বিটুমিন আমদানির আড়ালে ১০ বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার

Other

বিটুমিন আমদানির নামে অর্থ পাচারের ফাঁদ। অনুসন্ধান বলছে, গত ১০ বছরে বিটুমিন আমদানির আড়ালে পাচার হয়েছে, প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। যোগাযোগ বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানিতে উন্নতমানের ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের ঘোষণা থাকলেও পরীক্ষায় দেখা গেছে, সেগুলো নিম্নমানের আলকাতরা সমতুল্য। বেশি দামের পণ্য ঘোষণা দিয়ে, কৌশলে আনা হচ্ছে কমদামের পণ্য, আর এই সুযোগেই ওভারইনভয়েসিং এর মাধ্যমে, প্রতিবছর পাচার হচ্ছে কমপক্ষে হাজার কোটি টাকা- এমন অভিমত অর্থনীতিবিদদের।

অর্থপাচার বন্ধে, অবশ্যই আমদানিকারকদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতেই হবে।

বিটুমিন আমদানির আড়ালে কিভাবে মানি লন্ডারিং হচ্ছে, সেটা বুঝতে হলে, আগে জানা দরকার কী আমদানির কথা বলে কী ধরণের বিটুমিন আমদানি করা হচ্ছে। আর তার মান কেমন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ৬০-৭০ গ্রেড হলো, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আদর্শ বিটুমিন।

এই বিটুমিন রাস্তায় গাড়ির অধিক চাপে-তাপে গলেও যাবে না আবার ঠান্ডায় ফেটেও যাবে না।

আমদানি ঘোষণায় বলা হচ্ছে, বিটুমিন আসছে ৬০-৭০ গ্রেডের। কিন্তু আসলে কী? এই পরীক্ষার ফলাফলে সেটা পরিষ্কার।  আমদানি করা এই বিটুমিনের গ্রেড ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় পাওয়া যায় ১০২। যেটাকে বিশেষজ্ঞরা আলকাতরা বলছেন। বিটুমিনের একটি ড্রামে বিটুমিনাস উপাদান থাকার কথা কমপক্ষে ৯৯ শতাংশ। কিন্তু আমদানি করা বিটুমিনে আছে মাত্র ৯২ শতাংশ। মূলত আমদানি ঘোষণার সাথে দেশে আসা এসব বিটুমিনের মিল নেই।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলছেন, যে ধরণে বিটুমিন আসার কথা সে ধরনের বিটুমিন আসছে না। যেটা আসছে সেটার মধ্যে বিটুমিনের পরিমাণ অনেক কম। নজরদারির অভাবে এ ধরনের সস্তা বিটুমিন দেয়া হচ্ছে আমাদের।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৬১ টন বিটুমিন আমদানি করেছে ৪২টি প্রতিষ্ঠান। যার মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা। বাল্ক এবং ড্রামে আমদানিকৃত এসব বিটুমিন কাস্টমস থেকে খালাস করা হয় ৬০-৭০ গ্রেড ঘোষণা দিয়ে।

অনুসন্ধান ও বিশেষজ্ঞদের মতামত বলছে, ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনের ঘোষণায় অনেক ক্ষেত্রে আসছে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন।

আন্তর্জাতিক বাজার দর যাচাই করে দেখা গেছে, ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিনের বাজার মূল্য ১৫০ থেকে ১৮০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। গড়ে ১৬০ ডলার বা ১৩ হাজার ৬০০ টাকা দর বিবেচনায় নয় মাসে আমদানিকৃত বিটুমিনের প্রকৃত মূল্য দাঁড়ায় ৪৩৪ কোটি ৭৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। অথচ নয় মাসে আমদানিকার করা বিদেশে পাঠিয়েছেন প্রায় এক হাজার ৫২২ কোটি টাকা।

অর্থ্যাৎ প্রতি টন বিটুমিনের বিপরীতে বিদেশে পাঠানো হয় বাড়তি ৩৪ হাজার টাকা। ফলে বিটুমিনের প্রকৃত মূল্যের বাইরে বাড়তি প্রায় এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ১০ বছরে যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলছেন, যে টাকা দিয়ে বিটুমিন কেনা হয় তার দ্বিগুণ টাকা দেখানো হয়। ফলে বাকি অর্ধেক টাকা পাচার করা হল বিদেশে। আর আমাদের দেশে যে মানের বিটুমিন দিয়ে কাজ করা হয় পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই মানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয় না।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি করা নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারে ত্রিমুখী ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়, অন্যদিকে মানি লন্ডারিং, আর ছয় মাসের নতুন রাস্তার বেহাল দশা ও জনভোগান্তি।

news24bd.tv আহমেদ

সম্পর্কিত খবর