বাবা, সমষ্টি ও মি. হাইড বটিকা

বাবা, সমষ্টি ও মি. হাইড বটিকা

Other

ব্যক্তি বাবারা যদি এতো ভালোই হবেন, সমষ্টির এতো দুঃখ কেনে?

১৮৮৬ সালে প্রকাশিত স্কটিশ লেখক রবার্ট লুই স্টিভেনসনের প্রবাদবাক্যে পরিণত হওয়া "স্ট্রেঞ্জ কেস অব ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড" নামের উপন্যাসের মূল চরিত্র ডাক্তার হেনরি জেকিল এমন একটি ঔষধ আবিষ্কার করেন যা সেবন করলে মানুষ তার স্বভাবের বিপরীত রূপ ধারণ করতে পারতেন। এভাবে ড. জেকিল দিনমানে থাকতেন দয়া, মায়া ও মানবিকতায় উদ্ভাসিত একজন আদর্শ মানুষ। সেই তিনিই আবার রাতে ওই ওষুধটি সেবন করে হয়ে উঠতেন ভীষণ খারাপ মানুষ। হেন অপকর্ম 'নেই তিনি করতে পারেন না।

আরেকটি ঔষধ সেবনের মাধ্যমে আবার তিনি স্বাভাবিক ড. জেকিলে রূপান্তরিত হতে পারতেন। এভাবে নিজের মধ্যে এক দ্বৈতসত্তাকে ধারণ করতে থাকেন। এই অশুভ সত্তাটির নাম দিলেন তিনি 'মি. হাইড'।

নিজের সন্তানকে পৃথিবীর সব বাবাই ভালবাসেন, এটা বিরল কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বলেই দেয়া যায়।

পুত্র-কন্যার কাছেও "পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা"ই হন তারা। আজ বাবা দিবসে সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমের সাথে সাথে ঘরোয়া জীবনেও বাবার প্রতি সন্তানদের আবেগ-ভালবাসার প্রকাশ উথলে উঠতে দেখা যাবে।

আমাদের বাবারা বা আমরা নিজেরাও যারা বাবা, তারা নিজ নিজ সন্তানের জন্য যে কোনো কিছু করতে একপায়ে খাড়া সবসময়। ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতকুরের জন্য যে কোনো আত্মত্যাগেই প্রস্তুত থাকেন সব বাবাই। মৃত্যুমুখে থাকা পুত্র হুমায়ুনের জন্য সম্রাট বাবুরের "পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়" এর গল্প তো কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে।

ঠিক আছে, মানুষের ইতিহাসে এর অপরিসীম মূল্য আছে বটে, তবে অনেকখানি তলিয়ে দেখলে নেতি'র দিকটাও উঠে আসবে। যুদ্ধজয় বা রাজ্য পরিচালনার দোহাই দিয়ে কিংবা নিছক খামখেয়ালিতে কতো লক্ষ সন্তানকে পিতৃ-মাতৃহারা করেছিলেন, জীবনকে উল্টে দিয়েছিলেন কতো কোটি সন্তানের- সেই হিসেব ইতিহাসে নেই। "আব্বু, তুমি কান্না কত্তেছো যে" আখ্যান রচয়িতাও তো কাজ শেষে হাত-মুখ ধুয়ে ভাত খেয়ে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছেন নিশ্চিতভাবে।

সন্তানকে কী খাওয়াবেন, কোন স্কুলে পড়াবেন, আদব-কায়দা শেখাবেন, তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অহর্নিশ উদ্বিগ্ন পিতৃশ্রেষ্ঠরা অন্যের সন্তানদের প্রতি কেমন আচরণ করেন, কতোটা ভাবেন- সেটাই বিবেচ্য।

শিশুধর্ষক, নকল N95 মাস্ক গছানো, খাবারে ভেজাল দেয়া, পরের হক মেরে খাওয়া, সুপারি কিলার, নারী পাচারকারী, মাদকের কারবারি, যুদ্ধবাজ সেনাপতি-রাজা-বাদশা, দাসব্যবসায়ী, দুইনম্বরী পয়সা কামানো লোকগুলোও সন্তানদের ভালবাসেন, অকৃপণভাবে। আমাদের মাঝে এই বাবারাও আছেন বা চারপাশে কিলবিল করছেন। সংখ্যায় লক্ষ-কোটি হবেন।


আরও পড়ুনঃ

 

ভাল থাকুক বিশ্বের সকল বাবা, যেভাবে দিবসটির শুরু

বিএনপি থেকে শফি আহমেদ চৌধুরীকে বহিষ্কার

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট রায়িসিকে অভিনন্দন জানাল হামাস

বিশেষ ট্রেন চালু, মাত্র এক ঘণ্টাতেই ঢাকা-গাজীপুর

 


বাস্তবে, বেশিরভাগ বাবাই কিন্তু ড. জেকিল এন্ড মি. হাইড। কাউকে কখনো বুক দেখান তো, কাউকে কখনো পিঠ! নিয়মিত সেবন করেন 'মি. হাইড' বটিকা!

আপনি যদি ভাল বাবা হন তবে অন্যের সন্তানদের প্রতিও ন্যায্য আচরণ করুন। আর ভাল সন্তান হতে চাইলে নিজের বাবাকেও বলুন, আপনার ভালোর জন্য তিনি যেনো অন্যের সন্তানদের অমঙ্গল না করেন।

এই নিক্তিতে যে বাবা উৎরে যেতে পারেন, তাঁকেই লাখো সেলাম।

(মিল্লাত হোসেন, বিচারক)

news24bd.tv / নকিব