বিপদটা এখানেই

বিপদটা এখানেই

Other

ক্রিটিক্যাল থিংকিং একটু আনকমন জিনিস। স্টেরিওটাইপ চিন্তার বাইরে মানুষ যেতে পারেনা সহজে। অধিকাংশ মানুষ চালিত হয় সেন্টিমেন্ট দিয়ে। এটাকে আমরা বলি পাবলিক সেন্টিমেন্ট।

তাই যারা একটু চালাক তারা সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগায়। এরা আমাদের সমাজে সাক্সেসফুল হিসেবে পরিচিতি পায়।  
ইদানিং ফেসবুক পাবলিক সেন্টিমেন্ট উৎপাদনের এক উর্বর জমিতে পরিণত হয়েছে৷ তাই যারা একটু বেশি চালাক তারা ফেসবুকের আম আদমীদের সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে অল্প চাপে বেশি পানি বের করছেন। সাধারণভাবে যা সহজে পারা যায় না ফেসবুক সেন্টিমেন্ট ক্রিয়েট করে তা সহজেই হাসিল করা যাচ্ছে৷ বেশ সফলতাও আসছে তাতে।

আমাদের আটোপৌরে আম ফেসবুকাররা একটি ঘটনার যেকোন একটি ন্যারেটিভকেই সত্য বলে ধরে নেয়। সেই সত্যকে তারা বিবেচনা করে কখনো ধর্মীয় মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, কখনো প্রগতিবাদের চোখ দিয়ে, কখনো পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধি হয়ে, কখনো বা নারীবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে।

বস্তুত অপরাধ মনস্তত্ত্ব মানুষের প্রবৃত্তির একটি ফল। এর সাথে আরো কিছু উপাদান থাকে।   এটি প্রায় সকল মতবাদের উর্ধে। তাই যে কোন অপরাধমূলক ঘটনাকে দেখতে হয় একদম উপর থেকে নির্লিপ্ত দর্শকের চোখ দিয়ে। নাহলে যে কেউ যখন তখন অন্যায়ভাবে ভিক্টিমাইজ হতে পারে।

একারণেই মানুষ সভ্য হবার সাথে সাথে বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে৷ বিচার ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করতে  উকিলের প্রচলন করেছে।

আইনের শাসন যেখানে আছে সেখানে একজন খুনীরও উকিল থাকে। সেই উকিল অভিযুক্তের হয়ে তার পক্ষের যুক্তিগুলো উপস্থাপন করে। আবার ভিক্টিমেরও উকিল তার মক্কেলের পক্ষে বলে। দুটো ভিন্ন ন্যারেটিভকে বিবেচনায় নিয়ে পদ্ধতিগতভাবে বিচারের কাজটি করা হয়। উকিল মূলত একাধিক ন্যারেটিভ তৈরির কাজটিই করে দেন যেন বিচার প্রক্রিয়ায় বিচারক একটি বিস্তৃত দৃশ্যপট দেখতে পান। একাধিক ন্যারেটিভকে বিবেচনায় রেখে মতামত দেওয়াটা সভ্য ও পরিণত সমাজের বৈশিষ্ট্য।  
আম ফেসবুকাররা ইদানিং এক নতুন বিচার ব্যবস্থা কায়েম করেছে, সেটিকে বলা হচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল। এটি টানেল ভিশনের একটি প্রতিফলন।   এখানে এক পক্ষের উকিল আরেক পক্ষের উকিলকে মানতে পারেনা। পারেনা তো পারেইনা৷ এখানে একাধিক ন্যারেটিভকে একসাথে দেখার চল নাই।

মিডিয়া ট্রায়াল বিচারকে প্রভাবিত করছে অনেকটা।   অন্তত প্রাথমিকভাবে কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সামাজিকভাবে হেয় করছে। যদিও পরে দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া যাকে ফেরেশতা ভেবেছিল সেই আসল অপরাধী। উদাহরণ দিয়ে বলি,  কিছুকাল আগেও বরগুনার মিন্নি এবং পুলিশ অফিসার বাবুলকে আমি ভাল মানুষ ভেবেছিলাম। যারা এদের সন্দেহ করেছিলো আমি তাদের জটিল মানুষ ভেবেছিলাম। পরে কি বেরুলো  সবাই তো জানেন।   কিন্তু একটা অন্তত ভাল কাজ আমি করেছি। সেইসব ইস্যুতে আমি মতামত দেইনি। কারণ এটুকু আমি জানতাম "যে কোন কিছুই হতে পারে। ’

ফেসবুক রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকান কিংবা গ্রামের পুকুর ঘাটের সমাজ বিশ্লেষণের আধুনিক রূপান্তর হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভূমিকা রাখছে। এটি ভাল এবং মন্দ দুটোই। নির্ভার হয়ে ভাল বলা যেতো যদি এর ব্যবহারকারীরা ন্যুনতম বুদ্ধি রাখে সেই নিশ্চয়তা পেতাম।

কিন্তু বিপদটা হলো এখানে আসলে সবাই সেন্টিমেন্টাল হয়ে যায়৷ কলেজ পড়ুয়া টিনএজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত। সবার উদ্দেশ্য থাকে একটাই "সর্বোচ্চ শুদ্ধ নীতি কথা বলতে হবে"। নিজকে নীতিবান হিসেবে প্রচার করার এই উদ্দেশ্য হাসিল করতে যেয়ে নীতি বিরুদ্ধ হতেও তাদের বাধে না।

ফেসবুক যেন  আজব নেশা। মধ্যরাতে ক্লাবে গিয়ে মদ খেয়ে মাতলামি করার মতই ফেসবুকে মাতাল হতে আসে ছেলেবুড়ো অনেকেই। মাতালে মাতালে ঝগড়া করে এর ওর নামে দল বেধে বিষোদগারও করে।

মদ তবু একটি নিরপেক্ষ জিনিস৷ ফেসবুকের মাতালরা মাতলামি করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে। এরা রীতিমত দার্শনিকের চরিত্রে অভিনয় করে। অনেকেই এদেরকে সিরিয়াসলিও নেয়।   বিপদটা এখানেই।

news24bd.tv তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক