গর্ভপাত : অজান্তেই বদলে দিলেন আমেরিকার ইতিহাস

গর্ভপাত : অজান্তেই বদলে দিলেন আমেরিকার ইতিহাস

Other

ডালাসের এক সহায়সম্বলহীন হতদরিদ্র তরুণী আমেরিকার ইতিহাসে দুটো যুগান্তকারী পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছিলো। এই দুটো ঘটনাই ঘটেছিলো তার অজান্তে।  

এই তরুণীর নাম নর্মা ম্যাককরভি। আমেরিকার ইতিহাস পাল্টে দেবার কোনো ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাই তার ছিলো না।

ছোট্ট একটা চাওয়া ছিলো তার। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভবতী হয়ে গিয়েছিলো সে। এই গর্ভপাত করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলো সে।
সালটা ১৯৭০।
আমেরিকায় গর্ভপাত তখন অবৈধ। এর আগেও দুটো সন্তানের জন্ম দিয়েছে নর্মা। তাদের খাওয়ানো এবং পরানোর সামর্থ্য তার ছিলো না। ফলে, দুই সন্তানকেই দত্তক দিয়ে দিতে বাধ্য হয় সে। তার তৃতীয় সন্তানের ভাগ্যেও একই দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করছে, এটা উপলব্ধি করে গর্ভপাতের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে সে। কিন্তু, আইনগতভাবে গর্ভপাত অবৈধ হওয়ায় তার পক্ষে সেটা করা সম্ভব ছিলো না।

নর্মার পক্ষে আদালতে গিয়ে আইন পরিবর্তনের পক্ষে একা লড়াই করা সম্ভব ছিলো না। তার ভাগ্য ভালো। গর্ভপাতের পক্ষে যে সমস্ত শক্তিগুলো কাজ করছিলো তাদের মধ্যের একটা শক্তিশালী অংশ নর্মাকে সামনে রেখে এগিয়ে আসে গর্ভপাতকে বৈধ করার প্রচেষ্টা নিয়ে।

ডালাসে মামলা ঠুকে দেয় নর্মা। এর বিপক্ষে দাঁড়ায় ডালাস কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি হেনরি ওয়েড। সেখান থেকে এই মামলা গড়াতে গড়াতে চলে আসে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গনে। নর্মার নাম গোপন রাখার স্বার্থে তাকে নকল নাম দেওয়া হলো। সেটা হচ্ছে জেন রো। এই মামলা বিখ্যাত হয়ে গেলো রো বনাম ওয়েড নামে।  

১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার রায় দিলো। মামলায় বিজয়ী হচ্ছে জেন রো ওরফে নর্মা ম্যাককরভি। মামলায় বিজয়ী হয়েও গর্ভপাতের সুযোগ নিতে পারলো না নর্মা। মামলা চলতে অনেক সময় নিয়েছে। মামলার মীমাংসা হবার আগেই তার সন্তান জন্মে গিয়েছে। আগের দুই সন্তানের মতো এই সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিয়েছে নর্মা অভাবের তাড়নায়।

রো বনাম ওয়েড, এই মামলার রায় ঐতিহাসিক। এই দিন থেকে আমেরিকার গর্ভপাত বৈধ হয়ে গেলো। অনাকাঙ্ক্ষিত মাতৃত্ব, মায়ের স্বাস্থ্য হুমকিজনিত সমস্যা, আর্থিক কারণে কিংবা অন্য যে কোনো কারণেই নারীরা অধিকার পেয়ে গেলো গর্ভপাত ঘটানোর। দরিদ্র, অবিবাহিত এবং তরুণী মায়েরা, যাদের পক্ষে অবৈধ গর্ভপাতের ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিলো না তারা খুব সহজেই বৈধভাবে গর্ভপাত করার সুযোগে পেলো। নারী আন্দোলনে, নারীর অধিকার আন্দোলনে এটা একটা মাইকফলক হিসাবে কাজ করেছিলো।

নর্মার এই বিজয় শুধু যে গর্ভপাতকে বৈধ করেছিলো তা নয়, আরেকটা অদ্ভুত কাজ করেছিলো এই রায় পরোক্ষভাবে। আমেরিকার ইতিহাসে নব্বই এর দশক হচ্ছে অপরাধের হার কমে যাওয়ার এক সুবর্ণ দশক। এর পিছনে বহু কারণ দায়ী রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে গর্ভপাত বৈধ হওয়া। প্রতিকুল পরিবেশে যে সব সন্তানেরা জন্ম নেয়, তাদের মধ্যে অপরাধী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গর্ভপাত বৈধতা পাওয়ায় অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুর জন্মরোধ করা গেছে সেই সময়ে। যার প্রভাব গিয়ে পড়েছে অপরাধের উপরে।

এই গল্পের টুইস্ট অবশ্য অন্য জায়গায়। কয়েক বছর পরে গর্ভপাতের পক্ষ ত্যাগ করে নর্মা। প্রো লাইভ একটিভিস্ট হয়ে যায় সে।  
বাস্তব জীবনে এই ধরনের টুইস্ট কিন্তু বিরল না। সারাজীবন প্রগতিশীলতার কথা বলে একজন মানুষ হুট করে চরম প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে। বাম রাজনীতি করতে করতে কেউ ডানে ঝুঁকে যেতে পারে, আগে যেখানে সমাজতন্ত্রেই মানুষের মুক্তি খুঁজে পেতো, পরে গিয়ে ইসলামকেই সবচেয়ে বড় সাম্যবাদী দর্শন মনে হতে পারে তার কাছে। একদিন যে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছে, সে নিজে একজন স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে কিংবা স্বৈরাচারের পক্ষ নিতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে নিজেও একদিন অন্যায়কারী হয়ে উঠতে পারে।

ফরিদ আহমেদ (ফেইসবুক থেকে)

news24bd.tv/আলী