ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার মানুষ মানেই কিন্তু রাগী না

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার মানুষ মানেই কিন্তু রাগী না

Other

ঘটনাটা আজ থেকে তেরো বছর আগের ৷ ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে আমাদের সম্মান প্রথম বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বর্ষে থাকার সময় আমি ন্যূনতম পড়াশোনাও করিনি। তাই পরীক্ষার হলে যেতাম আধাখ্যাঁচড়া একটা প্রস্তুতি নিয়ে। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আমি কিছুটা পড়াশোনা করতে শুরু করি।

আমার ফলাফলে পড়া প্রভাব থেকেই এ দাবির সত্যতা মেলে।

মূল প্রসঙ্গে ফিরি। পরীক্ষার হলে বসে আছি। রোমান ল’ পরীক্ষা।

আমার কাছে এ বিষয়টা খুবই কঠিন লাগত ৷ পড়াশোনা না করলে কঠিন লাগাটাই স্বাভাবিক৷ আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে প্রশ্ন হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। তেরোটা থেকে দশটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পূর্ণমান ৫০। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা প্রশ্ন পড়তে পড়তেই আমি ঘামতে শুরু করি। তেরোটার মধ্যে পারি কেবল একটা প্রশ্ন! সুতরাং ফেল কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না নিশ্চিত হয়ে পারা একটাও না লিখে বসে ছিলাম। মিনিট দশেক পর আমার সামনের বেঞ্চে বসা বন্ধু রানাকে বললাম, "আমি যাইরে। কিচ্ছু পারি না। শুধু শুধু বসে থেকে লাভ কী!"

আমার বন্ধু রানা আমার দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলে কী কস তুই?

আমি বললাম, কিচ্ছু পারি না। তুই পরীক্ষা দে। আমি যাই।

এ কথা বলে দাঁড়াতেই একটা হাত আমাকে শক্ত করে ধরে ফেলল। আর বলল, আরে বয় তো। আমি যা পারি তাই লেখ। দেখি না কী হয়!

হাত ধরেছিল রানাই। ওর পুরো নাম কাজী নজরুল ইসলাম। আমার নাম কাজী শরীফুল ইসলাম।

সেদিন পরীক্ষার হলে পরিদর্শক ছিলেন ফারজানা ম্যাম। আমাদের ইংরেজি পড়াতেন তিনি। রানা একপাশ হয়ে লেখা শুরু করল। আমি ওর ঠিক পেছনে বসে মাথা নিচু করে ও যা লিখছে তাই লিখে যাচ্ছি!

এভাবে ছয়টা প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ। লাস্টের এক বেঞ্চ আগে বসায় ফারজানা ম্যামের দৃষ্টি এড়িয়ে পাস নাম্বার তুলে ফেলেছি ততক্ষণে!

ম্যাম আচমকাই বললেন, "শরীফ তুমি কি সামনের জন থেকে দেখছ?"

আমি বললাম, জি ম্যাডাম। মাত্র দেখা শুরু করব তখনই আপনি দেখে ফেললেন!

ম্যাম আমাকে ডাক দিলেন। তার বসার টেবিলে আলাদা চেয়ার দিয়ে বসিয়ে দিলেন। মজার ব্যাপার হলো রানা যে ছয়টা প্রশ্নের উত্তর দেখিয়েছে সেগুলোর মধ্যে আমি যে প্রশ্নটার উত্তর পারতাম ওটা ছিল না!

ম্যামের পাশে বসে পারা প্রশ্নটার উত্তর লিখে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আসার সময় ফেল করব না নিশ্চিত হয়ে যাই!

সেদিন রানা যদি আমার হাতটা না ধরত, আমাকে না বসাত তাহলে আমাকে পরের বছর আবার এ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। আমার কনফিডেন্স লেভেল তলানিতে গিয়ে ঠেকত!

প্রথম বর্ষের ফল পেয়ে বুঝলাম না পড়ে এত পেলে একটু পড়লে ভালো করা সম্ভব। রানার ঐ হাত ধরাই আমাকে বদলে দেয়।

রানার সেদিনের আচরণ আমি বাকি জীবনে ভুলব না। ওদের মত মানুষকে মনে করেই ভুপেন হাজারিকা সৃষ্টি করেন -

বল কি তোমার ক্ষতি

জীবনের অথৈ নদী

পার হয় তোমাকে ধরে

দুর্বল মানুষ যদি!

আমাদের প্রত্যেকের সম্ভাবনা আছে। শুধু একটা ধাক্কা লাগে। বিপদে হাত ধরে এগিয়ে দেয়ার মানুষ লাগে। আমার জীবনে অনেকের ধাক্কা আছে। হাত ধরে এগিয়ে দিয়েছে অনেকেই। তাদের স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায়। আমার আজকের লেখা রানার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে।


আরও পড়ুন:


তিন সঙ্গীসহ তিনদিন নিখোঁজ ধর্মীয় বক্তা আদনান

পরীমনির ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে কোথাও কারো মধ্যে ঘাপলা আছে

মধ্যগগণে ক্রু-যাত্রীদের ধ্বস্তাধস্তি, বিমানের জরুরি অবতরণ

চতুর্থ বিয়ের মধুচন্দ্রিমায় পাহাড়ে যেতে চান শ্রাবন্তী?


ও এখন ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি করে। আমার প্রতি যে ভালোবাসা আজ থেকে তেরো বছর আগে রানা দেখিয়েছে পরম করুণাময় তার চেয়ে কোটিগুণ বেশি ভালোবাসা ওকে ফিরিয়ে দিক।

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার মানুষ মানেই কিন্তু রাগী না। রগচটাও না। আমি এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কারণ রানার বাড়ি যে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায়!

news24bd.tv / নকিব