ভারত থেকে হেঁটে নিজ আবাসস্থলে বাঘ, গলায় বাঁধা ছিলো স্যাটালাইট চিপস

ভারত থেকে হেঁটে নিজ আবাসস্থলে বাঘ, গলায় বাঁধা ছিলো স্যাটালাইট চিপস

Other

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের একটি প্রাপ্ত বয়স্ক রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন পেরিয়ে ৩টি নদী ও ৩টি দ্বীপ পেরিয়ে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আবারও ফিরে এসেছে নিজ আবাসস্থলে। নদী ও ম্যানগ্রোভ এই অরণ্যের দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিতে বাঘটির সময় লেগেছে সাড় ৪ মাস। তবে ভারত সফর করতে গিয়ে সে দেশের ওয়াইল্ড লাইফ বিভাগের ফাঁদে আটক হয়ে গলায় পরতে হয়েছে স্যাটালাইট চিপসযুক্ত রেডিও কলার। সুন্দরবন বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের বশিরহাট রেঞ্জের হরিখালী বন অফিস এলাকা থেকে সে দেশের ওয়াইল্ড লাইফ টিমের সদস্যরা ছাগল দিয়ে ফাঁদে ফেলে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর একটি বাঘ আটক করে। প্রায় ৯ বছরের  প্রাপ্তবয়স্ক আটক করা ওই বাঘটিকে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে বন অফিসে নিয়ে তার গলায় স্যাটালাইট চিপসযুক্ত রেডিও কলার পরিয়ে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে ওই বাঘটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন তারা।

কয়েকদিন পরে তারা দেখতে পান বাঘটি বাংলাদেশের সুন্দরবন অভিমুখে রয়েছে।

পরে বাঘটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ছোট হরিখালী, বড় হরিখালী নদী ও বাংলাদেশের রায়মঙ্গল নদীসহ ভারতের হরিণডাঙ্গা, খাতুয়াঝুঁড়ি ও বাংলাদেশের তালপট্টি দ্বীপ ঘুরে সাতক্ষীরা রেঞ্জ পৌঁছাতে পেরেছে। গত ১০ মে পর্যন্ত ভারতীয় বন বিভাগের ট্রেকিংয়ে থাকা ওই বাঘটি ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় নিয়েছে সাড়ে ৪ মাস। ভারতীয় বন বিভাগ বলছে, বাঘটি তাদের ট্রেকিংয়ে না থাকলেও এখনো নিরাপদে আাছে। কারণ ওই বাঘটি মারা গেলে তারা স্যাটালাইট চিপসের মাধ্যম সিগনাল পাওয়া যেতো।

সুন্দরবনের করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনের একটি পুরুষ বাঘ ২শ থেকে ২৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তার এলাকা প্রতিষ্ঠা করে। এসময় পুরুষ বাঘটির সাথে ২ থেকে ৭টা পর্যন্ত নারী বাঘ ওই এলাকায় থাকতে পারে। বাঘ সব সময় তার এলাকা পাহারা দিয়ে থাকে। বাঘ খাদ্যের সন্ধানে বা অন্য কোন কারণে কখনও কখনও তার নিজ এলাকা ত্যাগ করে অন্য এলাকায় যেতে পারে।

কোন কারণে হয়তো বাঘটি নদী পেড়িয়ে ভারতের অংশে ঢুকে পড়ে। তখন তারা বাঘটিকে ধরে গলায় স্যাটালাইট চিপসযুক্ত রেডিও কলার পরিয়ে দেয়। এছাড়া সুন্দরবনের বাঘের বিষয়ে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাকে আপনি যতদিনই আটকে রাখেন না কেন, ছাড়া পেলে সে ঠিকই তার এলাকায় ফিরে আসবে। সে হিসাবে যে বাঘটি ফিরে এসেছে সেটি সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশের বাঘ। পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তাদের প্রত্যেক এর ফিঙ্গার প্রিন্ট যেমন আলাদা, ঠিক তেমনি প্রতিটি বাঘের ডোরাকাটা দাগ কিন্তু আলাদা হয়। এ কারণে সহজেই কিন্তু বাঘটি কোন অংশের সেটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন


এবারের বাজেটে কোনো দুর্বলতা নেই: অর্থমন্ত্রী

প্রতিটি দেশে ফেসবুক-টুইটার বন্ধ করা উচিত: ট্রাম্প

বিএনপি সংশ্লিষ্টতার কারণে ডিপজল ও এখলাস মোল্লাকে মনোনয়ন দেয়নি আ.লীগ: নুরজাহান

হুইপ শামসুল হক ও পুত্র শারুনের বিরুদ্ধে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মিছিল


ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বন বিভাগের প্রধান ওয়াইল্ড লাইফ কর্মকর্তা ভি কে যাদব সে দেশের গণমাধ্যমে বলেছেন, ২৭ ডিসেম্বরে গলায় রেডিও কলার লাগানো বাঘটি ভারতের সুন্দরবনের নয়। বাঘটি বাংলাদেশের সুন্দরবনের। তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

বাংলাদেশের সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেছেন, ভারতীয় সুন্দরবনের বশিরহাট রেঞ্জে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বরে যে বাঘটির গলায় রেডিও কলার লাগানো হয় সেটি সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বাঘ। একটি বাঘের ডোরাকাটা চিহ্নের সাথে অন্য বাঘের ডোরাকাটা চিহ্নের কোনো মিল থাকে না। ২০১৭ সালে ক্যামেরা ট্রেকিং পদ্ধতিতে বাঘ শুমারিকালে এই বাঘটির ছবি সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে তোলা হয়, যা বন বিভাগের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের নদীর ওপারে ভারতের সুন্দরবন। তাই নদী পেরিয়ে ওপারের সুন্দরবনে গিয়ে বাঘটি নিজ আবাসস্থল সাতক্ষীরা রেঞ্জে ফিরে আসার বিষয়টি ভারতীয় বন বিভাগের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

news24bd.tv আহমেদ