার চাইতে কঠিনভাবে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা অন্য কারোই নেই। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘এবং আমার শাস্তিও অতীব যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (হিজর; ৫০)।

(২৬) وَلَا يُوثِقُ وَثَاقَهُ أَحَدٌ
ওআ লা-ইয়ুছিকু অছা-ক্বাহূ য় আহাদ্।  
এবং তাঁর বাঁধনের ন্যায় শক্ত বাঁধন কেউ দিবে না।  
অর্থাৎ কাফের, ফাসেক, অত্যাচারী ও পাপীদের লৌহ-শৃংখলে কঠিনভাবে বেঁধে যে শাস্তি দেওয়া হবে। অতঃপর জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হবে, সে শাস্তির কোন তুলনা নেই। দুনিয়ার কঠিন বাঁধন ক্বিয়ামতের দিনের ঐ শক্ত বাঁধনের শাস্তির তুলনায় কিছুই নয়।
(২৭) يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ 
ইয়া য় আইইয়াতুহান্নাফ্সুল্ মুত্ব্ মায়িন্নাতু।  
হে প্রশান্ত আত্মা! 
যে অন্তর কোন ভীতি বা দুঃখে দিশাহারা হয় না। বরং আল্লাহকে স্মরণ করে সর্বদা স্থির, প্রশান্ত ও দৃঢ়চিত্ত থাকে। সেটাই প্রশান্ত আত্মা। এখানে মুমিনদের হৃদয়কে ‘নফ্সে মুত্বমাইন্নাহ’ বা প্রশান্ত আত্মা বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

(২৮) ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً 
ইর্জি‘ঈ য় ইলা-রব্বিকি র-দ্বিয়াতাম্ র্মাদ্বিয়্যাহ্।  
ফিরে চলো তোমার প্রভুর পানে, সন্তুষ্ট চিত্তে ও সন্তোষভাজন অবস্থায়।  
অর্থাৎ হে প্রশান্ত আত্মা! যেখান থেকে তুমি এসেছিলে, সেখানেই ফিরে চল প্রশান্তচিত্তে। এটি নেককার ব্যক্তির মৃত্যুকালে বলা হবে। প্রশান্ত আত্মা এজন্য বলা হয়েছে যে, তা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয় মৃত্যুকালে, পুনরুত্থানকালে এবং হাশরের দিবসে।  

(২৯) فَادْخُلِي فِي عِبَادِي
ফাদ্খুলী ফী ই’বা-দী।  
অতঃপর প্রবেশ কর আমার বান্দাদের মধ্যে।  

(৩০) وَادْخُلِي جَنَّتِي
ওআ দ্খুলী জ্বান্নাতী।
এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।
‘এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে’। এটি ক্বিয়ামতের দিন বিচার শেষে বলা হবে। ‘আমার বান্দাদের মধ্যে’ অর্থাৎ ‘আমার নেককার বান্দাগণের মধ্যে’। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, অবশ্যই আমি তাদের প্রবেশ করাবো সৎকর্মশীলদের মধ্যে’ (আনকাবূত ২৯/৯)।

হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকেও নেককার বান্দাগণের সাথে জান্নাতে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন!

লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ।

news24bd.tv/আলী