ক্ষোভ প্রকাশের মাঝেও প্রজ্ঞা থাকতে হবে

ক্ষোভ প্রকাশের মাঝেও প্রজ্ঞা থাকতে হবে

Other

দাবি করার মাঝেও জ্ঞানের - প্রজ্ঞার প্রতিফলন থাকা লাগে। অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে তা থাকা তো অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করি।  

দেখলাম কিছু ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি জানিয়ে আন্দলন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।  

সাদা চোখে ব্যাপারটাকে মনে হবে ঠিকই তো আছে।

একটু গভীরে দেখলেই বুঝা যাবে ব্যাপারটার ঝামেলা কোথায়।

ছাত্র ছাত্রীদের দাবি করা উচিত ছিলো তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার। অর্থাৎ পরীক্ষা এসাইনমেন্ট সব ঠিকভাবে নিয়ে তাদের সেশন জটের ঝামেলা থেকে বের করে আনার। সেটা অনলাইন- অফলাইন- মহাকাশলাইন যেভাবেই হোক।

বিশ্ববিদ্যালয় বুঝবে কীভাবে সেশনজট কমাবে। কীভাবে ডিগ্রী দেবে। তারা তা না করে মোটা দাগে বিশ্ববিদ্যালয় আর হল খোলার দাবি করছে। ঢাবির ছাত্রদের কাছ থেকে এমন আশা করা যায় না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু একদিনের জন্যও সেশন জটে পরেনি। সেখানকার শিক্ষকদের প্রায় সকলের চোখের পাওয়ার বদলে গিয়েছে ( আমার নিজের দুবার চশমার পাওয়ার বদল করতে হয়েছে) অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা আর এসাইনমেন্ট দেখতে দেখতে। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী এক দিনের সেশন জটেও পরেনি।

অনেক জায়গায় দেখলাম শিক্ষকরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন বলে ছাত্র ছাত্রীরা বেশ সমালোচনা করছেন। অথচ আমি যতটা জানি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইনে ক্লাস চলছিলো। পরীক্ষার ব্যাপারেই ভেজাল । তাহলে বসে বসে বেতন নিচ্ছেন এর অভিযোগ একই সাথে ভিত্তিহীন এবং ছোট মানসিকতার পরিচয়ের বাহক।

ছাত্রছাত্রীরা সমালোচনা করতে পারতেন যে কেনো ১৫ মাসেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার মত সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে না? কেনো শিক্ষকরা এবং প্রশাসন পরীক্ষা নেওয়ার আধুনিক উপায়গুলো ব্যাবহার করে ছাত্র ছাত্রীদের মূল্যবান সময় রক্ষা করলো না? কেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মতো না ভেবে সাধারন বেতনভুক কর্মকর্তাদের মতো ভাবধারা লালন করলো? 

সমালোচনা এমন হওয়া দরকার যেখানে তাদের প্রজ্ঞা প্রকাশ পাবে।  
অনলাইনে পরীক্ষার কথা আসলেই কিছু ছাত্রছাত্রী -শিক্ষক - প্রশাসন গরীব ছাত্রদের ব্যাপারে গল্প শোনায় নিজেদের সুবিধার জন্য। একটু থামেন আর যুক্তি দিয়ে বিচার করেন।  

আমরা বিবিএ তে ভর্তি হয়েছিলাম ১৮০ জনের মতো। দুটো সেকশনে। গড় ৯০ জন করে প্রত্যেক সেকশনে। ক্লাসে কার কতটুকু আর্থিক সামর্থ তা ক্লাসের বন্ধু বান্ধবরা এবং সি আর রা জানতো। তাই যদি আমাদের সময়কে এখনকার ফ্রেমে বসাই, তাহলে ১৮০ জনের মাঝে বড়জোর ১০ জনের সামর্থ ছিলো না স্মার্টফোন চালাবার। এটাকে আরো বাড়িতে ১০% মার্জিন ধরলে ১৮ জন হয়।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০০০ শিক্ষার্থীর ১০% হয় ৩০০০। আরো বাড়িয়ে ধরলে ২০% এ হয় ৬০০০ শিক্ষার্থী। এই ৬০০০ শিক্ষার্থাকে ১০০০০ টাকা করেও যদি একটা স্মার্ট ফোন দেওয়া হয় তাহলে খরচ হবে মাত্র ৬ কোটি টাকা। মাত্র বলছি কারণ আমার ধারনা এই টাকা ঢাবির ৩ মাসের বিদ্যুৎ বিলের সামন। আর সত্যিকার অর্থে এত টাকাও লাগবে না। কিছু শিক্ষার্থীর টাকা বেশি লাগতো পারে সেটা ভেবেই গড়ে বলা।
এর পরে কানেক্টিভিটি এবং বাকি ব্যাপার যা আসলে ম্যানেজ করা সমস্যা নয়।

কিন্তু এই দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের বার বার নিজের স্বার্থ হাসিলে ব্যাবহার করছে ছাত্র ছাত্রীরা নিজে। অনলাইনে পরীক্ষার ব্যাপারে অনিহা দেখিয়ে। আর এর সুবিধা নিয়েছে শিক্ষক প্রশাসন। তবে নিঃসন্দেহে দায় বেশী শিক্ষক প্রশাসনের। কারণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়ীত্ব তাদের।

হল খোলার দাবিতে যে আন্দলন তা আমার মতে অযৌক্তিক। অনেকেরই এই মতো পছন্দ হবে না। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। হল খুললে, খোদা না করুক কিছু ছাত্র অসুস্থ হলে বা মারা গেলে এই হল খোলার দাবি করা ছাত্র ছাত্রীরাই আন্দলনে নামবে। শুধু বাংলাদেশ না সারা পৃথিবীতেই অন ক্যাম্পাস ক্লাস প্রায় বন্ধ। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় উপায় বের করেছে অফ ক্যাম্পস ক্লাসের। আমরা এটা করছি না। অথচ এটা নিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা আন্দোলন করে না।  

অনেকে এখানে আবার গরীব ছাত্রছাত্রীদের টেনে এনে মানবিক গল্প বলবেন। হল বন্ধ তাই প্রাইভেট বন্ধ। প্রাইভেট পড়াবার টাকাতে সংসার চালাতে হয়। খুবই মানবিক এবং বাস্তব কথা। কিন্তু ঠিক যৌক্তিক না।  

১. বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে সংসার চলেছে। সে এখন ঢাকাতে নেই। তাই কষ্ট হলেও সংসার চলবে। ২. বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ীত্ব শিক্ষার সুবিধা নিশ্চিত করা ( যদিও সেটাও ঠিক মতো বিশ্ববিদ্যালয় করে না) সংসারের দায়ীত্ব নেওয়া না। তাই এই অযুহাতে হল খোলার দাবী অযৌক্তিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী হলে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে জানতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা আর কখনই ২০২০ এর আগের মত থাকবেনা। এটা ছাত্রছাত্রী শিক্ষক প্রশাসন যত দ্রুত বুঝবেন ততই মঙ্গল।

শুরুর কথাটিই আবার বলি, দাবি করার মাঝেও জ্ঞান থাকতে হবে। সমালচনার মাঝে, ক্ষোভ প্রকাশের মাঝেও প্রজ্ঞা থাকতে হবে।

রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী: সহকারি অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা।

(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv তৌহিদ