প্রতিবেশী কারা, ইসলামে তাদের অধিকার ও মর্যাদা

প্রতিবেশী কারা, ইসলামে তাদের অধিকার ও মর্যাদা

অনলাইন ডেস্ক

সাধারণভাবে বাড়ির আশপাশে যারা বসবাস করে, তাদের প্রতিবেশী বলা হয়। তবে কখনও কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে নিকটজন, যিনি তার খবরাখবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি জানেন। তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে।

প্রতিবেশীর ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন, ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের তাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে যথাসাধ্য বিনয় আচরণ প্রদর্শন করতে এবং তাদের অসুবিধা হতে পারে এমন কোনো কাজ সৃষ্টি না করার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেশী কারা? কতদূর এর সীমা? এ প্রশ্নের জবাবে হজরত হাসান (রা.) বলেছেন, 'নিজের ঘর থেকে সামনে ৪০ ঘর, পেছনে ৪০ ঘর, ডানে ৪০ ঘর এবং বাঁয়ে ৪০ ঘরের অধিবাসী হচ্ছে প্রতিবেশী। '

আয়েশা (রা.) বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, 'জিব্রাইল আমাকে সবসময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হলো, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন' (বুখারি ৬০১৪)।

 

পবিত্র কোরআনে মুসলমানদের প্রতিবেশীর দৈনন্দিন সব প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায় আর পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে (আদাবুল মুফরাদ)।  

আবু শুরাইহ থেকে আরেকটি হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে- রাসুল (সা.) বলেন, 'আলল্গাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। আলল্গাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। আলল্গাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। ' তখন হজরত মুহাম্মদকে (সা.) প্রশ্ন করা হলো, হে আলল্গাহর হাবিব, কে সে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদবোধ করে না, সে ব্যক্তি ইমানদার নয় (বুখারি :৫৫৫৭)।

আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর উপাসনা করো আর কোনো কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীর প্রতি সদ্ব্যবহার করো (নিসা :৩৬)।  

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, 'হে আল্লাহর রাসুল, আমার দু'জন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের মধ্যে কার কাছে হাদিয়া পাঠাব?' তিনি বললেন, 'যার দরজা তোমার বেশি নিকটবর্তী, তার কাছে পাঠাও (বুখারি :৬০২০)। আবার রাসুলের (সা.) গর্বিত প্রতিবেশীরাও রাসুলের প্রতি অনেক উদার ছিলেন।  

আয়েশা (রা.) বলেন : দুই মাস আমাদের চুলায় আগুন জ্বলেনি; কয়েকটি আনসার পরিবার রাসুলের (সা.) প্রতিবেশী ছিলেন; তাদের কিছু দুধালো উটনি ও বকরি ছিল। তারা রাসুলের (সা.) জন্য দুধ হাদিয়া পাঠাত। তিনি আমাদের তা পান করতে দিতেন (বুখারি :২৫৬৭)।

তোমার ঘরের দেয়াল উঁচু করে তার বাতাস বন্ধ করবে না। ফল ক্রয় করলে তাকে পাঠিয়ে দাও, না পারলে গোপন রাখো এবং নিজ সন্তানদের ফল হাতে বের হতে দিয়ো না, যেন প্রতিবেশীর সন্তান দুঃখ না পায়। নিজের রান্নাঘরের ধোঁয়া দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়ো না। কিন্তু তাকে যদি খাদ্য দাও, তাহলে অসুবিধা নেই' (তাবারানি)।  

আরও পড়ুন:

 আমার একটাই কথা, মারামারি করবেন তো খবর আছে: মাশরাফী (ভিডিও)

 সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সরকার: ৫৭ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

 ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান জানালো কানাডা

 রেস্তোরাঁর আড়ালে সিসা সেবনের ব্যবসা চালাচ্ছিল ওমর সানি-মৌসুমীর ছেলে

এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, কোনো প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে দেয়ালে কাঠ গাড়তে নিষেধ না করে। আবু হুরাইরাহ (রা.) বললেন, কী ব্যাপার, আমি তোমাদের রাসুলের (সা.) সুন্নাহ থেকে মুখ ফেরাতে দেখছি! আলল্গাহর কসম, নিশ্চয় আমি এ সুন্নাহকে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব) (বুখারি :২৪৬৩)।

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার বা কর্তব্যের বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো:প্রতিবেশীকে সালাম দেওয়া, তার সালামের উত্তর দেওয়া, কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং তার সেবা-শুশ্রূষা করা, বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে দাওয়াত দেওয়া এবং তার দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা।

news24bd.tv নাজিম