‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ বাদ দেয়ার অর্থই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া: চরমোনাই পীর

‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ বাদ দেয়ার অর্থই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া: চরমোনাই পীর

অনলাইন ডেস্ক

চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ বাদ দেয়ার অর্থই হলো ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের নাম বাদ দেয়ার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।

রোববার (৩০ মে) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে চরমোনাই পীর বলেন, ‘পাসপোর্ট থেকে এই শব্দ দুটি বাদ দেয়া কার্যত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া।

তাইওয়ানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া সত্ত্বেও “এক্সসেপ্ট তাইওয়ান” শব্দ পাসপোর্টে উল্লেখ না থাকার কারণে, তৃতীয় কোনো দেশ থেকে তাইওয়ানের ভিসা নেয়া যায় এবং লেনদেন করা যায়। এই শব্দদ্বয় তুলে নিয়ে কার্যত ইসরাইলের সাথে সংযোগ স্থাপন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ’

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম আরও বলেন, ‘এই ইস্যুতে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড পেজ থেকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ ও অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মিডিয়া এটাকে বাংলাদেশ কর্তৃক ইসরাইলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হিসেবে সংবাদ পরিবেশন আমাদের আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণিত করে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, বাংলাদেশ সরকার ইসরাইলের সাথে কোনো ধরনের গোপন সম্পর্ক রাখে না।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে “এক্সসেপ্ট ইসরাইল” শব্দদ্বয় বাদ দেয়ার সংবাদে আমরা বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। আমরা আরও হতাশ হয়েছি, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা দেখে। বিষয়টি আলোচনায় আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মান রক্ষার যে যুক্তি দিয়েছেন, তা কেবল অযুক্তিই নয় বরং একই সাথে অসত্য যুক্তি। পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় “এক্সসেপ্ট ইসরাইল” শব্দদ্বয় কোনো বাধা নয়। এই শব্দদ্বয় সহই মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট বিশ্বের ১৯তম শক্তিশালী পাসপোর্ট। ’

অবিলম্বে পাসপোর্ট থেকে “এক্সসেপ্ট ইসরাইল” শব্দদ্বয় যোগ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে পাসপোর্টগুলো এই শব্দ ছাড়া ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে হবে। একই সাথে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে কারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তা বের করে শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ’

আসন্ন সংসদ অধিবেশনে ইসরাইলের সাম্প্রতিক বর্বরতার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সরব ভূমিকা পালন করেন। আমরা আশা করবো, আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে স্বাধীন সার্বভৌম একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্যও তিনি সরব ভূমিকা পালন করবেন। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত করার জন্য বহুজাতিক মুসলিম সেনাবাহিনী গঠনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই। ’

করোনার ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা, টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অশুভ শক্তিকে চিহ্নিত করতে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করতে হবে। টিকা সংগ্রহ ও বিতরণকে দুর্নীতিমুক্ত ও সার্বজনীন করতে এই জাতীয় কমিটি অপরিহার্য। কারণ, এক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণিত। আমরা সরকারের ওপরে আর আস্থা রাখতে পারছি না। ’

অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা ও খামখেয়ালিতে দেশের শিক্ষাখাত আজ ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। সরকার চাচ্ছে সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সহসায় সবাই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে, এমন আশা করা যায় না। ’

ওলামা ও রাজনৈতিক কর্মীদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওলামায়ে কেরাম সবচেয়ে শান্ত জীবনযাপন করেন। তাদেরকে ঠুনকো অজুহাতের ভিত্তিতে মামলা দিয়ে জর্জরিত করা এবং গ্রেফতার করে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়ার ফলে জনমনে এই সরকার ইসলাম বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। আমরা আটককৃত নিরপরাধ সব ওলামায়ে কেরাম এবং তুচ্ছ কারণে বা হয়রানিমূলক মামলায় আটককৃত অন্যান্য সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির আহ্বান করছি। অন্যথায় এই সরকার ওলামা নিপীড়ক শক্তি হিসেবে ইতিহাসে কলুষিত হবে। ’

আরও পড়ুন

  ফের ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়লো

  ‘স্যার’ না বলায় ক্ষেপে গেলেন কৃষি কর্মকর্তা, বললেন এই চেয়ারে বসতে কষ্ট করতে হয়েছে

  পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে হত্যা করে লাশ ৬ টুকরো করে আরিফা

  যশোরে আইনজীবীর কাছ থেকে হত্যা মামলার আসামি ‘ছিনতাই’

 

আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে বেশকিছু প্রস্তাবনা দেন সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম। যার মধ্যে রয়েছে-

১. বাজেট উপস্থাপনের আগে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা করতে হবে
২. কল্পনাবিলাস বাদ দিয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের সক্ষমতা পরিমাপ করে সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া
৩. অনুদান নির্ভর বাজেট থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে; শিক্ষা ও জনসম্পদ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে
৪. বাজেটের ১৫ শতাংশের মতো অর্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হচ্ছে, যা শোভনীয় না, এটাকে যুক্তিসংগত করতে হবে
৫. থোক বরাদ্দ কমাতে হবে
৬. এডিপি বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি করতে হবে
৭. প্রতিরক্ষা ব্যয় কমাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেন। যার মধ্যে আগামী ২ জুন অবিলম্বে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, একই দাবিতে ৩ জুন দেশব্যাপী প্রতিটি জেলা মহানগরে মানববন্ধন। ৫ জুন বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ বাদ দেয়ার প্রতিবাদ ও তা সংযোজনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হক আজাদ প্রমুখ।

news24bd.tv আহমেদ