সূরা ইয়াসিন: আয়াত ২০-২৭, যেসব বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে

সূরা ইয়াসিন: আয়াত ২০-২৭, যেসব বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক

সূরা ইয়াসিন পবিত্র কুরআনের মর্যাদাপূর্ণ একটি সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এই সূরার প্রথমে বর্ণিত দুই মুকাত্তায়াত হরফের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। এই সূরায় রয়েছে ৮৩টি আয়াত।

সূরা ইয়াসিনে বিশ্বাসগত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা রয়েছে। আজ এই সূরার ২০ থেকে ২৭ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হবে। এই সূরার ২০ ও ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

  وَجَاءَ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ (20) اتَّبِعُوا مَنْ لَا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُمْ مُهْتَدُونَ (21)

“অতঃপর শহরের শেষ প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল (এবং) বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা (আল্লাহর) রাসূলগণকে অনুসরণ কর। ” (৩৬:২০)

“তাদের অনুসরণ কর, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।

” (৩৬:২১)

গত আসরে আমরা একটি পথভ্রষ্ট জাতির লোকজনকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য কয়েকজন নবীর আগমন নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সে আলোচনার ধারাবাহিকতায় এই দুই আয়াতে বলা হচ্ছে: কোনো কোনো মুমিন ব্যক্তি অত্যাচারী লোক ও শাসকের হাত থেকে নবী-রাসূলদের রক্ষা করার জন্য নিজেদের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। এখানে যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী তার নাম ছিল হাবিব নাজ্জার। তিনি শহরের শেষ প্রান্তে বসে শুনতে পান লোকজন আল্লাহর রাসূলদের নির্যাতন করে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। এ অবস্থায় তিনি হন্তদন্ত হয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং নবীদের রক্ষা করার জন্য উপস্থিত জনতার সাহায্য চান। হাবিব নাজ্জার একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে জানতেন যে, কাফেরদেরকে ঈমানের পথে আহ্বান করতে হয়। তিনি উপস্থিত জনতাকে দ্বীনের পথে আহ্বান জানিয়ে বলতে থাকেন তারা যেন এসব রাসূলের আনুগত্য করেন যারা তাদের হেদায়েতের বিনিময়ে কোনো টাকা-পয়সা বা ধন-সম্পদ চান না।

এ দুই আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে:

১. ধর্ম ও ধর্মীয় নেতাদের রক্ষা করা ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য।
২. ধর্ম রক্ষা করার ক্ষেত্রে সঙ্গীহীন ও একা থাকা কোনো অজুহাত হতে পারে না। প্রয়োজনে একাই লড়াই করতে হবে। দ্বীন রক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের সংখ্যার অপ্রতুলতা দেখে ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না।
৩. আমরা তাদেরই অনুসরণ করব যারা সঠিকপথ প্রাপ্ত হয়েছেন।

সূরা ইয়াসিনের ২২ থেকে ২৪ নম্বর পর্যন্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَمَا لِيَ لَا أَعْبُدُ الَّذِي فَطَرَنِي وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ (22) أَأَتَّخِذُ مِنْ دُونِهِ آَلِهَةً إِنْ يُرِدْنِ الرَّحْمَنُ بِضُرٍّ لَا تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلَا يُنْقِذُونِ (23) إِنِّي إِذًا لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (24)

“কেন আমি তাঁর এবাদত করব না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা সবাই প্রত্যাবর্তিত হবে?” (৩৬:২২) 

“আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব, করুণাময় (আল্লাহ) যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে যাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং যারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না?" (৩৬:২৩)

“এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব। ”(৩৬:২৪)  

যিনি নবীদের রক্ষা করার জন্য শহরের মাঝখানে ছুটে যান এবং উপস্থিত জনতার সাহায্য চান তিনি নিজের একত্ববাদী বিশ্বাস তুলে ধরে বলেন: তোমাদের মূর্তি ও কল্পিত উপাস্যদের উপাসনা করার কোনো কারণ আমি দেখি না। কারণ আমি জানি, দয়াময় আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন। যদি কারো উপাসনা করতে হয় আমি একমাত্র তাঁর উপাসনা করব। মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য এবং যুক্তি উভয়ই বলে যিনি সৃষ্টিকর্তা তাঁর ইবাদত করতে হবে। কিন্তু তোমরা যেসব মূর্তির উপাসনা করো সেগুলো কোনো যুক্তির ধোপে টেকে না। কারণ, কেউ যদি আমার ক্ষতি করতে চায় তাহলে এসব মূর্তি আমার কোনো উপকারে আসবে না এবং কেউ যদি আমার উপকার করতে চায় তাহলেও তাতে বাধা দেয়ার কোনো শক্তি এসব উপাস্যের নেই। কাজেই বিবেকের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আমি তোমাদের হাতে তৈরি মূর্তির উপাসনা করতে পারব না। যদি করি তাহলে সুস্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাব।

এই তিন আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে:

১. যেকোনো যুক্তির বিবেচনায় সৃষ্টিকর্তার ইবাদত গ্রহণযোগ্য। কিন্তু অন্য কারো উপাসনা কোনো যুক্তির বিচারেই টেকে না।
২. আল্লাহ তায়ালা শুধু আমাদের সৃষ্টিকর্তাই নন একইসঙ্গে আমাদের জীবন পরিচালনাও হয় তাঁর নির্দেশে। কাজেই ইবাদতের একমাত্র যোগ্য ও দাবিদার হচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন


বারডেম হাসপাতালের নীচে আগুন

ওই নারী যত উপরে পা তুলে আঘাত করল, শতকরা ৯৮ জনই এটা পারে না: টিপু

পরীমনির পোশাক নিয়ে রাঙ্গার মন্তব্য, সাংসদ টিপু বললেন ‌‘নাসিরকে চিনি’

ভারতের নতুন আতঙ্ক ‘গ্রিন ফাঙ্গাস’


সূরা ইয়াসিনের ২৫ থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

  إِنِّي آَمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُونِ (25) قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ (26) بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ (27)

“আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব আমার বক্তব্য শুনে নাও। ” (৩৬:২৫)

“(শেষ পর্যন্ত তাকে শহীদ করা হলো এবং) তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল হায়, আমার সম্প্রদায় যদি কোনক্রমে জানতে পারত-”(৩৬:২৬) 

“যে আমার পরওয়ারদেগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ” (৩৬:২৭)

নবীদের রক্ষার্থে ছুটে যাওয়া ব্যক্তি ঘোষণা করেন, আমি এই নবীদের প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাদের সাহায্য করার জন্য আমি তোমাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু গোঁড়া ও অন্ধ কাফেররা তার এ সত্যবাণী শুনতে মোটেই আগ্রহী ছিল না। তারা তাকে হত্যা করে এই ভেবে যে, এই ব্যক্তির কণ্ঠে আর উপদেশবাণী শুনতে হবে না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা শহীদ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর নির্দেশ দেন। এটি হচ্ছে বারযাখি জান্নাত যা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। আল্লাহর যেসব বান্দা শহীদ হয়েছেন তারা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এই জান্নাতে অবস্থান করবেন।

শহীদদের জীবিত থাকা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানের ১৬৯ নম্বর আয়াতে বলেন: যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তুমি কখনো তাদেরকে মৃত মনে করো না। বরং তারা জীবিত ও নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিকাপ্রাপ্ত। কাজেই নিজ জাতির লোকদের হাতে নিহত ওই ঈমানদার ব্যক্তি তার হত্যকারীদের জন্যও দোয়া করেছেন যেন তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় এবং জান্নাত লাভ করতে পারে।

এই তিন আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

১. ধর্ম ও ধর্মীয় নেতাদের রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিতে হবে।
২. আল্লাহর প্রেমে মত্ত ব্যক্তিরা সব মানুষের হিতাকাঙ্ক্ষী। মানুষ তাদেরকে কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা কষ্ট দানকারী ব্যক্তিদের মঙ্গল কামনা করেন। এসব মানুষ কষ্ট পাক তা তারা চান না।
৩. আল্লাহর রাস্তায় শহীদগণ কিয়ামত দিবস পর্যন্ত বারযাখি জগতে বিশেষ জীবন ও জীবিকাপ্রাপ্ত হন। তারা ওই জগতে জান্নাতের সব আরাম আয়েশ ভোগ করেন।

আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের সঙ্গে সঙ্গে নেক আমল করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

news24bd.tv এসএম

এই রকম আরও টপিক