হাঁড়িভাঙা আসছে

হাঁড়িভাঙা আসছে

Other

রংপুরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে হাঁড়িভাঙা আম। ২০ জুনের পর এ আম বিক্রির সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এখনই তা মিলছে হাট-বাজারে। কৃষি বিভাগের আশা, এবার ২০০ কোটি টাকার ওপরে আম বাণিজ্য হবে রংপুরে। কারণ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আমের ফলন হয়েছে ভালো।

হাঁড়িভাঙা আম বিদেশে রপ্তানিতে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

হাঁড়িভাঙা আমের সবচেয়ে বড় হাট মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ হাটে সরেজমিন দেখা যায়, মূল সড়কের পাশেই বড় বড় আমগাছের নিচে বসেছে বিশাল আমের হাট। এ আম বিক্রিকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। ২০ জুন আসার আগেই ভ্যানে করে বাগান থেকে পরিপক্ক আম এনে হাটে তুলেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

আমচাষিরা সকাল-সকাল আম বিক্রি করেই বাড়ি ফিরে গেছেন।

আম ঘিরে নানা অর্থনৈতিক কার্যক্রম: বেচাকেনার জন্য পদাগঞ্জ আমের হাটে খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংকের শাখা। ‘

ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বড় বড় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা ঝামেলামুক্তভাবে বড় ধরনের লেনদেন করছেন। আমের হাট ঘিরে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের শাখাও খোলা হয়েছে। প্রিয়জনের কাছে আম পরিবহনে স্থানীয় স্বজনরা কাজে লাগাচ্ছেন এগুলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম পাঠানোর উপযোগী বাঁশের খাঁচা, প্লাস্টিকের ক্যারেট বিক্রি করছেন স্থানীয় অনেকে। ট্রাকে আম ওঠানামার কাজ করছেন শ্রমজীবীরা। এতে বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে তাদের।

আম বহনের খাঁচা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, আমের বাজার জমে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খাঁচার চাহিদা বাড়ে। দামও ভালো পাই। প্লাস্টিকের খাঁচা ১০০ টাকা ও বাঁশের তৈরি খাঁচা ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

আম ঘিরে নানা অর্থনৈতিক কার্যক্রম গড়ে উঠলেও কষ্টার্জিত হাঁড়িভাঙা আমে কাঙ্ক্ষিত লাভ করতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন উৎপাদক কৃষকরা।  

প্রতি বছর মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় বড় আড়ত গড়ে তুলে বাজারে আম ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়। ফলে কৃষকরা অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দামে মধ্যস্বত্বভোগী-ফড়িয়াদের কাছে হাঁড়িভাঙা বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ সমস্যা দূর করে আমের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারদের সঙ্গে চাষিদের ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপন বিষয়ে বিপণন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

প্রতিদিন হাটে উঠছে ১০০-১৫০ মণ আম: হাটে আম বিক্রি করতে আসা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক বাগানের আম আগেই পেকে গেছে। তাই সেগুলো ভ্যানে করে হাটে নিয়ে এসেছি। রংপুরের ব্যবসায়ীরা এসব কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন আকারভেদে এসব আম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ। সরকারের বেঁধে দেওয়া ২০ জুনের পর বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এলে দাম দুই হাজার টাকা মণ হবে, আশা করছি। আমচাষি আফজালুল বলেন, হাটের অবস্থা তো খুব খারাপ। কোটি কোটি টাকার আম বিক্রি হয়, অথচ হাটের কোনো উন্নয়ন নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই প্রচুর কাদা হয়ে যায়। তাই আম বেচতে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়।

পদাগঞ্জ ও পাইকারহাটের ইজারাদার আইয়ুব আলী বলেন, হাটে প্রতিদিন ১০০-১৫০ মণ আম উঠছে। তবে বিক্রি শুরু হবে ২০ জুন থেকে। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা কম। আমি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে হাটগুলো ইজারা নিয়ে আসছি। প্রতি বছর সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব দিলেও হাটের কোনো উন্নয়ন হয় না।

আমের ক্রেতা শাহীন ইসলাম বলেন, আমের চেয়ে পাঠানো খরচই বেশি। আধা মণ আম পাঠাতে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কুরিয়ার খরচ; খাঁচা, লেবারসহ সব মিলিয়ে ২০০ টাকা খরচ হয়। এতে আমাদের কষ্টই হয়। কুরিয়ার সার্ভিস খরচ একটু কমালে ভালো হতো। এ জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবেও পরিবহনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

চাষের আওতায় ১৮৬৫ হেক্টর জমি: রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রংপুরের আট উপজেলায় এক হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সুস্বাদু, আঁশবিহীন হাঁড়িভাঙা আম। এর মধ্যে মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার সিংহভাগ জমিতে আবাদ হয়েছে এ আম। এবার আমের গড় ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ১৫ টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ১২৭ কোটি টাকা। গত বছর করোনার কারণে আম বিপণনে কৃষকদের সমস্যা চিহ্নিত করে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি বিভাগ ও প্রশাসন। আম বিক্রির জন্য অ্যাপ তৈরি, পরিবহনের জন্য বিশেষ বাস কিংবা ট্রেন সুবিধা নিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চাষিদের সঙ্গে আলোচনা সভা করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুরের আট উপজেলায় এক হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, আশ্বিনা, কেরোয়া, সাদা ল্যাংড়া, কালো ল্যাংড়া ও মিশ্রিভোগের চাষ হয়েছে।

এসব আমের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১৩ টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬৭ কোটি টাকা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, এবার কিছুটা খরা ছিল। তবে হাঁড়িভাঙা আমের আবাদ ভালো হয়েছে। কৃষকরা সহজে যাতে আম বিপণন করতে পারেন, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতি বছরের মতো এবারও কৃষকদের পাশে রয়েছি।

তৎপর প্রশাসন : রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, আম পরিবহনের জন্য গাড়িগুলোতে আমরা স্টিকার সহযোগিতা করছি। এতে আম ব্যবসায়ী-চাষিরা তাদের আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝামেলা ছাড়াই সরবরাহ করতে পারবেন। পরিবহন সমস্যা এড়াতে মতবিনিময় সভা করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা আম বিক্রির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেন, রংপুরের কৃষিতে গত ২০ বছরের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলো হাঁড়িভাঙা আম। এ আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। কিন্তু একে খুব যত্নসহ রপ্তানি করতে হবে। এ ধরনের আম প্রক্রিয়াজাত করার সুযোগ এখনও দেশে হয়নি। যদি কেউ রপ্তানি করতে চান, তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা দেব। হাঁড়িভাঙা আমের ব্যাপক প্রচারও প্রয়োজন।

news24bd.tv / তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর