নিজেকে মেপো না বরং নিজেকে খুঁড়ে যাও, যতো পারো

ইউপ‍্যানের ল‍্যাবে কাজ করছেন রউফুল আলম। ছবিটি ২০১৭ সালের

নিজেকে মেপো না বরং নিজেকে খুঁড়ে যাও, যতো পারো

Other

কৈশোর-যৌবনে, দোচালা টিনের মাটির ঘরে শুয়ে কখনো দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি, আমেরিকায় গবেষণার চাকরি করবো। আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করবো। তাও আবার ইউনিভার্সিটি অব প‍্যানসিলভেনিয়ার মতো জায়গায়, পোস্টডক্টরাল গবেষণা।  

পড়েছি গ্রামের স্কুলে।

সহপাঠীরা আসতো খালি পায়ে। লুঙ্গি পড়ে। ভাবলে, এখনো শিউরে উঠি! তখনো স্কুলে কোন ড্রেস নেই। আমি যখন ক্লাস নাইনে উঠলাম, স্কুলে তখন তিন রুমের একটা ভবন হলো।
তার আগে আমরা টিনের চালের স্কুলে ক্লাস করতাম। কী কঠিন সময় ছিলো! 

সেখানে কী করে স্বপ্ন দেখবো! —কে দেখাবে স্বপ্ন? শুধু আব্বার মুখে একটা মানুষের নাম শুনতাম প্রায়ই। তিনি আমাদের গ্রামের এবং আব্বার দূর-সম্পর্কের আত্মীয়।

সে লোকটা আমার জন্মের আগে আমেরিকা এসেছিলেন। বুয়েট থেকে পাশ করে ৭৯’এ তিনি আমেরিকা আসেন। বেল ল‍্যাবরেটরিতে চাকরি করেছেন। আমাদের আশ-পাশের কয়েক গ্রাম তাকে এখনো চেনে! 

যাই হোক, ইউপ‍্যানের সময়টুকু দারুণ ছিলো। খুবই প্রোডাক্টিভ। খুবই ভাইব্রেন্ট। কতো কতো টেলেন্টেড পিএইচডি-পোস্টডকদের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছে। কাজের সুযোগ হয়েছে। আর আমার সুপারভাইজার তো অর্গানিক কেমেস্ট্রিতে এক নামে চেনা। আঠারো মাসের কাজে পাঁচটা আর্টিকেল পাবলিশ করেছিলাম। Four ACS and one Angewandte, including two first authroship articles! তারপর ঢুকে যাই চাকরিতে। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা!  

ইউরোপ-আমেরিকায় গবেষণার দীর্ঘ পথটুকু আমাকে কয়েকটা বিষয় নতুন করে শিখিয়েছিলো।  

এক. পরিশ্রম, পরিশ্রম এবং পরিশ্রম।
 
দুই. ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডদের সংস্পর্শে থাকো।  

তিন. ভবিষ্যতের স্বপ্নে বর্তমানকে ধ্বংস করো না। বরং বর্তমানকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যত গড়ো। আমরা কেউ ভবিষ্যত জানি না। তবে ভবিষ্যতের অসংখ‍্য সম্ভাবনার একটাকে ধরেই জীবন কাটিয়ে দিতে পারি।  

চার. যাকে দেখে নিজেকে মাপছো, সেই হয়তো তোমাকে দেখে একদিন তাকে মাপবে! সুতরাং নিজেকে মেপো না বরং নিজেকে খুঁড়ে যাও, যতো পারো।

রউফুল আলম, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র। লেখাটি তার ফেসবুক থেকে নেওয়া।

news24bd.tv নাজিম