সারা বিশ্বে হালাল খাদ্য সরবরাহে ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশও

সারা বিশ্বে হালাল খাদ্য সরবরাহে ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশও

Other

আসন্ন বাজেটে হালাল খাদ্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এবং দেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যা বর্তমানে ১.৮ বিলিয়ন যা সর্বমোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ২৪ ভাগ।

ধারণা করা হচ্ছে যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা হবে ২.২ বিলিয়ন বা মোট জনসংখ্যার ২৬ ভাগের অধিক। হালাল খাদ্য, ঔষধ, প্রসাধনী মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের মূল্য প্রায় ৩.৮ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। তার মধ্যে শুধু হালাল খাদ্যের মূল্যমান ১.৮ ট্রিলিয়ন।

বিশ্বে মূল্যমান অনুযায়ী সর্বোচ্চ হালাল খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলি হলো ব্রাজিল, ইন্ডিয়া, আমেরিকা, চীন, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, রাশিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেইন। সর্বোচ্চ মাংস রপ্তানিকারক দেশগুলি হলো ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, ফ্রান্স, চীন, সুদান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সোমালিয়া, তুরস্ক।

হালাল খাদ্যে প্রবৃদ্বির হার করোনার কারণে কিছুটা কমে ৩-৪ ভাগ হলেও ধারণা করা হয় তা স্বভাবত বাৎসরিক ৭-৮ ভাগ। এই প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণগুলি হলো (১) মুসলিম জন সংখ্যা বৃদ্ধির হার (২) উধ্বৃত্ত আয় (৩) ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি (৪) হালাল সম্পর্কে সচেতনতা (৫) হালাল খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি।

আর সে কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্র্যান্ড গুলি এখন হালাল খাদ্য এবং হালাল পণ্য উৎপাদন এবং সরবরাহে  অত্যন্ত উৎসাহের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।

তার মধ্যে নেসলে, কারগিল, স্যাফরন রোড, বি আর এফ, কিউ এল ফুডস, আল ইসলামী ফুডস, ড্রাগন হলাল ফুডস , কাওয়ান ফুডস,  জানান মিটস, প্রিমা এগ্রি, তাহিরা ফুডস এবং আল ফেলল ফুডস।   ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় বিপণন প্রতিষ্ঠান যেমন - টেসকো, আসডা, মরিসন্স, উল ওয়ার্থস, কোলস, আলডি ইত্যাদি হালাল পণ্য গুরুত্বের সাথে মজুদ এবং বাজারজাত করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম দেশেও এখন নান্দোজ, কে এফ সি, ম্যাকডোনাল্ডসসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের দোকান চালু করেছে। মোটকথা হলো বিশ্ব বাণিজ্যে হালাল খাদ্য এবং হালাল পণ্য যেমন হালাল ঔষধ ও হালাল প্রসাধনী এখন অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম দেশ যেমন কোরিয়া, চীন, জাপান  হালাল খাদ্য এবং হালাল পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করছে।

উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের প্রায় সর্বত্রই হালাল খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। কারণ মুসলিমরা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই  উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছড়িয়ে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে যে সব দেশগুলিকে হালাল খাদ্যের প্রধান বাজার হিসেবে ধরা হয় তা হলো এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি। সেই সাথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং আমেরিকা।  

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যে অনেক অমুসলিমরা এখন হালাল খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে শুধু গুনগত বিশ্বস্ততার জন্য। যেমন চীন এবং ইউরোপের দেশগুলি। বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করার জন্য এখানে বিশেষভাবে একটি উদাহরণ দেয়া যায় তা হলো যুক্তরাজ্যে একটি বাৎসরিক হালাল মাংসের বিক্রয় ছিল সর্বমোট মাংস বিক্রয়ের ১৫ ভাগ, যেখানে মুসলিম জনসংখা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ ভাগ।   ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড অনেক হালাল খাবার চীনের বিভিন্ন রাজ্যে সরবরাহ করে যে সব রাজ্য মুসলিম জনবহুল নয়। আরো একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো, আর তা হলো থাইল্যান্ড এবং জাপানে রয়েছে বিশ্বের মধ্যে সব চেয়ে বড় এবং আধুনিক হালাল পণ্য পরীক্ষাগার। জাপানের একটি আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হালাল পণ্যের দোষণ প্রতিরোধসহ পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করণ ব্যবস্থা প্রথম চালু করে।

আমরা সবাই জানি এবং যথার্থই বলে থাকি যে বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভবনার দেশ। সাম্প্রতিককালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সত্যটি আরো জোড়ালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের সর্ব ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। বিশেষত কৃষি, প্রাণী সম্পদ এবং খাদ্যে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা দেশে বিদেশে সকলেই অকপটে স্বীকার করছে। ভাত, মাছ এবং বিশেষকরে প্রাণীজ প্রোটিনের উৎপাদন এবং সরবরাহে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক সিদ্ধান্তে যোগ্য, অভিজ্ঞ, কৃষি পেশায় দক্ষতা সম্পন্ন কৃষি মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া যথার্থ এবং সময়উপযোগী। মাননীয় কৃষি মন্ত্রী ডঃ রাজ্জাক একদিকে যেমন কৃষি শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত তেমনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্ভেজাল সৈনিক, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলার কৃষকদের কাছের মানুষ।

জানতে পেরেছি মাননীয় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীও ভালো কাজ করছেন। এই সময়ে এই ক্ষেত্রগুলিতে উন্নয়ন অব্যহত থাকবে এটাই প্রত্যাশা সবার আর সেই সাথে এখন সময় এসেছে কিভাবে এই উন্নয়নকে আরো একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ থেকে উন্নতমানের উদ্ভাবিত খাদ্য বিশেষত হালাল খাদ্য রপ্তানি করা যায় তা বিবেচনায় নেবার। বাংলাদেশে এখনো অনেক খাদ্যে আমদানি নির্ভর। এই আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে কিভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায় তা ভাববার সময় এসেছে। আমরা প্রায়শই দেখি মুরগি, ডিম, মাছের উৎপাদন অতিরিক্ত হওয়ায় খামারীরা পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না। অনেক ক্ষেত্রে এগুলি স্বল্প মূল্যে বা বিনা মূল্যে পরিত্যাক্ত হিসাবে ফেলে দিতে হয়।

সেক্ষেত্রে উন্নত পদ্ধতিতে এই কাঁচা মাল গুলিকে উদ্ভাবিত খাদ্যে  পরিণত করে হালাল সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে স্থান করে নেওয়ার এখনই সময়। দেশে খাদ্য উৎপাদন এবং দেশ থেকে খাদ্য রপ্তানীর একটি সমন্বয় প্রয়োজন। রপ্তানি বাড়লে খামারীরা সঠিক মূল্য পাবে এবং উৎপাদনে উৎসাহিত হবে। উৎপাদন আরো বাড়বে।

আরও পড়ুন


নিজেকে বঞ্চিত করে কোন দিনই ভালো থাকা যায় না

দশ বছরে ৪ বার পিছিয়েছে সময়সীমা, অগ্রগতি মাত্র ২৬ ভাগ (ভিডিও)

ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান হলেন শতরূপা বড়ুয়া

বিএনপির বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিলো বহুদলীয় তামাশা: ওবায়দুল কাদের


কথায় আছে সব ডিম এক জুরিতে রেখে তার উপর নির্ভরশীল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সব সুযোগ সময়মতো কাজে লাগানোই যথার্থ। তাছাড়া সুযোগ এবং সম্ভবনা করায়ত্ত করার সময় সধারণত অপ্রশস্ত হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে হালাল খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহের এই জাগরণের সময়ে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।

গত দশ বছরের অধিক সময় অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রুনেইতে হালাল খাদ্যের উৎপাদন এবং সরবরাহ বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার সুযোগে এই ক্ষেত্রটি সম্পর্কে বেশ কিছু মূল্যবান ধারণা হয়েছে যা বাস্তবায়ন করে ব্রুনাই থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে হালাল খাদ্য আমদানি ও রপ্তানীর পদক্ষেপ গুলি এগিয়ে চলছে। সেই আলোকেই মনে করছি সত্যিই এক্ষেত্রে বাংলদেশের অপার সম্ভবনার সুযোগ আছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বেশ কিছু ব্যাবসায়ী এবং উদ্যোক্তা অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করছেন, কেউ এগিয়েও এসেছেন। তবে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে সরকারী উদ্যোগ আর সেই সাথে বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজর সর্বত্র বিসতৃত। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ কোনো বিষয়ই তাঁর নজর এড়ায় না। এই বিষয়টিও তাঁর সুনজরে আছে বলেই জেনেছি। বিশ্বস্ত সূত্রে এও জেনেছি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব মহোদয়কে দায়িত্ব দিয়েছেন।   আমাদের দৃঢ বিশ্বাস বিষয়টি এগিয়ে যাবে প্রয়োজনীয় গতিতে এবং সেজন্য গুরুত্ব সহকারে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ পাবে।

বিশ্বের অনেক নামকরা উন্নয়নশীল দেশকে পিছনে ফেলার প্রমাণিত সত্যকে বারবার উদাহরণ সৃষ্টি করে সামনে যাবার এখনই সময়।   করোনার ক্রান্তিকালেও প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা আর মুদ্রা রিজার্ভের রেকর্ড তাই প্রমান করে। তারপরও কিছু মানুষকে বলতে শুনি যে  উন্নয়ন হয়েছে তা তারা দেখতে পায় না। এই সমস্যাটি নতুন নয়। অনেক পুরোনো। কিছু মানুষ সমস্যার মধ্যে সমাধান খুঁজে পায়, আর কিছু মানুষ সমাধানের মধ্যেও সমস্যা দেখে। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

news24bd.tv আহমেদ