আজ গোটা দেশটাই যেন আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ!

আজ গোটা দেশটাই যেন আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ!

Other

কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম বড় ভাইয়ের অফিসে। সেখানে আরও কিছু প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা হলো। লম্বা আড্ডা চললো। ঘুরেফিরে দেশ, রাজনীতি, করোনা, আমলাতন্ত্র নিয়ে অনেক কথা হলো।

বড় বড় অট্টালিকা, ফ্লাইওভার, ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে কিন্তু মানুষের মন থেকে শান্তি আর স্বস্তি চলে গেছে। সব জায়গায় কেমন যেন একটা মন খারাপ করা পরিবেশ। একটা গুমোট ভাব।

‘৭৫ এর পর বা ২০০১ এর নির্বাচনের পর এমন লাখে লাখে ঝাকে ঝাকে আওয়ামী লীগ কিন্তু ছিল না।

আজ গোটা দেশটাই যেন আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ। বিএনপি জামায়াত শাসনামলে এই সুযোগসন্ধানীরা তাদের ছাতার তলে ভিড় করেছিলো। আর আওয়ামী লীগের অনুভূতিপ্রবণ নেতা কর্মীরা শেখ হাসিনাসহ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন। জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা মামলা ও পুলিশি নির্যাতন ভোগ করে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছিলেন। দলের সেই দুঃসময়ে আজকের এই মতলববাজদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার যদি কোন সংকট আসে, এরা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।

একটা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছর ক্ষমতায়। দীর্ঘ লড়াইয়ের সময়টা কতজনের মাসের পর মাস ঘরে ফেরা হয়নি। বাবার সাথে ঈদের নামাজটা পর্যন্ত পড়া হয়নি। জীবিত মায়ের মুখটা দেখা হয়নি। জেলের অন্ধকারে কেটে গেছে বছর মাস। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে।

দীর্ঘদিন ধরে খুব সূক্ষভাবে শেখ হাসিনার পাশ থেকে পরীক্ষিতদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে জায়গা করে নিয়েছে বেঈমান লোভী আর সুবিধাবাদী কিছু মানুষ। এতবড় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেখানে কয়টা সাবেক ছাত্রলীগ আছে? বড় বড় চেয়ারগুলো যারা দখল করে বসে আছে দল এবং দলীয় প্রধানের জন্য তাদের কনট্রিবিউশন কি?

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেকের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ আর রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা সেই অসাধ্য সাধন করেছেন। ফিনিক্স পাখির মতন আওয়ামী লীগকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলেছেন। নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। সেই রাজনীতি গত ১২ বছরে উইপোকা নীরবে খেয়ে ফেলছে।

অতিলোভীরা সর্বনাশ করে ছাড়ছে। আওয়ামী লীগের ভিতরে ঢুকে গেছে, জামায়াত, ফ্রীডম পার্টি, বিএনপি। তারা আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীদের সাথে মিলে ভাগবাটোয়ারা করছে। তারা সবাই মিলেমিশে ভালো আছে। কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে দেশ ও আওয়ামী লীগের।

কাক কাকের মাংস না খেলেও এক আওয়ামী কর্মী আরেক আওয়ামী কর্মীর ক্ষতি করতে এক সেকেন্ডও ভাবে না। নিজেদের অনৈক্যের সুযোগ নেয় তৃতীয়পক্ষ। আর কিছু মানুষ মতের মিল না হলেই অন্যকে জামাত-শিবির ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। কেউ কেউ তো প্লেন ভাড়া করে হলেও অন্যের বদনাম করে আসে। আমরা চিরকালই পরশ্রীকাতর। শরীর খারাপের কারণে নয় বরং অন্যের সুখ দেখলেই বেশি অসুস্থ হয় একশ্রেণির মানুষ। বড় বড় স্থাপনার ভিড়ে মানবিক বোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন একটা মেকি সমাজে বাস করছি আমরা। সেখানে কোনও মায়া নেই, প্রাণ নেই, কমিটমেন্ট নেই, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নেই। আছে শুধু অসুস্থ প্রতিযোগিতা!

আঠারো কোটি মানুষের দেশে এখন ঊনিশ কোটি আওয়ামী লীগ। সর্বত্রই পরীক্ষিত ত্যাগী এবং যোগ্যদের অবমূল্যায়ন। তার চেয়েও বড় আক্ষেপের ব্যাপার হলো অযোগ্য এবং সুবিধাবাদীদের লাগামহীন দৌরাত্ম্য। এতে করে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। একদিকে আপনি যোগ্যদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছেন না অপরদিকে অযোগ্যদের মাথায় তুলে নাচছেন। একটা ফাঁপা অন্ত:সারশূণ্য কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছি আমরা। বড্ড ভয় হয়; সব তাসের ঘরের মতন উড়ে না যায়!

রাজনীতির নামে এই যে দুর্বৃত্তায়ন; এটা কি একদিনে ঘটেছে? এখন যারা গেলো গেলো করে রব তুলছেন, এতদিন কোথায় ছিলেন আপনারা? সবার চোখের সামনেই এই বিষবৃক্ষটা রোপিত হয়েছে। আস্তে আস্তে শিকড় গজিয়েছে, ডালপালা ছড়িয়েছে। একটা মানুষও টু শব্দটা করেন নি!

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এদেশের মাটি আর মানুষের প্রতিটা অর্জনের সাথে মিশে আছে এই সংগঠনটি। দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। ত্যাগী এবং পরীক্ষিত কর্মীদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে দলের। এটা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোন লিমিটেড কোম্পানি বা সোশ্যাল ক্লাব নয়। লাখো কর্মীর আবেগ আর রক্তের অপর নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।  

ডিজিটাল ব্যানার পোস্টার, তারা ঝলমলে নিয়ন বাতি কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে প্রতিনিধিত্ব করে না। লাখো কর্মীর রক্ত আর ঘাম শ্রম মিশে আছে এই দলটাতে। বছরের পর পর পালিয়ে বেড়ানো, রাতে বাড়িতে না ঘুমাতে পারা, মাসের পর মাস সন্তানের মুখ দেখতে না পারা। অসুস্থ বাবা মায়ের শয্যাপাশে থাকতে না পারা - এসবই একজন আওয়ামী লীগ কর্মীর এক যুগ আগের রুটিন।

চেয়ারে বসে সবদিকে একই সাথে নজর রাখা যায় না। কিছু বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত মানুষ ‘তৃতীয় নয়ন’ হিসেবে কাজ করে। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য উনার অধিকাংশ ‘তৃতীয় নয়ন’ এর চোখ লোভে ঢাকা। তবে আশার কথা হচ্ছে অবশেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা উনার নিজের মানুষদের চিনতে এবং মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন।

আমি খুউব আশাবাদী মানুষ। একটা নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখি। বিশ্বাস করি সেই ভোরটা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আসবে। অনেক ভাঙন, ক্ষরণ আর যন্ত্রণার পরই হয়তো দেখা মিলবে সেই কাঙ্ক্ষিত সূর্যের। দেরী হোক; যায়নি সময়। এই দেশ আর দেশের মানুষকে নিয়ে সবচেয়ে বড় স্বপ্নবাজের নাম ‘শেখ হাসিনা’। বঙ্গবন্ধু’র চোখ দিয়েই শেখ হাসিনা দেশটাকে দেখেন। বুকের গভীরে দেশের মাটি আর মানুষের জন্য গভীর মমতা ধারণ করেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি আমার অগাধ ভরসা। উনাকে খুব বেশিদিন ভুল বুঝিয়ে রাখা যাবে না। দেশের মানুষ আর দলের নেতাকর্মীকে উনি তো বঙ্গবন্ধুর চোখ দিয়েই দেখেন। এত মমতা যার বুকে; দলের দুর্দিনের কর্মীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিশ্চয় তাকেও রক্তাক্ত করবে? বিরোধীদল এবং এক এগারোর কর্মীরা কেউ ভালো নেই। হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশকারীদের কনুইয়ের ধাক্কায় তারা দিন দিন তাদের প্রিয় আপার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।

আবার যদি কোনও সংকট আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কঠিন মূল্য দিতে হবে। দলের পরীক্ষিত কর্মীর চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাসের মূল্য কড়া দামে মেটাতে হবে। সব শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই খুঁজে বের করা দরকার সেইসব বেঈমানদেরকে যারা কর্মীবান্ধব শেখ হাসিনাকে দিন দিন একা করে দিচ্ছে! মিছিলের সব কর্মী নেতা হতে পারে না, কখনো বা আবার নূন্যতম স্বীকৃতিটুকুও মেলে না। চোখের জলে সংগঠন থেকে বহুদূরে চলে গেছে এমন কর্মীর সংখ্য লক্ষ হাজার।


আরও পড়ুন


জনসংখ্যা বাড়াতে চীনে তিন সন্তান নীতির অনুমোদন

লাউডস্পিকারে আজান বন্ধের যে ব্যাখ্যা দিল সৌদি আরব

সমালোচনার পরদিনই বরখাস্ত হামিদ মীর, স্ত্রী-কন্যাকে হুমকি

তিন মাস বেতন পাবেন না মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা


যেকোন নির্বাচন সামনে এলেই শুনি মাঠপর্যায়ের জরিপ, এজেন্সির রিপোর্ট এসব দেখে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। ক্লিন ইমেজ, দলের প্রতি কমিটমেন্ট এবং জনপ্রিয়তায় যে এগিয়ে থাকে মনোনয়ন তার ভাগ্যেই জোটে; এমনটাই প্রচার করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। সর্বশেষ শূণ্য আসনগুলোর উপনির্বাচনের কথা ধরা যাক। অনেক আসনেই মৃত সাংসদের ঘর গেরস্থালী করা স্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। যেখানে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত একাধিক নেতা রয়েছেন। আবার অনেক সময় রাজপথের সাহসী যোদ্ধাকে সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ‘নারী’ হওয়ায় বাদ দেওয়া হচ্ছে। মিছিলের সামনে, পুলিশের লাঠির আগায় যখন এই নারীকর্মীদের এগিয়ে দেওয়া হয় তখন কিন্তু একবারও মনে করা হয় না এরা নাজুক। স্বামী মরে যাওয়ার পর কোটায় স্ত্রীর এমপি হওয়া কোনভাবেই নারীর ক্ষমতায়ন নয়।

বরং মাঠের নারীকর্মীদের মূল্যায়নই হতে পারে নারীর ক্ষমতায়নের একটা জোরালো পদক্ষেপ। ঢাকা ১৮ এর উপনির্বাচনে আমরা দেখেছি মাঠের কর্মী, পরীক্ষিত নাজমা আক্তারের অবমূল্যায়ন। আসছে ঢাকা -১৪ এর উপনির্বাচনে ৬০ এর অধিক প্রার্থীর মধ্যে মাঠ থেকে উঠে আসা একজনই নারী প্রার্থী সাবিনা আক্তার তুহিন। তার মূল্যায়নের অপেক্ষায় আসি। ঢাকার ২০ টি আসনের মধ্যে একটাও নারী এমপি নেই। অথচ ‌মোট ভোটারের অর্ধেকেরও বেশি নারী। এমন তো নয় যে যোগ্য নারী ক্যান্ডিনেট নেই। কয়েকটা শোভাবর্ধক চেয়ার অলংকৃত করা নারী জাগরণ নয়। নারী প্রধানমন্ত্রী, নারী স্পিকার, নারী বিরোধীদলীয় নেতার দেশে সরাসরি নির্বাচিত নারী সাংসদের সংখ্যা খুবই হতাশাজনক। সেক্ষেত্রে যেখানে যত যোগ্য নারী আছেন; তাদের সবার মূল্যায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাণী ইয়াসমিন হাসি, সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

news24bd.tv / নকিব