যৌবনে যে কাজগুলো মেনে চললে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা সুনিশ্চিত

যৌবনে যে কাজগুলো মেনে চললে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা সুনিশ্চিত

অনলাইন ডেস্ক

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে যৌবন বয়সের ইবাদত সবচেয়ে বেশি প্রিয়। সে নারী হোক কিংবা পুরুষ। কেননা এ বয়সের ইসলামের অনুসরণকারীরা কেয়ামতের ময়দানে পাবেন মহান রবের আরশের বিশেষ ছায়া। তাই যুবক-যুবতির ইবাদত ও চলাফেরার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু দিক।

যে উপদেশ ও করণীয়গুলো মেনে চলায় দুনিয়া ও পরকালের সফলতা সুনিশ্চিত। সে উপদেশ ও করণীয়গুলো কী?

যৌবনের উম্মাদনায় যুবক-যুবতি!

এখনই সময়- নিজেকে গড়ার; ইবাদত-বন্দেগি করার; নিয়মিত নামাজ আদায় করার। সুখময় জান্নাতের চিরস্থায়ী অবস্থান নিশ্চিত করার সময়ও এখনই। কোনো যুবক-যুবতির জন্যই এ বয়সে অলসতা ও বিলাসিতা করার সময় নয়।

বরং অলসতা ও বিলাসিতা ত্যাগ করে যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় ও শ্রমকে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণময় কাজে ব্যয় করা জরুরি।

মনে রাখা জরুরি যে, দুনিয়ার মোহ-ই মানুষের যৌবনের এ মূল্যবান সময়কে বিলাসিত ও অলসতার কারণে ধ্বংস করে দেয়। তাই যুবক-যুবতিদের এ যৌবন বয়সে সালাফে সালেহিনদর উপদেশ ও দিকনির্দেশনা থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি। তাহলো-

১. হজরত আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তোমরা যেভাবে কথা বলতে শিখাও অনুরূপ চুপ থাকাও শিখাও। কেননা, চুপ থাকা বড় সহনশীলতা। ’ (মাকারিমুল আখলাক)

২. আল্লামা ইবনুল জাওযি (রাহ.) বলেন, ‘তুমি তোমার নিজের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি দাও। তোমার অবস্থা যদি এই হয় যে, তুমি মৃত আর কবরের জন্য প্রস্তুত; তবে তাতেই অবস্থান অব্যাহত রাখো। আর যদি তোমার অবস্থা হয়ে থাকে এমন যে, এই দু’টির কোনোটির জন্যই তুমি উপযোগী নও; তবে এই অবস্থা থেকে আল্লাহর দিকে তাওবাহ কর এবং ফিরে যাও সেদিকে যা তার জন্য উপযোগী। ’ (বুস্তানুল ওয়ায়েজিন)

৩. হজরত সুফিয়ান সাওরি (রাহ.) বলেন, ‘যখন তুমি আল্লাহর পথে তোমার ভাইকে ভালোবাসবে; তখন তার জন্য তোমার নফস ও সম্পদ ব্যয় করবে। আর ঝগড়া, মতানৈক্য এবং সন্দেহ-সংশয় থেকে বেঁচে থাকবে। সর্বাবস্থায় তোমার ওপর ধৈর্যধারণ করা জরুরি। কেননা, ধৈর্যই নেক আমলের দিকে টেনে নিয়ে যায় আর নেক আমল টেনে নিয়ে যায় জান্নাতে। ’ (হিলইয়াতুল আওলিয়া)

৪. হজরত ইবনু হিব্বান (রাহ.) বলেন, ‘আহমক বা বোকার মাঝে সবচেয়ে বড় আহমকি বা বোকামির আলামত হলো- তার মনে যা উদয় হয়, তার জিহ্বা তা-ই বলে দেয়। ’ (আর রাওদাহ)

৫. ইমাম হাসান বসরি (রাহ.) বলেন, ‘মানুষ তোমাকে সম্মান করতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তাদের কাছে যা আছে তা গ্রহণ না করবে। সুতরাং যখন তুমি তা করবে তখন তোমাকে অবজ্ঞা করবে; বিদ্বেষ পোষণ করবে এবং তোমার কথাকে অপছন্দ করবে। ’ (হিলইয়াতুল আওলিয়া)

৬. হজরত শামিত বিন আজলান (রাহ.) বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি চুপ থাক ততক্ষণ নিরাপদ থাক। আর যখনই কথাবলা শুরু কর, সতর্কতা অবলম্বন কর যে- যে যা বলছ তা কি তোমার জন্য উপকারী নাকি তোমার বিপক্ষে যাবে। ’ (জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম)

৭. হজরত ইবনু হিব্বান (রাহ.) আরও বলেন, ‘অল্পে তুষ্টি অন্তরে আসে। অতএব যার মন ধনী হয়ে যায় তার হাতও ধনী হয়ে যায়। আর যার মন গরীব থাকে তার প্রাচুর্য তার কোনো কাজে আসে না। আর যে ব্যক্তি অল্পে তৃপ্ত হয়ে যায় সে বিরাগ হয়না এবং প্রশান্তি ও আরামের জীবন যাপন করে। আর যে ব্যক্তি অল্পে তৃপ্ত হয়না; আগ্রহের কারণে তার জন্য মৃত্যুর সময় পরিশেষে অবশিষ্ট কোনো কিছু থাকে না । আর চেষ্টা ও বঞ্চিত হওয়া বান্দার মাঝে কেমন যেন লড়াই করে। ’ (রওদাতুল ওকালা)

৮. আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানি (রাহ.) বলেন, ‘মুমিন সবসময় ভীত-সন্ত্রস্ত ও (মোরাক্কাব) নিজের অবস্থার ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। নিজের নেক আমলকে ছোট ও তুচ্ছ মনে করে আর সামান্য বদ আমলের ব্যাপারেও ভয়ে থাকে। ’ (ফাতহুল বারি)

৯. হজরত ইবনুল আরাবি (রাহ.) বলেন, ‘যখন বান্দা অধিক বিদ্বেষী-ঈর্ষাপরায়ণ, হিংসুটে, অহমিকাপূর্ণ এবং অহংকারী হয় তখন তার অন্তর নিরাপদ থাকে না। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ঈমানের ক্ষেত্রে শর্ত করে দিয়েছেন যে, নিজের ব্যাপারে যা পছন্দ করে তার অপর ভাইয়ের ব্যাপারেও তা-ই পছন্দ করবে। ’ (আহকামুল কুরআন-লিইবনিল আরাবি)

১০. হজরত ইবনু কুদামাহ আল-মাকদিসি (রাহ.) বলেন, ‘যাকে ঈর্ষা করা হয়না তার মাঝে কোন কল্যাণ নেই। ’ (আলমুগনি)

১১. ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রাহ.) বলেন, ‘সব ফাসাদের উৎসমূল হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। কেননা জানা ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রবৃত্তির অনুসরণ ব্যক্তিকে সত্যপথ থেকে অন্ধ করে দেয়। আর উচ্চাকাঙক্ষা পরকালকে ভুলিয়ে দেয় এবং পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বাধা দেয়।

যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার

ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রাহ.) বলেন, প্রত্যেকের জন্যই এ কাজগুলো বৃথা হবে; যদি তা কোনো উপকারে না আসে। আর তাহলো-

১. এমন ইলম; যার অনুসরণে কোনো আমল করা হয় না।
২. এমন আমল; যার মাঝে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা নেই।
৩. এমন সম্পদ; যা থেকে (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ করা হয় না।
৪. এমন অন্তর; যা আল্লাহর ভালোবাসা থেকে পুরোপুরি উদাসীন।
৫. এমন শরীর ও মন; যা আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেকার।
৬. এমন সময়; যা নেক আমল করার মাঝে কাজে লাগানো থেকে বেকার।
৭. এমন চিন্তাভাবনা; যা উপকারহীন বিষয়ের মাঝে ঘুরে বেড়ায়।
৮. এমন ব্যক্তির সেবা যত্ন করা; যার সেবাযত্ন তোমাকে আল্লাহর কাছাকাছি করে না এবং তোমার দুনিয়া সংশোধন করার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে না যায়।
৯. তোমার ভয় ও আশা ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যার কপাল আল্লাহর হাতে। (আল ফাওয়ায়িদ)

আরও পড়ুন


সূরা ইয়াসিন: আয়াত ৫-৯, উদাসিনতা থেকে মুক্তি ও সৃষ্টিরহস্য

বঙ্গবন্ধু শিশু আইন প্রণয়ন ও প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন : প্রধানমন্ত্রী

শিশুশ্রম একটি জাতীয় সমস্যা : রাষ্ট্রপতি

চীন ইসলামকেই মুছে ফেলতে চায় : অ্যামনেস্টির রিপোর্ট


যৌবনে করণীয় বিষয়গুলি

১. নিয়মিত নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত এবং সাধ্যমতো নফল রোজার আমল করা।
২. ইলমে দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণকারী ওস্তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকা।
৩. যৌবনই প্রত্যেক মানুষের প্রকৃত সম্পদ।
৪. ইলম অনুযায়ী আমল করা এবং দাওয়াতি কাজ করা। কেননা ইলমের বরকত হলো আমল ও দাওয়াত।
৫. পরকালকে নিরাপদ রেখেই দুনিয়ার কাজ করা।
৬. নিজেকে যুবক-যুবতি ভেবে নিরাপদ মনে করার কোনো কারণ নেই, যৌবনেও অনেককে মৃত্যুর স্বাদ নিতে দেখা যায়।
৭. যৌবন বয়সই ইলমে দ্বীন ও জ্ঞানার্জন ও আমলের জন্য সর্বোত্তম সময়।
৮. হালালভাবে আয়-উপার্জনের সর্বোত্তম সময়ও যৌবনকাল।
৯. যৌবনই মসজিদে নামাজ আদায়ের সর্বোত্তম সময়। যুবকরাই মসজিদ আবাদের অনন্য কারিগর।
১০. পরস্পরের মাঝে পুরিপূর্ণ সালাম বিনিময়ই হোক যৌবনের অভ্যর্থনার অন্যতম মাধ্যম।
১১. ইবাদত-বন্দেগি, আয়-রোজগার কিংবা পড়াশোনা- এ সবে যৌবনের শক্তিমত্তাকে কাজে লাগানো।

সুতরাং যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টি কাজে লাগানো সব যুবক-যুবতির জন্য একান্ত আবশ্যক। যাতে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা সুনিশ্চিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব যুবক-যুবতিকে এসব উপদেশ ও কাজগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

news24bd.tv আহমেদ