সূরা ইয়াসিন: আয়াত ১৩-১৯, শিক্ষাণীয় দিক

সূরা ইয়াসিন: আয়াত ১৩-১৯, শিক্ষাণীয় দিক

অনলাইন ডেস্ক

সূরা ইয়াসিন পবিত্র কুরআনের মর্যাদাপূর্ণ একটি সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এই সূরার প্রথমে বর্ণিত দুই মুকাত্তায়াত হরফের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। এই সূরায় রয়েছে ৮৩টি আয়াত।

সূরা ইয়াসিনে বিশ্বাসগত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা রয়েছে। আজ এই সূরার ১৩ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হবে। এই সূরার ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

وَاضْرِبْ لَهُمْ مَثَلًا أَصْحَابَ الْقَرْيَةِ إِذْ جَاءَهَا الْمُرْسَلُونَ (13) إِذْ أَرْسَلْنَا إِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوا إِنَّا إِلَيْكُمْ مُرْسَلُونَ (14)

“আপনি তাদের কাছে সে জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন, যখন সেখানে রাসূলগণ আগমন করেছিলেন। ” (৩৬:১৩)

“আমি তাদের নিকট দুজন রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, অতঃপর ওরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল।

তখন আমি তৃতীয়জনের মাধ্যমে (যিনিও ছিলেন নবী) তাদেরকে শক্তিশালী করলাম। তারা সবাই বলল, আমরা তোমাদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল হিসেবে) প্রেরিত হয়েছি। ” (৩৬:১৪)

এই দুই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবীজীকে উদ্দেশ করে বলছেন, হে রাসূল! অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য মক্কার মুশরিকদের সামনে অতীতের একটি জাতির ঘটনা বর্ণনা করুন যে জাতির কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য কয়েকজন নবীকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই জাতির লোকজন গোঁড়ামি ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে তাদের বিরোধিতা করে। তারা ভেবেছিল মহান আল্লাহ তাদেরকে এমনিতেই ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা মন যা চায় তাই করতে পারে।

কিন্তু নবী-রাসূলগণ এসেছেন মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে। তাঁরা সব সময় একথাই বলেছেন যে, তারা নিজে থেকে নয় বরং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর দিকে আহ্বান জানানোর দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন। নবীরা বলেছেন, আমরা আল্লাহর বার্তা বহন করে এনেছি এবং এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো কিছু কামনা করি না।

এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় কয়েকটি দিক হলো:

১. অতীত জাতিগুলোর জীবনযাপন পদ্ধতি ও তাদের সেই জীবনের পরিণতিতে বর্তমান ও ভবিষ্যত জাতিগুলোর জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

২. নবী-রাসূলগণ তাদের রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য মানুষের কাছে ছুটে যেতেন; মানুষ তাদের কাছে আসবে- এই আশায় বসে থাকতেন না।

এই সূরার ১৫ থেকে ১৭ নম্বর পর্যন্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

قَالُوا مَا أَنْتُمْ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُنَا وَمَا أَنْزَلَ الرَّحْمَنُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا تَكْذِبُونَ (15) قَالُوا رَبُّنَا يَعْلَمُ إِنَّا إِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُونَ (16) وَمَا عَلَيْنَا إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ (17)  

“মুশরিকরা বলল, তোমরা আমাদের মতই মানুষ ছাড়া আর কিছু নও, রহমান আল্লাহ (তোমাদের প্রতি) কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ। ” (৩৬:১৫)

“(রাসূলগণ) বললেন, আমাদের পরওয়ারদেগার জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি (রাসূল হিসেবে) প্রেরিত হয়েছি। ” (৩৬:১৬)

“পরিস্কারভাবে আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই। ” (৩৬:১৭)

নবী-রাসূলদের দাওয়াতের বাণী প্রত্যাখ্যান করার জন্য যুগে যুগে কাফিররা যে অজুহাত দেখিয়েছে তা হলো- তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ। আল্লাহর যদি আমাদেরকে হেদায়েত করার ইচ্ছা থাকত তাহলে আমাদের মতো মানুষ না পাঠিয়ে অবশ্যই ফেরেশতাদেরকে পাঠাতেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের কাছে ফেরেশতা পাঠালেও এই মানুষগুলিই বলত: খাওয়া, পরা এবং নারী-পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে যেসব দিক-নির্দেশনা তারা নিয়ে এসেছে এগুলো তো তারা নিজেরা পালন করে না। শুধু আমাদেরকেই করার নির্দেশ দেয়।

আল্লাহতায়ালা এ বিষয়টি জানেন বলেই মানুষের মধ্য থেকেই তাদেরকে হেদায়েতের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন যাতে তারা কোনো অজুহাত দেখাতে না পারে। পাশাপাশি তিনি চেয়েছেন, নবী-রাসূলগণ আগে আল্লাহর নির্দেশ পালন করবেন যাতে মানুষ বুঝতে পারে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা মানুষের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। মুশরিকরা যদি আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করে তাহলে তাদেরকে একথাও মেনে নিতে হবে যে, প্রজ্ঞাবান ও দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করার জন্য তাদেরই মতো একজন মানুষকে তাদের কাছে পাঠাবেন। অথচ মুশরিকরা আল্লাহকে রহমান বলে ডাকত এই আশায় যে, তিনি তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করবেন না এবং তাদেরকে যা খুশি তাই করার অনুমতি দেবেন। কিন্তু তাদের এ আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে নবী-রাসূলরা মুশরিক ও কাফিরদের বলেন, যে আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং যাকে তোমরা বিশ্বাস করো তিনিই আমাদেরকে পাঠিয়েছেন তাঁর নির্দেশাবলী তোমাদের কাছে পৌঁছে দিতে। আমরা যদি মিথ্যা বলতাম তাহলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদেরকে অপদস্থ করতেন এবং মিথ্যা নবী দাবি করার অনুমতি আমাদেরকে দিতেন না।

এই তিন আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১. অনেক মানুষ মনে করে আল্লাহর রহমতের অর্থ হলো তিনি এই রহমত নামের গুণে মানুষের কাছ থেকে হিসাব নেবেন না। অথচ পারিবারিক জীবনেও যে পিতামাতা সন্তানের প্রতি দয়ালু তারাও সন্তানকে যা খুশি তাই করার অনুমতি দেন না। বরং তাকে স্কুলে পাঠান, আদব কায়দা শেখান এবং কথামতো না চললে প্রয়োজনে শাস্তি দেন।

২. নবী-রাসূলগণ মানুষকে উদাসীনতার ঘুম থেকে জাগিয়ে আলোর পথ দেখান। তবে মানুষ হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নবীরা দিতে পারেন না। বেশিরভাগ মানুষ ঈমান না আনলেও নবীরাসূলগণ আমৃত্যু দ্বীনের দাওয়াত চালিয়ে যান।

আরও পড়ুন


কুমিল্লায় নকল বিটুমিন-মবিল-ডিজেল তৈরির কারখানার সন্ধান

মদ পানে গভীর রাতে যুবক-যুবতী নিয়ে ক্লাবে যেতেন পরীমনি

বোট ক্লাবের আগের রাতে গুলশানে আরেক পরীকাণ্ড

গুলশানের ক্লাবে রাতে ভাঙচুর : পরীমনি যা বলছে


সূরা ইয়াসিনের ১৮ ও ১৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

قَالُوا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِنْ لَمْ تَنْتَهُوا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ (18) قَالُوا طَائِرُكُمْ مَعَكُمْ أَئِنْ ذُكِّرْتُمْ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُونَ (19)

“তারা (নবীদেরকে) বলল, আমরা তোমাদের (উপস্থিতিকে) অশুভ-অকল্যাণকর দেখছি। যদি তোমরা (আহ্বান জানানো থেকে) বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে। ” (৩৬:১৮)   

“রাসূলগণ বলল, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই! সদুপোদেশ দেয়া হয়েছে বলে কি (তোমরা আমাদেরকে অশুভ-অকল্যাণ মনে করছে?) বস্তুতঃ তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায় ছাড়া কিছু নও। ” (৩৬:১৯)   

এই আয়াতে কাফিরদের যুক্তি খণ্ডন করে বলা হচ্ছে, তারা নবীদের বক্তব্য এবং তাদের মানবিক ও নৈতিক উপদেশ না শুনে উল্টো তাঁদের সঙ্গে অবজ্ঞা ও ধমকের সুরে কথা বলে। তারা নবীদেরকে হুমকি দিয়ে বলে, তোমাদের উপস্থিতি আমাদের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে। হয় তোমাদের বকবকানি বন্ধ করো অথবা আমাদের জনপদ ছেড়ে চলে যাও। তা না হলে তোমাদেরকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হবে।

এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১. দ্বীনের দাওয়াতের বিরোধীরা সব সময় অবজ্ঞা ও হুমকির ভাষায় কথা বলে।

২. মানুষ দৃশ্যত আরাম-আয়েশে থাকা সত্ত্বেও কুফর ও গোনাহের কাজ তার জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনে।

৩. মানব জাতিকে আল্লাহ তায়ালা নানাভাবে সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন।

news24bd.tv এসএম