সূরা ইয়াসিন: আয়াত ১-৪, গুরুত্ব ও শিক্ষণীয় দিক

সূরা ইয়াসিন: আয়াত ১-৪, গুরুত্ব ও শিক্ষণীয় দিক

অনলাইন ডেস্ক

সূরা ইয়াসিনের পবিত্র কুরআনের মর্যাদাপূর্ণ একটি সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এই সূরার প্রথমে বর্ণিত দুই মুকাত্তায়াত হরফের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। এই সূরায় রয়েছে ৮৩টি আয়াত।

সূরা ইয়াসিনে বিশ্বাসগত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

কয়েকটি আয়াতে বিশ্বজগতে মহান সৃষ্টিকর্তার বিশালত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সূরার অন্য অংশে পরকালীন জীবন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং জান্নাত ও জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। হাদিসের বর্ণনায়, এই সূরাকে পবিত্র কুরআনের কলব বা হৃৎপিণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই সূরার প্রথম চার আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

يس (1) وَالْقُرْآَنِ الْحَكِيمِ (2) إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ (3) عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ (4)

“ইয়া সিন। ” “প্রজ্ঞাময় কোরআনের শপথ। ” “নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রসূলগণের একজন। ” “(এবং) আপনি সরল পথে প্রতিষ্ঠিত। ”

পবিত্র কুরআনের বেশ কয়েকটি সূরা এই ধরনের অক্ষর বা হরফ দিয়ে শুরু হয়েছে। এগুলো পরস্পর থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন কোনো অক্ষর নয়। বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে যেমন ওই প্রতিষ্ঠানের নামকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয় তেমনি হুরুফে মুকাত্তায়াতেও রয়েছে সেরকম কিছু ইঙ্গিত ও নিদর্শন। কিন্তু সে নিদর্শন উপলব্ধি করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা নিজের কাছে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। কোনো কোনো বর্ণনায় হুরুফে মুকাত্তায়াত ‘ইয়া-সিন’কে বিশ্বনবী (সা.)-এর অন্যতম নাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই দুই আরবি হরফের পরই নবীজীকে সম্মোধন করে আল্লাহ তায়ালা কথা বলেছেন।

সাধারণভাবে মুকাত্তায়াত হরফের পর পবিত্র কুরআনের নাম এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করা হয়। এই সূরায়ও পবিত্র কুরআনের প্রজ্ঞাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে তার শপথ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো কিছুর শপথ করেন তখন তিনি সেই বিষয় বা বস্তুর বিশালতা ও গুরুত্ব মানুষের সামনে তুলে ধরেন। তা না হলে মানুষকে বিশ্বাস করানো বা মানুষের সামনে কোনোকিছুর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার শপথ করার প্রয়োজন হয় না।

এই চার আয়াতে বিশ্বনবীর রিসালাত ও পবিত্র কুরআন নাজিলের মধ্যকার সম্পর্ক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীজী (সা.) কে উদ্দেশ করে বলা হচ্ছে, কুরআনুল হাকিম হচ্ছে আপনার রিসালাতের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এটি হচ্ছে ঐশী মুজিযা এবং কুরআনের মতো কিতাব কোনো মানুষের পক্ষে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া, অতীতের নবী-রাসূলদের মতো মানুষকে সত্য সরল পথে পরিচালিত করার জন্য আপনাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আপনি সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর অটল রয়েছেন, এই পথ আপনার ভালোভাবে জানা আছে এবং এই পথ থেকে বিচ্যুতির কারণগুলিও আপনার অজানা নয়।

সূরা ইয়াসিনের চতুর্থ আয়াতের সারমর্ম অনুযায়ী, আল্লাহর রাসূল শুধু সত্য সরল পথেই পরিচালিত নন সেইসঙ্গে এই পথের ওপর তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, যিনি মানুষকে এই পথে দাওয়াত জানাবেন তাঁকে এই পথের একজন বাস্তব আদর্শ হতে হবে; যিনি একইসঙ্গে মানুষকে সঠিকভাবে সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করবেন এবং তাদেরকে এই পথে অটল রাখবেন। এখানে মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালা সিরাতুল মুস্তাকিম বা সহজ-সরল পথে চলার যে আহ্বান জানিয়েছেন তার অর্থ এই নয় যে, এই পথে চলা অত্যন্ত সহজ। আমরা যেন এটা না ভাবি যে, এই পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা গিরিখাদ নেই। বরং সিরাতুল মুস্তাকিম এই অর্থে বলা হয়েছে যে, লক্ষ্যে পৌঁছার সঠিক পথ হচ্ছে এটি। বাকি সব পথ মানুষকে বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতির দিকে নিয়ে যায়। বিচ্যুতির পথগুলো দৃশ্যত অনেক সোজা ও প্রতিবন্ধকতাবিহীন মনে হলেও এগুলোকে অনুসরণ করলে মানুষ কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।

আরও পড়ুন


শুক্রবার থেকে রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল বন্ধ

৭ দিনের লকডাউনে বন্ধ সব দোকানপাট

পোশাকশিল্প খাতে স্বস্তি ফিরছে না

নির্বাচনী দায়িত্বের জন্য পুলিশ সদস্যদের পদক দিচ্ছে সরকার


এই চার আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো-

১. কুরআনে কারিম হচ্ছে সুদৃঢ় গ্রন্থ। প্রজ্ঞাপূর্ণ এ গ্রন্থ মানুষকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেয়। কুরআনের অন্যতম মুজিযা হচ্ছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের জন্য এতে রয়েছে প্রজ্ঞাপূর্ণ শিক্ষা।

২. পবিত্র কুরআনের শিক্ষা প্রচারের জন্য বিশ্বনবী (সা.)-এর মতো একজন মহান শিক্ষকের প্রয়োজন যিনি মানুষকে তা শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি নিজের জীবনে সে শিক্ষা বাস্তবায়ন করে দেখাবেন।

৩. আমরা প্রতিবার নামাজে দাঁড়ালেই সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করেন। আর সূরা ইয়াসিনের চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে সিরাতুল মুস্তাকিমের শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কাজেই আমরা যদি সিরাতুল মুস্তাকিম বা সহজ-সরল পথে চলতে চাই তাহলে নবীজী (সা.)-এর জীবনাদর্শ সঠিকভাবে চিনতে, বুঝতে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে।

news24bd.tv আহমেদ