মূর্খতার জগদ্দলকে ভাঙতে প্রশ্নের হাতুড়ি চাই

মূর্খতার জগদ্দলকে ভাঙতে প্রশ্নের হাতুড়ি চাই

Other

মানুষের এক অনন্য ক্ষমতা হলো—তার ভিতর প্রশ্ন জাগে। পৃথিবী জুড়ে মানুষের প্রশ্নগুলোই, সভ্যতাকে এতদূর এনেছে।  

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রশ্ন করেছিলেন ‘বিদুৎ চমকানো’ (Lightning) নিয়ে। নিউটন প্রশ্ন করেছিলেন, পৃথিবীমূখী বস্তুর গতি নিয়ে।

আইনস্টাইন প্রশ্ন করেছিলেন, বস্তু যদি আলোর গতিতে চলে—তাহলে কী হবে? কালে কালে মানুষের এইসব প্রশ্ন, বহু অজানা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে। মানুষ যখন অজানা থেকে বেরিয়ে আসে, সেটা অন্ধকার থেকে আলোক প্রাপ্তির তুল্য। প্রশ্ন, সভ্যতাকে আলোকিত করেছে।

ইউরোপে যে জাগরণের (রেঁনেসা) কথা বলা হয়, সেটা জিজ্ঞাসা থেকে এসেছে।

প্রশ্ন থেকে এসেছে। লুই পাস্তুর প্রশ্ন করেছিলেন, ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কেন নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আমাদের জানালেন “অদৃশ‍্য মাইক্রোব” ওয়াইন নষ্ট করে দিচ্ছে। দুধ নষ্ট করে দিচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করলেন, যদি এইসব মাইক্রোব দুধ, ওয়াইন ইত‍্যাদি নষ্ট করে, ক্ষতি করে তাহলে কি আমাদের শরীরেও ক্ষতি করতে পারে? —পাস্তুরের প্রশ্ন হয়তো ছিলো সিম্পল কিন্তু উত্তর খুঁজতে গিয়ে সেই ধারাবাহিকতায় মানব সভ‍্যতা জানলো ব‍্যাকটেরিয়ার কথা। ভাইরাসের কথা। কতো কতো রোগের কথা!

আরও পড়ুন:


সুনামগঞ্জে বেহাল সড়ক সংস্কারের দাবিতে এলাবাসীর মানববন্ধন

হামাসের ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, ২ ফিলিস্তিনি যোদ্ধা নিহত

বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে চাচা-ভাতিজার মৃত্যু


ইউরোপের সমাজ ব্যবস্থায় প্রশ্ন করা একটা সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে কাজ করার সময় দেখেছি ছেলে-মেয়েরা কী করে প্রফেসরের সাথে প্রশ্নবাণে জড়িয়ে যায়। তর্ক চলে। শিক্ষার্থীদের মাথায় কোন ভয় বা দ্বিধা থাকে না। কিংবা প্রফেসরও চিন্তা করে না, ‘ও পুঁচকে’। এই যে আবহ, রবীন্দ্রনাথ এটাকে বলেছিলেন ‘চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য’। আইনস্টাইন বলেছিলেন, প্রশ্ন করা থেকে বিরত থেকো না। ভলতেয়ার নাকি বলেছিলেন, একজন মানুষকে বিচার করো তার প্রশ্ন থেকে, উত্তর থেকে নয়।

আমাদের স্কুলগুলোতে প্রশ্ন নেই। কোমলমতি শিশু-কিশোরগুলো শিক্ষকের ভয়ে কুঁচকে থাকে। অথচ ওরা হয় খুব উৎসুক। ওদের মনের ভিতর জাগে অসংখ্য প্রশ্ন। সেসব প্রশ্নকে বের করে আনার চেষ্টা নেই শিক্ষকদের। কতো বড়ো বড়ো আইডিয়ার মৃত‍্যু ঘটে সেখানে!

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন নেই। রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্ন করা যায় না। সংবাদ সম্মেলনগুলো দেখলে ঘৃণা জাগে। কোন প্রশ্ন নাই। চ‍্যালেঞ্জ নেই। ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না। ডাক্তারদের প্রশ্ন করা যায় না। অথচ, রোগীর প্রশ্ন শুনা ডাক্তারের জন্য আবশ্যক। রোগীকে সচেতন করা, ডাক্তারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আমাদের সমাজে, প্রশ্ন করাই যেনো এক অপরাধ। প্রশ্ন না করে করে, আমাদের মগজগুলো কী ভয়ংকরভাবে নেতিয়ে যাচ্ছে। ঝং পড়ছে। শৈশব থেকেই আমরা প্রশ্ন করা ভুলে যাই।

গবেষণা জীবনে জাঁহাবাজ অধ্যাপকদের সাথে যতো তর্ক করেছি, সেটা বাংলাদেশে অকল্পনীয়, দুঃস্বপ্ন। এই যে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, আস্থা নিয়ে তর্ক করা—সেটা মানুষের মনের জানালা খুলে দেয়। সেসব জানালা দিয়ে মানুষ, একই বিষয়কে বহুভাবে কল্পনা করতে শেখে। তার ভাবনার জগৎ বিস্তৃত হয়। সেসব জানালা দিয়ে ঢুকে যাওয়া আলোয় আলোকিত হয় পুরো সমাজ।

প্রশ্নহীন সমাজে জঙ্গমতা থাকে না। প্রাণ থাকে না। সেখানে গতি হ্রাস পায়। শম্বুক গতি আসে। একসময় থেমে যায়।
প্রশ্ন করুন। তুমুল প্রশ্ন। প্রশ্ন হবে ক্লাসরুমে। ময়দানে, অফিসে, ডাক্তারখানায়। উপাসনালয়ে। সংবাদ সম্মেলনে।  
আলোকিত সমাজের জন্য প্রশ্ন অপরিহার্য। মূর্খতার জগদ্দলকে ভাঙ্গতে, প্রশ্নের হাতুড়ি চাই!

news24bd.tv তৌহিদ